নিম্নচাপ ‘জাওয়াদ’এর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের ক্ষয়ক্ষতির হিসেব চূড়ান্ত করার আগেই নতুন করে হালকা বর্ষণে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের মাঠে মাঠে পাকা ও আধাপাকা রোপা আমন সহ প্রায় সোয়া ৫ লাখ হেক্টর জমির বিভিন্ন রবি ফসলের ঝুঁকি আরো বেড়ে গেল। জাওয়াদের বৃষ্টিপাতে এ অঞ্চলে ৭৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায় থেকে প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হলেও ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসেব করতে দু-একদিন সময় লাগবে বলে বলা হয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষার মধ্যেই নতুন করে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বৃষ্টিপাত আক্রান্ত জমির ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি করবে বলেই মনে করছেন মাঠ পযায়ের কৃষিবীদ গন।
বৃহস্পতিবার বিকলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জানান, ‘নতুন বৃষ্টিপাত ফসলের ঝুকি বৃদ্ধি করছে। বিশেষ করে পাকা ও আধাপাকা অমন সহ সাথী ফসল খেশারী এবং শীতালীন সবজী, গোল আলু ছাড়াও বিভিন্ন রবি ফসলের জন্য অগ্রহায়নের এ বৃষ্টি খুবই ক্ষতিকর’ বলেও জানান তিনি। এর আগে ‘বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে আমনের মাঠ থেকে পানি সরে গেলে ক্ষতির পরিমান সিমিত হবে’ বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছিলেন তিনি। নতুনকরে বৃষ্টি মাঠের পাকা আধাপাকা ধান সহ বিভিন্ন রবি ফসলের জন্য মারাত্মক ঝুকি বৃদ্ধি করছে বলে জানিয়েছেন একাধীক কৃষিবীদ।
পাশাপাশি খেশারী ও শীতকালীন সবজির যে সব জমিতে বৃষ্টির পানি জমে ছিল, নতুন এ বৃষ্টিপাত সেসব ফসলেরও একটি বড় অংশকে ক্ষতির কবলে ঠেলে দিতে পারে বলেও শংকিত কৃষিবীদগন। টানা পাঁচদিন পরে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার আগে বরিশালে প্রথম সূর্যের দেখা মিললে কৃষকরা কিছুটা আশান্বিত হয়েছিলেন। কিন্তু ২৪ ঘন্টার মাথায়ই আকাশে আবার মেঘের ঘনঘটা। বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টার পর থেকেই বরিশালে হালকা থেকে হালকা-মাঝারী বৃষ্টিপাতে কৃষকের আশার স্বপ্ন ধুলিস্যাত করতে উদ্যত।
জাওয়াদ-এর বৃষ্টির পানিতে আক্রান্ত জমির মধ্যে রোপা আমনই প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর। সাথী ফসল খেশারী ডাল ২৬ হাজার হেক্টর। এছাড়াও শীতকালীন সবজী সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর, সরিষা ২ হাজার ১৫৬ হেক্টর, মুসর ডাল ৫৭৩ হেক্টর, গোল আলু ৩৮৮ হেক্টর, বোরো বীজতলা ২৩৫ হেক্টর, গম ২০৩ হেক্টর এবং আরো বিপুল পারিমান জমিতে মরিচ,তরমুজ সহ বিভিন্ন রবি ফসল রয়েছে।
জাওয়াদ-এ ভর করে ৩ দিনে বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমানও ছিল ১শ মিলিমিটারের মত। উপরন্তু নতুনকরে এ বৃষ্টিপাত যেসব ফসলী জমিতে পানি জমে গিয়েছিল, সেখানে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বাড়বে বলে শংকিত কৃষকরাও।
অপরদিকে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, আক্রান্ত আমনের জমির বেশীরভাগ ফসলই মাটিয়ে নুয়ে পড়ছে। নতুনকরে বৃষ্টিপাতে এধরনের ক্ষতিগ্রস্থ জমির পরিমান আরো বাড়তে পারে। এমনকি এসব আধাপাকা ধান চিটা হবার সম্ভবনও ক্রমশ প্রবল হচ্ছে।
গত বছরও ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ সহ ভাদ্রের বড় অমাশ্যায় ভর করে প্রবল বর্ষন সহ প্লাবনে আমনের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় বরিশাল কৃষি অঞ্চলে উৎপাদন ঘাটতি ছিল প্রায় দেড় লাখ টন। বরিশাল কৃষি অঞ্চলে যে ৮ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে, সেখানে উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে প্রায় ২০ লাখ টন চাল। কিন্তু এখনো প্রায় ৭৫ ভাগ জমির ফসল মাঠে। দেশে চলতি আমন মৌসুমে ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫৩ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। সে লক্ষ্য অর্জনে ইতোমধ্যে সারা দেশের প্রায় ৬৫ ভাগ জমির আমন কর্তন সম্পন্ন হলেও বরিশাল অঞ্চলে ধান কাটা হয়েছে মাত্র ২৫ ভাগের মত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন