শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

‘ঘরে-বাইরে’ অ্যাশেজ উত্তাপ

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

ক্রিকেটে ঘর বলতে ‘২২ গজ’ আর বাহির বলতে যদি বাকি অংশকে বোঝায় তাহলে বেশ ভালোই উত্তাপ ছড়াচ্ছে অ্যাশেজ। গ্যালারিতে ইংল্যান্ডের বার্মি আর্মির প্রেমের প্রস্তাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন ক্যাঙ্গারুভক্ত নারী, সৌহার্দ্যরে সেই গ্যালারিতেই আবার দু’দলের সমর্থকদের হাতা-হাতির সাক্ষী হতে হয়েছে ক্রিকেটারদের স্ত্রী-বান্ধবীদের। আর মাঠে, শুরুতে পায়ের ‘নো’ বল ধরার প্রযুক্তি, এবার জানা গেল ব্রিজবেন টেস্টে নেই স্নিকোও। যার ফলে অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম ম্যাচটি পরিচালনায় অফিসিয়ালদের পড়তে হচ্ছে বিপাকের মুখে, চলছে বিতর্কও। তবে এসবকে ছাপিয়ে ক্রিকেটীয় লড়াই ঠিকই চলছে ব্রিসবেনে। গ্যাব্বায় প্রথম ইনিংসে ধ্বংসস্তুপে পরিণত ইংল্যান্ড ঘুরে দাঁড়িয়েছে জো রুট ও ডেভিড মালানের ব্যাটে। গতকাল ২ উইকেটে ২২০ রান করে দিন শেষ করেছে ইংল্যান্ড। এর আগে অস্ট্রেলিয়াকে ৪২৫ রানে অলআউট করে দলটি। প্রথম ইনিংসে ১৪৭ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল তারা। তৃতীয় দিন শেষে যদিও ৫৮ রানে পিছিয়ে আছে সফরকারীরা।
স্নিকো হলো এমন এক প্রযুক্তি যার মাধ্যমে বল ব্যাট ছুঁয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা হয়। গ্যাবায় চলমান পুরো ম্যাচেই মিলবে না এই প্রযুক্তির ব্যবহার। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, সীমান্তে নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রযুক্তি সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য টেকনিক্যাল কোনো সাহায্য নিতে পারছে না তারা। দুই দলকেই ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুন পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেছেন। ডিআরএস থাকার কথা নিশ্চিত করা হলেও প্রযুক্তির সমস্যার কারণে এর পুরো সুবিধা পাওয়া যাবে না।
স্নিকো না থাকার বিষয়টি প্রথম নজরে আসে ম্যাচের প্রথম দিন, যখন জস বাটলারকে ফেরানোর জন্য ক্যাচের রিভিউ নেয় অস্ট্রেলিয়া। যদিও ওই দফায় হট স্পটে পরিষ্কার দেখা যায় ব্যাটসম্যানের থাই প্যাডে লেগেছে বল।
গতকাল তৃতীয় দিন ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে যখন ১৬ রানে খেলছিলেন মালান, জশ হেইজেলউডের বলে কট বিহাইন্ডের জন্য রিভিউ নেয় অস্ট্রেলিয়া। হট স্পটে ব্যাটের নিচের অংশে বল লাগার অস্পষ্ট ছাপ ধরা পড়ে। কিন্তু তা মাঠে থাকা আম্পায়ারের নটআউট সিদ্ধান্ত বদলের জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ মনে হয়নি থার্ড আম্পায়ার পল উইলসনের কাছে। স্নিকো থাকলে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হতো তার জন্য।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিও এই টেস্টে নেই; সামনের পায়ের ‘নো বল’ ধরার। দ্বিতীয় দিন বেন স্টোকস নিজের প্রথম পাঁচ ওভারে ১৪টি ‘নো’ (ওভারস্টেপিং) করেন। এর মধ্যে কেবল একবারই তা ধরতে পারেন মাঠের আম্পায়ার। আরেকটি ধরা পড়ে থার্ড আম্পায়ার টিভি রিপ্লে দেখার পর, যে বলে বোল্ড হয়েও বেঁচে যান ডেভিড ওয়ার্নার।
টেস্টের বর্তমান প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী, সামনের পায়ের ‘নো বল’ এর জন্য প্রতিটি বলের পর বোলারের সামনের পায়ের অবস্থান দেখবেন থার্ড আম্পায়ার এবং ‘নো বল’ হলো কি-না, সে বিষয়ে কথা বলবেন মাঠের আম্পায়ারের সঙ্গে। গত বছর ইংল্যান্ড-পাকিস্তান টেস্টে প্রযুক্তিটি প্রথমবার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ব্রিজবেনে অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে পায়ের ‘নো বল’ ধরার প্রযুক্তি ম্যাচ শুরুর আগে থেকে কাজ করেনি। ফলে এই ম্যাচে খেলা হচ্ছে আগের প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী, যেখানে কোনো বলে উইকেট পড়লেই কেবল তা পরীক্ষা করে দেখবেন থার্ড আম্পায়ার।
তবে এমন ম্যাচও রোমাঞ্চ ছড়াচ্ছে ঠিকই। অ্যাশেজের প্রথম টেস্টেই ইনিংস হারের দশা হয়েছে ইংল্যান্ডের। প্রথম ইনিংসেই বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে দলটি। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে দলকে আশা দেখাচ্ছেন অধিনায়ক জো রুট। তাকে দারুণ সঙ্গ দিচ্ছেন ডেভিড মালান। তাতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ছেন এ দুই ব্যাটার। প্রথম ইনিংসে ২৭৮ রানে পিছিয়ে থাকা ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটাও ভালো ছিল না। দলীয় ২৩ রানেই ওপেনার রোরি বার্নসকে হারায় তারা। এরপর দলীয় ৬১ রানে আরেক ওপেনার হাসিব হামিদকেও হারায় দলটি। দুই ওপেনারই ক্যাচ তুলে দেন উইকেটরক্ষক আলেক্স ক্যারির হাতে। তাতে শঙ্কা জাগে ইনিংস হারের। তবে তৃতীয় উইকেটে মালানের সঙ্গে ইনিংস মেরামতের কাজে নামেন অধিনায়ক রুট। প্রাথমিক চাপ সামলে নিয়ে গড়েছেন ১৫৯ রানের অবিচ্ছিন্ন এক জুটি। তাতে অস্ট্রেলিয়াকে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নামানোর পাশাপাশি ভালো লিড নেওয়ার স্বপ্ন জোরালো হচ্ছে তাদের।
দুই অপরাজিত ব্যাটারই এগিয়ে যাচ্ছেন সেঞ্চুরির দিকে। অধিনায়ক রুট ব্যাট করছেন ৮৬ রানে। ১৫৮ বলের ইনিংসে ১০টি চার মেরে এ ইনিংস সাজান অধিনায়ক। মালান খেলছেন আরও দেখে শুনে। ৮০ রান তুলতে খেলেছেন ১৭৭ বল। তবে রুটের সমান ১০টি চার মেরেছেন তিনিও। অজিদের পক্ষে ১টি করে উইকেট নিয়েছেন মিচেল স্টার্ক ও অধিনায়ক প্যাট কামিন্স।
এর আগে আগের দিনের ৭ উইকেটে ৩৪৩ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামে অস্ট্রেলিয়া। শেষ ৩ উইকেট হারিয়ে যোগ করে আরও ৮২ রান। ১১২ রানে অপরাজিত থাকা ট্রাভিস হেড মার্ক উডের বলে শেষ ব্যাটার হিসেবে বোল্ড হওয়ার আগে খেলেন ১৫২ রানের ইনিংস। ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করে ১৪৮ বলে ১৪তি চার ও ৪টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। শেষ দিকে হেডকে দারুণ সঙ্গ দেন লেজের ব্যাটার স্টার্ক। সপ্তম উইকেটে ৮৫ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটার। ৩৫ রানের কার্যকরী এক ইনিংস খেলেন স্টার্ক। ইংল্যান্ডের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন ওলে রবিনসন ও মার্ক উড। ২টি শিকার ক্রিস ওকসের। ১টি করে উইকেট পেয়েছেন জ্যাক লিচ ও রুট।
ইংল্যান্ড : ১৪৭ ও ২য় ইনিংস : ৭০ ওভারে ২২০/৭ (হামিদ ২৭, বার্নস ১৩, মালান ৮০*, রুট ৮৬*; স্টার্ক ১/৬০, কামিন্স ১/৪৩)। অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস : (আগের দিন ৩৪৩/৭) ১০৪.৩ ওভারে ৪২৫ (হেড ১৫২, স্টার্ক ৩৫, লায়ন ১৫; ওকস ২/৭৬, রবিনসন ৩/৫৮, উড ৩/৮৫, লিচ ১/১০২, রুট ১/২৯)। তৃতীয় দিন শেষে

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন