সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

নেতৃত্বের ভারেই কি ন্যুব্জ মুমিনুল?

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০১ এএম

সাল ২০১৯। সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞায় টালমাটাল দেশের ক্রীড়াঙ্গণ। অনেক পালাবদলের মধ্য দিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেটের টেস্ট অধিনায়কত্বের গুরুভার তুলে দেয়া হয়েছিল মুমিনুল হকের কাঁধে। ভারতের ইন্দোরে সাদা পোষাকে দেশের ১১তম দলনেতা হিসেবে প্রথমবার টস করার পর পেরিয়ে গেছে দুই বছর। সাফল্য খরায় দীর্ঘ ক্লান্তিকর একটা যাত্রাই কেটেছে তার। শুরুটা করেছিলেন ইনিংস ব্যবধানের হার দিয়ে, চক্রপূরণ করে সেই জায়গাতেই আছেন বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক। দুই বছর একেবারে কম সময় নয়। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য মহামারীকালেও এই সময়ে ১১টি টেস্ট খেলতে পেরেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে জয় কেবল দুটি, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। আর প্রাপ্তি বলতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি ড্র।
মুমিনুলে নেতৃত্বের অভিষেকের সিরিজে ভারতের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই ইনিংস ব্যবধানে হার। পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন হারের দুটি ইনিংস ব্যবধানে। খর্ব শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দেশের মাটিতে হোয়াইটওয়াশড। আনকোরা এক স্পিনারের বলে গুঁড়িয়ে গিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক ম্যাচে হারে ২০৯ রানে। সব মিলিয়ে দলীয় অর্জন খুব একটা নেই। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরে অর্জন বলতে ছিল, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি ড্র। চলতি চক্র তো ভীষণ কঠিন। দেশের মাটিতে উপমহাদেশের তিন দল ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে হবে। এর মধ্েয প্রথম সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশড হলো মুমিনুলের দল। দেশের বাইরে খেলতে হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন দুই গন্তব্য নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকায়। অন্য সিরিজ ক্যারিবিয়ানে।
বাংলাদেশ দলের পক্ষ থেকে এবারের চক্র ছয় কিংবা সাতে থেকে শেষ করার আশার কথা বলা হয়েছিল শুরুতে। সেটা কতটা বাস্তব সম্মত বলা কঠিন। নেতৃত্বের শুরু থেকে সেভাবে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে পাচ্ছেন না মুমিনুল। সাকিব এক বছর নিষিদ্ধ হওয়ায় নেতৃত্ব পেয়েছিলেন তিনি। মুমিনুলের অধিনায়কত্বে বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার সাকিব খেলেছেন কেবল তিনটি টেস্ট। দেশসেরা ওপেনার তামিম খেলেছেন ৬ টেস্ট। তামিম থাকতেই অন্য প্রান্তে তার সঙ্গী পেতে ভুগছিল বাংলাদেশ। সেখানে তার অনুপস্থিতিতে দুই ওপেনার খুঁজে নিতে হয়েছে। মাঝেমধ্য ঝলক দেখিয়েছেন সাদমান ইসলাম। এর বাইরে মেলেনি আলোর তেমন রেখা। রানে নেই টপ অর্ডার। যা একটু লড়াই করছে মিডল অর্ডার।
২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ টেস্ট দলের সদস্য মুমিনুল। ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে সাদা পোষাকে তার অবদান অনস্বীকার্য। এরই মধ্যে খেলে ফেলেছেন এই ফরম্যাটের ৪৭টি ম্যাচ। ১১ শতক আর ১৪ ফিফটিতে ঝুলিতে ৩৩৬৩ রান। বর্তমানে গড় কিছুটা কমে ৪১.০১-এ (এখনও দলের সর্বোচ্চ) এলেও অধিনায়কত্ব পাবার আগে সেটি ছিল ইর্ষনীয়-৫১.৬০! স্যার ডন ব্রাডম্যানের টানা ১০ ফিফটির রেকর্ড ছাড়িয়ে (১১টি) যাওয়া একমাত্র ক্রিকেটারও ছিলেন তিনিই। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে প্রথম ১০ সেঞ্চুরির মালিকও তিনি। অধিনায়কের দায়িত্ব পাবার আগে-পরের ৩০ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ব্যাটার যেন অন্য এক মানুষ। গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি পাওয়া একমাত্র বাংলাদেশিও মুমিনুল। এছাড়া এই দুই বছরে ব্যাট হাতে খুব একটা আস্থার প্রতীক হয়ে উঠতে পারেননি ‘এই টেস্ট স্পেশালিস্ট’। পাকিস্তান সিরিজেও দুই টেস্টেই ছিলেন ব্যর্থ। চট্টগ্রামে দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৬ ও ০। ঢাকায়ও বদলায়নি ভাগ্য, ১ ও ৭!
গত দুই বছরে টেস্টে বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। ১০ টেস্টে তিনি করেছেন ৮২৭ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তার কাছ থেকেই যিনি কিপিং গ্লাভস পেয়েছেন, সেই লিটন দাসের। ১১ ম্যাচে তিনি করেছেন ৭৮৯ রান। ৭৫০ রান করে এর পরেই আছেন মুমিনুল। ছয়শ রানও নেই আর কারও। ১০ ম্যাচে ৩৯ উইকেট নিয়ে বোলারদের মধ্য সফলতম তাইজুল ইসলাম। ৯ ম্যাচে ২৬ উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ২০ উইকেট নেই আর কারও।
এই সময়ে দেশের বাইরে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। সুযোগ পেয়েছে সবুজ ঘাসে ছাওয়া উইকেটে বোলিংয়ের। তবুও পেস বোলিং ইউনিট পারেনি খুব একটা ছাপ ফেলতে। বিছিন্ন কিছু প্রাপ্তি থাকলেও হতাশার উপকরণই বেশি। নিউজিল্যান্ডে পরের সিরিজে একই সঙ্গে থাকছেন না সাকিব ও তামিম।
দেশের মাটিতে সদ্য হোয়াইটওয়াশড হওয়া একটি দল নিয়ে গতপরশু রাতেই তাসমান দেশটির উদ্দেশ্যে রওনা হয় বাংলাদেশ দল। সামনে খুব কঠিন কন্ডিশনে খেলার চ্যালেঞ্জ। সব মিলিয়ে কি নেতৃত্বের ভার কি চেপে বসেছে মুমিনুলের কাঁধে? এমন প্রশ্নের স্বপ্রতিভ উত্তরে অধিনায়ক বললেন, ‘না, না, কঠিন না। আমার কাছে মনে হয়, একটু চ্যালেঞ্জিং। আমি চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি বলেই এই চেয়ারে বসে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছি। আমি মনে করি, এটা এক ধরনের প্রিভিলেজ। দল যখন এরকম একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে যায়, তখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান আর কীভাবে আপনি দেখেন। এটা চ্যালেঞ্জিং এবং সামনেও আরও চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। আমি এটাকে ইতিবাচক হিসেবে নিচ্ছি। আর চাপ পেয়ে বসেনি। ভালো, ভালো জিনিসগুলো নিয়ে সামনে এগোতে হবে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মোঃ আজমির খাঁন ১০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:৫৪ এএম says : 0
তার কোনো যোগ্যতাই নাই
Total Reply(0)
Al-Amin Mohammad ১০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:৫৫ এএম says : 0
ওর চাপায় তো অনেক ধার! টেস্ট এর জন্য মুসফিক-ই সেরা অধিনায়ক।
Total Reply(0)
MD Hafizur Rahman ১০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:৫৫ এএম says : 0
নেতৃত্বের ভার সামলে ভালো পারফরম্যান্স করুক সেটাই চাই।
Total Reply(0)
Md Sajedul Islam ১০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:৫৬ এএম says : 0
মুমিনুলকে ক্যাপন্টেসি না দিয়ে মাহমুদ উল্লাহ অথবা সাকিব কে দিলে ভালো হবে,কারন মাশরাফির পরে একজন যোগ্য ক্যাপ্টেন দেখতে চাইলে মাহমুদ উল্লাহ কে দেখলেই বুঝা যায়
Total Reply(0)
Sojol Nurujjaman ১০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:৫৬ এএম says : 0
মুমিনুল কয়টা টেস্টে অধিনায়কত্ব করল যে তাকে এত বিচার করছেন?
Total Reply(0)
দুলাল চাকরি ১০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:৫৬ এএম says : 0
মমিনুলের বাব দাদারা পার্টির নেতা নাকি ? তা না হলে এত অযগ্য হয়ে এত বড় দায়ীত্ব পায় কি ভাবে।
Total Reply(0)
Hamlet Sorker ১০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:৫৭ এএম says : 0
সাকিবকে অধিনায়কত্ব দেয়া জরুরি
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন