ব্যাপ্তি বাড়িয়ে আরো বড় পরিসরে একাডেমি কাপ আয়োজন করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তৃণমূল থেকে প্রতিভাবান ক্রিকেটার খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে আয়োজিত এই টুর্নামেন্টে অংশ নেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৯৬টি ক্রিকেট একাডেমি। আগের দিন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিবি জানায়, ৫০ ওভারের এই প্রতিযোগিতা হবে দুই স্তরে- বিভাগীয় ও জাতীয়। গতকাল বিভাগীয় রাউন্ডের খেলা শুরুর আগে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে লোগো ও ট্রফি উম্মোচনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো একাডেমি কাপের আনুষ্ঠানিক যাত্রা। বিভাগীয় রাউন্ডে ৮ গ্রুপে অংশ নেবে ৯৬ দল। প্রথম আসরে ১৮ বছরের বেশি বয়সী কেউ খেলতে পারেননি। এবার ১৭ থেকে ২১ বছর বয়সী ক্রিকেটাররা অংশ নিতে পারবেন। সাত বিভাগ, ঢাকা মেট্রোর চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলগুলো খেলবে জাতীয় রাউন্ডে। বিভাগীয় রাউন্ডে মোট ম্যাচ হবে ৮৮টি, জাতীয় রাউন্ডে ২৭টি। বিভাগীয় রাউন্ডের খেলা শুরু হয়েছে গতকাল। খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও ঢাকায় (উত্তর) একই দিনে শুরু হবে খেলা। ঢাকা মেট্রো পর্যায়ে খেলা শুরু ২১ ডিসেম্বর থেকে। আর ১৬ দল নিয়ে জাতীয় রাউন্ডের খেলা হবে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে।
এই একাডেমি কাপের উদ্বোধন করতে এসে ক্রিকেটারদের নিজের পরিশ্রমের ওপরই জোর দিয়েছেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বললেন, ‘একজন ক্রিকেটার নিজেই নিজের পারফরম্যান্সের উন্নতি করতে পারেন। ক্রিকেট বোর্ডের সহযোগিতা থাকবে, উন্নত অনুশীলনের সুযোগ-সুবিধাও তিনি পেতে পারেন; কিন্তু ক্রিকেটারের নিজেরই যদি একাগ্রতা না থাকে, লক্ষ্য ঠিক করে সে পথে হাঁটার দৃঢ়তা না থাকে, তাহলে কিছুই হবে না।’ যদিও সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার নেতৃত্ব চরম ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ দল। বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান সফরেও দল ডুবেছে হতাশায়। তবু অধিনায়কত্বে বহালই আছেন রিয়াদ। আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় হতে যাওয়ায় পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়েও ভাবতে শুরু করেছেন তিনি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে হওয়ায় সবশেষ বিশ্বকাপে উইকেট ছিল কিছুটা উপমহাদেশীয় ঘরানার। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যাবে একদম ভিন্ন কন্ডিশন। আসছে বছরের সেই বিশ্বকাপ নিয়ে এখন থেকেই তাই ভাবনা ঘুরছে মাহমুদউল্লাহর মাথায়, ‘নির্ভর করে আমরা কি রকম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলছি। অনেক পথ পাড়ি দেওয়ার বাকি আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন খুবই ভালো। সমান বাউন্স, ভালো পেস থাকে। এখন বিষয়টা আমাদের উপর, কীভাবে আমরা জিনিসটা সামলাতে পারি।’
বাউন্স ও গতিময় উইকেটে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে প্রচুর রানও হওয়ার কথা। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ধুঁকতে থাকা ব্যাটিং ইউনিট নিয়ে কতটা এগুনো যাবে তা নিয়ে আছে প্রশ্ন। মাহমুদউল্লাহ উন্নতির জায়গা তাই দেখছেন ব্যাটিংয়ে, ‘সম্ভবত আমাদের ব্যাটিং ইউনিটকে আরও ভালো করতে হবে। বোলিং ইউনিট আমি মনে করি ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে। কিছু ছোটখাটো জিনিস আছে সেগুলো আমরা যদি ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি সিরিজে উন্নতি করি তবে আমরা খুব ভালো কিছু অর্জন করতে পারবো।’
পাকিস্তান সিরিজে দল নির্বাচন নিয়ে পুরোনো প্রশ্ন উঠেছে নতুন করে। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামোতে কোনো খেলোয়াড় জাতীয় দলে পারফর্ম করতে না পেরে বাদ পড়লে তার প্রত্যাবর্তনের গতিপথটা কেমন, সেটিও যেন ঠিক পরিষ্কার নয়। কোনো ক্রিকেটারকে ঠিক কোন পারফরম্যান্সের বিচারে দলে আনা হয় অথবা তাঁকে ঘিরে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কেমন, সব সময় স্পষ্ট হয়ে ওঠে না সেসবও। অবশ্য মাহমুদউল্লাহ বলছেন, দিন শেষে ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সটাই সব, ‘ভালো পারফর্ম করলে অবশ্যই আপনি নজরে থাকবেন। আপনাকে শীর্ষ পর্যায়ে খেলার সুযোগ-সুবিধাগুলো দেওয়া হবে। কিন্তু দিন শেষে নিজের ওপরও অনেক কিছু থাকে। আমি কীভাবে তৈরি হতে চাই, আমার লক্ষ্যটা কী, নিজেকে কীভাবে দেখছি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার জন্য—এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। আর আমার মনে হয়, বোর্ড এ (তাদের) কাজগুলো ভালোভাবেই করছে।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটের চলমান সংকট হয়ত রাতারাতি দূর হবে না। সেজন্য দরকার মজবুত পাইপলাইন। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে পাইপলাইন কতটা শক্ত এই নিয়ে আছে বড় প্রশ্ন। একাডেমি কাপের ট্রফি উন্মোচন করতে এসে মাহমুদউল্লাহ জানালেন, পাইপলাইনের সংকট মেটাতে পারে এমন আসর, ‘আমিও জাতীয় দলে ঢুকার আগে আমাদেরও প্রথম একাডেমি ফর্ম হয়েছিল। একাডেমি একটা ভালো স্টেজ, জাতীয় দলে ঢুকার আগে। মাঝখানের দুটা বছর করোনা ছিল, তার আগে একাডেমি কাপ হয়েছিল, এবার আরও বড় পরিসরে হচ্ছে, এটা খুবই ভালো সুযোগ সবার জন্য।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন