বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

আফসোস নেই তামীমের

প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী, চট্টগ্রাম থেকে : টেস্টে প্রতিপক্ষ যখন ইংল্যান্ড, তখন জ্বলে উঠবে তার ব্যাট! ২০১০ সালে প্রথম অবতীর্ণ হয়ে কাঁটায় কাঁটায় তিন ঘণ্টার ইনিংসে ৮৬ রানের ইনিংসে সেই যে শুরু, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফিফটিহীন ম্যাচ কাটেনি একটিও বাঁ হাতি ওপেনার তামীমের। সাড়ে ৬ বছর আগে হোম গ্রাউন্ড চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ওই ইনিংস থেকে এতোটাই প্রেরণা পেয়েছেন যে, শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রথম সেশনেই সেঞ্চুরিতে ইতিহাস রচনার হাতছানি ছিল। কিন্তু চট্টগ্রামে ১৪ রানের আফসোসটা আরো বেশি পীড়া দিয়েছে ঢাকা টেস্টে ১৫ রানের আক্ষেপে! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টানা ৫ ইনিংসের সব ক’টিতে ফিফটির মতো অসাধারন কৃতিত্বও আছে তামীমের! ২০১০ সালে ঢাকা টেস্টে ব্যাক টু ব্যাক ফিফটি (৮৫ও৫২)। লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম ওঠাতে পারেননি ব্যাটিং জিনিয়াস শচীন, অথচ লর্ডসে প্রথম ইনিংসে ৫৫’র পর দ্বিতীয় ইনিংসেই লর্ডসের অনার্স বোর্ডে উঠিয়েছেন নাম (১০৩)। টেস্ট ক্যারিয়ারে একবারই পেয়েছেন টেস্টে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি, লর্ডসে ১০৩’র পর ম্যানচেস্টারে ১০৮! যে প্রতিপক্ষ পেলে পোয়াবারো তামীম, ৬ বছর ৪ মাস পর সেই ইংল্যান্ডকে পেয়েই বাংলাদেশের প্রত্যাবর্তন টেস্টে তামীম ছড়িয়েছেন দ্যুতি! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ম টেস্টে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে থেমেছেন তামীম ৭৮ রানে।
৯ দিন আগে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৫ হাজার রানের মাইলফলকে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ইতিহাস রচনা করেছেন তামীম হোম গ্রাউন্ডে। সেই হোম গ্রাউন্ডেই গতকাল আর একটি মাইলফলকে দিয়েছেন পা। ২৪ রান করতে পারলেই সাকিবের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে দেশের মাটিতে ২ হাজার টেস্ট রান পূর্ণ হবে, এই মাইলস্টোনে অপেক্ষা করতে হয়নি। গতকালই হোমে ২ হাজারী ক্লাবে গেছেন ঢুকে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট ফিফটির জন্য তামীমকে অপেক্ষা করতে হয়েছে এই মাঠে ৮ম ইনিংস পর্যন্ত, সেই তামীমই কিনা, সর্বশেষ ৪টি ফিফটি উদযাপন করেছেন এই মাঠে পর পর ৪ ইনিংসে! ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরিতে লোকাল হিরোর প্রতীক্ষার অবসান, হোম গ্রাউন্ডে ওই সেঞ্চুরির পরের ইনিংস তিনটি ৬৫,৫৭ এবং ৭৮!
প্রিয় প্রতিপক্ষ বলে কথা। ক্যারিয়ার টেস্ট এভারেজ যার ৩৯.৯৫, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গড় তার ৬৪.৭৭! অতীতে এন্ডারসন, ফিন পেস জুটি তামীমের সামনে হয়েছে নাকাল, সোয়ানের মতো ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা স্পিনারকে তুড়ি মেরে দিয়েছেন উড়িয়েÑ গতকাল ব্রড, ওকস, স্ট্রোকস, মঈন আলী, আদিল রশিদরাও তামীমের কৌশলে দিশেহারা। আক্রমণাত্মক মেজাজ ছেড়ে টেস্ট মেজাজের ব্যাটিংটাও দেখিয়েছেন তামীম। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অতীতে ২ সেঞ্চুরি, ৪ ফিফটির কোনটারই স্ট্রাইক রেট ৬১.৯০’র নীচে নয় তারÑ লর্ডসে ১৫৭ মিনিটে ১০৫, ম্যানচেস্টারে ১৫০ মিনিটে ১০৮ এমন ইনিংসে স্ট্রাইক রেট যথাক্রমে ১০৩.০০ এবং ৯৪.৭৩! সেই ছেলেটিই গতকাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সংযম প্রদর্শনে ৭৮ রানের ইনিংসে উইকেটে ছিলেন ২২১ মিনিট! স্ট্রাইক রেটটা বড় কথা নয়, বল বিচার করে খেলাটাই বড় কথা, সে দর্শনে বল ছেড়ে খেলার গুরুত্ব দিয়েছেন তামীম। স্ট্রাইক রেট ৪৩.৫৭Ñ তবুও প্রশংসিত ইনিংসটি।
আশ্চর্য হলেও সত্য, প্রথম ঘণ্টায় একটিও বাউন্ডারি শটে হননি প্রলুদ্ধ। প্রথম বাউন্ডারি শটটিও অসাধারন, মঈন আলীকে কাভার ড্রাইভ। ফিফটিতেও বেছে নিয়েছেন সেই মঈন আলীকে এবং সেই কভার ড্রাইভে বাউন্ডারি শটেই টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৯তম ফিফটি করেছেন পূর্ণ। মাহামুদুল্লাহ’র সঙ্গে চতুর্থ জুটিতে ৯০ এবং ৫ম জুটিতে মুশফিকুরের সঙ্গে ৪৪ রানে নেতৃত্বটা দিয়েছেন এই বাঁ হাতি ওপেনারই। দ্বিতীয় দিনে ড্রাইভিং সিটে চড়তে পারেনি বাংলাদেশ, তবে লিডের সম্ভাবনা কিন্তু দেখছে বাংলাদেশ দল তামীমের বদলে যাওয়া ব্যাটিংয়েই।
রিভিউ আপীল করে জিতেছেন, ৩৫ রানের মাথায় মঈন আলীর বলে কট বিহাইন্ডের সেই আপীলে ধর্মসেনা আঙুল তুলেও রিভিউ আপীলে রায় পরিবর্তন করেছেন। দুই টেস্টের মধ্যে ব্যবধান সাড়ে ১১ বছর, ১৪২টি টেস্ট দলের বাইরে থেকে গ্যারেথ বেটি হয়ে গেছেন ইতিহাস। ৩৯ বছরের এই অফ স্পিনারের কাছেই শেষ পর্যন্ত তামীম মেনেছেন হার। বেটির শর্ট বলে অফ সাইডে খেলতে যেয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তামীম। তবে দারুণ খেলতে খেলতে, সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখিয়ে ভক্তদের স্বপ্নভঙ্গ করেও ২২ রানের আক্ষেপ পেড়াচ্ছে না তামীমকেÑ ‘খুব কষ্ট করে রান করেছি। ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করিনি। বেসিকে থাকার চেষ্টা করেছি। যতটুকু সোজা খেলা সম্ভব ততটুকু করেছি। যে বলে আউট হয়েছি, সেটাও কোনো ভুল শট খেলে কিন্তু নয়। যদি ভুল শট খেলে আউট হতাম তাহলে কষ্ট লাগত। যেভাবে খেলছি, তাতে কিন্তু আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেছি। তাই আউটটি নিয়ে বেশি একটা চিন্তিত নই।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন