শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

পরিবহন ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল করতে হবে

অজয় কান্তি মন্ডল | প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৬ এএম

কিছু দিন ধরে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিশিলতা মানুষের ভোগান্তি চরমে তুলেছে। সেইসাথে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে বিভিন্ন পর্যায়ের বিরূপ প্রভাব সুস্পষ্ট লক্ষ করা যাচ্ছে। করোনা মহামারির তা-ব কাটিয়ে উঠার আগেই নিত্যপণ্যের বাজার মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলার পাশাপাশি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো পরিস্থিতি এনে দিয়েছে। আমরা সবাই ভালো করেই জানি, এই জ্বালানি তেলের সাথে দেশের মানুষের দৈনন্দিন বিষয়ের অনেক কিছুই জড়িত। যেমন যেকোন ফসল উৎপাদনে জমি চাষ, জমিতে সেচ দিতে বিদ্যুৎ চালিত বা ডিজেল চালিত যে যন্ত্রই ব্যবহার করা হোক না কেন সেখানে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি আসবে। শুধুমাত্র ফসল বা সবজির ক্ষেত্রে নয়, অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে এই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়বে।

এসকল বিষয় মাথায় রেখে অনেক দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে বাড়তি ভর্তুকি দিয়ে সমন্বয় করা হয়েছে। এতে করে সেখানে নতুন কোনো ঝামেলার সৃষ্টি হইনি। আমাদের দেশে সেটা করা হয়নি। ফলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বেশি বিরূপ প্রভাব লক্ষ করা যায় এবং সকলের দৃষ্টিগোচর হয় পরিবহন সেক্টরে। কোনভাবেই জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কানাঘুষা শুনলেই পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির বিভিন্ন পদে আসীন নেতারা নড়েচড়ে বসে। মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার সাথে সাথে তাদের পক্ষ থেকে দাবি ওঠে ‘ভাড়া সমন্বয় করতে হবে’। দাবি না মানা পর্যন্ত চলতে থাকে পরিবহন ধর্মঘট। পরিবহন ধর্মঘট মানেই দেশ অচল হয়ে যাওয়া। আমজনতার ভোগান্তি আরও চরমে পৌঁছানো। কেননা, ধর্মঘট চলাকালীন সাধারণ মানুষের সকল দৈনন্দিন কর্মকা- ব্যহত হয়। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবির যৌক্তিকতা উড়িয়ে দেয়া যায় না। বর্ধিত মূল্যে জ্বালানি কিনলে তাদের পরিবহনের খরচ বেড়ে যাবে এবং সেজন্য অবশ্যই যাত্রীদের কাছে পূর্বনির্ধারিত ভাড়ার সাথে নতুন করে আরোপিত ভাড়া যোগ হবে, সেটাই স্বাভাবিক। এই সহজ হিসাবটা আমরা অকপটে সবাই স্বীকারও করি। সেইসাথে বিগত দিনগুলোতে এসব চিত্র দেখতে দেখতে আমরা বেশ অভ্যস্ত হয়ে গেছি। একদিকে জনগণের ভোগান্তি অন্যদিকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নায্য দাবি, দু’টির মধ্যে সরকার সহজ সমাধান খুঁজে বের করে পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধিকরণের মধ্য দিয়ে। তাই ধর্মঘটের কিছুদিন অতিবাহিত হলেই সরকার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়। এখানে আমার মনে ছোট্ট একটা প্রশ্ন প্রায় উঁকি দেয়, জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য ঘোষণার আগে কেন পরিবহনের ভাড়া সমন্বয় করা হয় না? এই সেক্টরের যাবতীয় কিছু দেখভালের জন্য সরকারের পৃথক মন্ত্রণালয় ও দপ্তর আছে। সেখান থেকে যদি নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে তেলের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হয় তাহলে আমজনতা অহেতুক হয়রানির হাত থেকে বেঁচে যায়। সরকার হোক বা পরিবহন সেক্টর হোক সাধারণ জনগণকে নিয়ে কেউ কখনো ভাবে না। তাই মাঝ দিয়ে সকল কিছুর জন্য সাধারণ জনগণ সবসময় হেনেস্তার শিকার হয়ে আসছে।

এবার আসি পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বিষয়গুলো নিয়ে। ফিটনেসবিহীন ও চলাচলের অনুপযোগী পরিবহন রাস্তায় নামানো এবং সেইসাথে যথোপযুক্ত বৈধ কাগজপত্রের অভাবে গণপরিবহনের যাত্রীদের ভোগান্তি সবসময় লেগেই থাকে। প্রশিক্ষণবিহীন চালক ও হেল্পার এবং ভাড়া ও নির্ধারিত গন্তব্য নিয়ে যাত্রীদের সাথে তাদের দুর্ব্যবহার দেশের গণপরিবহনে যাতায়াতকারী অধিকাংশের মনে অসন্তোষের সৃষ্টি করে। নতুন আরোপিত বর্ধিত ভাড়ার সাথে গণপরিবহনের চালক ও হেল্পারদের দৌরাত্ম্য যেন বহুগুণে বেড়ে যায়। বরাবরের মত এবারও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবির মুখে পরিবহণ সেক্টরের ভাড়া ঢেলে সাজানো হয়েছে। সকল গণপরিবহনে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চার্ট টাঙানো হয়েছে। যদিও চার্টের নির্ধারিত মূল্যের অধিক ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ অধিকাংশ যাত্রীর থেকে প্রায় শোনা যাচ্ছে বা পূর্বেও যেত। অর্থাৎ ভাড়ার চার্ট থাকলেও গণপরিবহনে সেটি মানা হয় না। সেইসাথে গণপরিবহনের চালক ও হেল্পারদের অনৈতিক অনেক দাবি মানুষকে বেশ বিব্রত করে। যেমন ঢাকা শহরের অনেক গণপরিবহন সিএনজি চালিত। কিন্তু তা সত্ত্বেও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে সিএনজি চালিত এসব গণপরিবহন রাতারাতি ডিজেল চালিত হয়ে যায়। পক্ষান্তরে, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সকল ডিজেল চলিত যান সিনজিতে চলতে শুরু করে। এসমস্ত আজগুবি কাজের ফল ভোগ করছে সেই ভুক্তভোগী নিরীহ জনগণ। নিরীহ বলছি এই কারণে যে, জনগণের এসব নৈরাজ্য মুখ বন্ধ করে সহ্য করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। মুখ খুললেই তাদের শুনতে হয় গণপরিবহনের হেল্পার ও চালকের থেকে নানান ধরনের অবাঞ্ছিত কথাবার্তা। তাই জনগণের মুখ বন্ধ করে বেশি ভাড়া গুনেই প্রতিদিনকার গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়।

গণপরিবহনের ভাড়া বর্ধিতকরণের সাথে সাথে ছাত্রদের হাফ পাসের বিষয়টিও জনমনে বেশ উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ছাত্ররা হাফ ভাড়া দিতে গেলে হেল্পারেরা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। শুরু হয় তর্ক-বিতর্ক এবং অনেক ক্ষেত্রে হাতাহাতি। মাঝেমধ্যে চোখে পড়ে ছাত্রদের সাথে পরিবহন শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মতো কার্যকলাপও। বিষয়টা নতুন কিছু নয়। ঢাকা শহরের গণপরিবহনে এগুলো নিত্ত নৈমিত্তিক ব্যাপার। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা বেশ কয়েকদিন ধরে পত্রপত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। কথা হলো, এই বিষয়গুলোর আমরা স্থায়ী, সুদূরপ্রসারী ও সুচিন্তিত সমাধান করে মানুষকে ঝামেলা মুক্ত নিরাপদ দিন উপহার দিতে পারতাম। বর্ধিত ভাড়া আরোপের আগে ছাত্রদের বিষয়টি মাথায় নিয়ে তাদের জন্য ভাড়ার হার নির্ধারণ করে সবকিছু সুষ্ঠুভাবে পূর্ব হতেই বণ্টন করা উচিৎ ছিল। আর যদি ছাত্রদের হাফ পাস না থাকে তাহলে সেটাও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করাই শ্রেয়।

ছাত্রদের হাফ ভাড়ার বিষয়টি নতুন কোন দাবি নয়। অনেক উন্নয়নশীল দেশেও ছাত্ররা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্ধারিত মূল্যের উপর ছাড় পেয়ে থাকে। স্বাধীনতার পূর্বে পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ১৯৬৯ সালের ছাত্রদের ১১ দফার মধ্যে ছাত্রদের হাফ ভাড়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০১৮ সালের শিক্ষার্থীদের ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’ এর ৯ দফা দাবির মধ্যেও হাফ ভাড়ার বিষয়টি ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পূর্ব হতেই উপেক্ষা করে আসছে। উপেক্ষা করে আসছে বলেই লিখিত কোন আইন নেই ছাত্রদের হাফ পাস নিয়ে। এর ফলে কিছুদিন পর পর গণপরিবহনের কর্মীদের সাথে ছাত্রদের বাক-বিত-া লেগে থাকে। আমাদের দেশে শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। এ ধরনের পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। তবে শুধু ঢাকা শহরের ভিতরে চলাচল করে এমন পরিবহনে নয়, দূরপাল্লার পরিবহন থেকে শুরু করে ট্রেন, লঞ্চ সবখানে এ নিয়ম যাতে প্রযোজ্য হয় সেদিকে সরকারের সজাগ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

এখানে ছোট্ট একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি। চীনে থাকার সুবাদে নিজ চোখে পর্যবেক্ষণ করেছি এদেশের গণপরিবহনের হালচাল। যেখানে কোনদিন চোখে পড়েনি গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সাথে কারো রেষারেষি। এখানে গণপরিবহনের ভাড়া বেশ কম এবং সেটা স্থিতিশীল। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে দেখে আসছি ১ ইউয়ান (প্রায় ১৩ টাকা) দিয়ে একজন যাত্রী ৫০-৬০ কি. মি. পর্যন্ত যেতে পারে। সকল গণপরিবহনের ভাড়াও একই। তাই ভাড়া নিয়ে কারও মধ্যে কোনো অভিযোগ দেখিনি। আর হুটহাট করে ভাড়া বৃদ্ধি চীনাদের সাথে বেমানান। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কোনো প্রভাব আমি খুঁজে পাইনি। চীনা ছাত্রছাত্রীদের সকল দূরপাল্লার পরিবহনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ২৫% ছাড়ের ব্যবস্থা আছে। এই ছাড় দ্রুতগতির বুলেট ট্রেন থেকে শুরু করে সকল ধরনের দূরপাল্লার বাসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। টিকিট করার সময় স্টুডেন্ট আইডি নাম্বার ইনপুট করে ছাত্রছাত্রীদের যেকেউ এই সুবিধা ভোগ করে। পরিবহন ছাড়াও চীনের ছাত্রছাত্রীরা বেশ কিছু ক্ষেত্রে এমন সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে, যেমন, চিড়িয়াখানা ও জাদুঘরের প্রবেশ মূল্যে, বিনোদনের বিভিন্ন অত্যাধুনিক রাইডে আরোহনসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে স্টুডেন্ট কার্ড প্রদর্শন করলেই ২৫-৫০% পর্যন্ত ছাড় পেয়ে থাকে।

যেকোন দেশের সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্ভর করে সেদেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর উপর। তাই আজকের ছাত্রছাত্রীরা নিঃসন্দেহে আগামীর সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। সমগ্র বিশ্ব ছাত্রছাত্রীদের এসব বিষয় চিন্তা করে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। ছোট থেকেই প্রতিটা ছাত্রছাত্রীর পেছনে তাদের মাতা-পিতা শুধুমাত্র পড়ালেখার উদ্দেশ্যেই বহু অর্থ ব্যয় করে। আর এজন্যই সরকারি, আধাসরকারি বা বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছাত্রছাত্রীদের খরচ একটু লাঘব করার জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। যে সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে বা প্রদান করতে ছাত্রছাত্রী বা এসব প্রতিষ্ঠান কেউ কারও সম্মান হানিকর কার্যকলাপ প্রদর্শন করে না। অভিজ্ঞতাগুলো চীনের ছাত্রছাত্রীদের আলোকে এখানে বর্ণনা করলেও আমার জানা মতে, বিশ্বের অনেক দেশের ছাত্রছাত্রীদের এসব সুযোগ সুবিধা বহাল আছে।

কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট অনেকটা ভিন্ন। এখানে ছাত্রছাত্রীদের বিষয়গুলোকে বারবার উপেক্ষা করা হয়। অথচ এটিও সরকারের নীতি নির্ধারকদের অধিক গুরুত্বের সাথে ভাববার বিষয় ছিল। যেখানে আবশ্যক ছিল সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের। পরিবহনে হাফ পাসের বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও ছাত্ররা কিঞ্চিৎ সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখে। সরকারি যেসব পরিবহন ব্যবস্থা আছে সেখানেও ছাত্রদের ভাড়ার ক্ষেত্রে ছাড়ের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরকারকে সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরিসহ আইন প্রণয়ন করতে হবে। শুধু আইন তৈরি নয়, তা বাস্তবায়নে কঠোর নজরদারিও প্রয়োজন।

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিজের স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষ জনশক্তি ও শিক্ষিত জাতি গঠনে আমাদের সরকার প্রধান বদ্ধপরিকর। আমরা দেখেছি ইতোমধ্যে পদ্মাসেতুর কাজ প্রায় শেষের পথে। মেট্রোরেলের কাজ ও তড়িৎ গতিতে চলমান। উন্নতির এই ধারা অব্যাহত রাখতে অবশ্যই আজকের ছাত্রছাত্রীরা আগামীতে মুখ্য ভূমিকা রাখবে। তাই এমন সময়ে যাতায়াতের ভাড়ার কারণে গরিব কোনো শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ক্ষতি হলে এটা হবে আমাদের সবার লজ্জার কারণ। মসৃণ পরিবহন ব্যবস্থার সাথে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ পেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হবে যোগ্য ও দক্ষ।

লেখক: গবেষক, ফুজিয়ান এগ্রিকালচার এন্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি, ফুজো, ফুজিয়ান, চীন।
ajoymondal325@yahoo.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন