রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কি বাংলাদেশের ওপর ‘চাপ’ সৃষ্টির কৌশল?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

মানবাধিকার দিবসে র‌্যাব ও এর ছয়জন কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাব ও এর কর্মকর্তাদের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেবার ইস্যুটিকে বাংলাদেশের উপর আমেরিকার একটি ‘চাপ সৃষ্টি’র কৌশল হিসেবে দেখেন একজন বিশ্লেষক। এর পেছনে চীন ও রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের ভাল সম্পর্ক, কোয়াড নামের এক মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটে বাংলাদেশের যোগ না দেয়া - এমন নানা কারণে আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গি বদলের একটি যোগসাজশ রয়েছে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেমের স্কুল অফ সিকিউরিটি এন্ড গ্লোবাল স্টাডিজের অধ্যাপক সায়ীদ ইফতেখার আহমেদ।

‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার’ অভিযোগে র‌্যাব ও এর ছয়জন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তার ফলে বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে অনেকেই সেই প্রশ্ন তুলছেন। যদিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের বক্তব্য, সম্পর্কে প্রভাব পড়বে কি না, সেটা ‘ডিপেন্ডস অন ইউএসএ’, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করে। কিন্তু প্রফেসর আহমেদ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই সম্পর্কে প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি যদি আগামীতে চীন ও রাশিয়ার দিকে আরও ঝুঁকে পড়ে তাহলে ‘ভবিষ্যতে আরও কিছু নিষেধাজ্ঞার’ মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রফেসর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘পুরো বিষয়টি নির্ভর করবে আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতির কার্যক্রমের উপর’।

বাংলাদেশের কোন নিরাপত্তা বাহিনী ও তার কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনা এটাই প্রথম। এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞার কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বাংলাদেশ। দেশটির রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। আমেরিকার এই নিষেধাজ্ঞাকে শনিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ‘লোক দেখানো অপচেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের ব্যাপারে ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অধ্যাপক ইফতেখার আহমেদ বিবিসিকে বলেন, এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলের একটি বড় কারণ হতে পারে বাংলাদেশের সাথে চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক। ‘বাংলাদেশের সাথে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীনের সুস্পষ্ট একটি প্রাধান্য রয়েছে। এই অঞ্চলে চীন একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যাক্টর হিসেবে ভূমিকা রাখছে’।

‘খেয়াল করুন এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা কোন রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে দেয়া হচ্ছে। রাশিয়া, চীন, মিয়ানমার বা উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে দেখেছি, যাদের যুক্তরাষ্ট্র মিত্র বলে মনে করে না। চাপ সৃষ্টি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এটি ব্যাবহার করে। এসব প্রেক্ষাপটে বাইডেন প্রশাসন এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে আমি মনে করি।’ সায়ীদ ইফতেখার আহমেদ মনে করছেন, বিশেষ করে বাইডেন প্রশাসন দায়িত্ব নেবার পর বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সেটি হঠাৎ করে ঘটেছে এমন নয়। ওবামা প্রশাসনের সময় বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গে একধরনের টানাপোড়েন দেখা দিয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। গত বছর অক্টোবর মাসে ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র কাছে আটজন মার্কিন সিনেটর র‌্যাবের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তুলে চিঠি দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আহ্বানে ডিসেম্বর মাসে যে গণতন্ত্র সম্মেলন বা ‘সামিট ফর ডেমোক্রেসি‘ শুরু হয়েছে, তাতে অংশগ্রহণকারীদের আনুষ্ঠানিক তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই। এই সবকিছুর একটি ধারাবাহিকতা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র কোন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিলে আনুষ্ঠানিকভাবে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে। তবে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি নেই, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রচুর অভিযোগ রয়েছে এমন অনেক দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক রাখে। সায়ীদ ইফতেখার আহমেদ এক্ষেত্রে সউদী আরবের কথা উল্লেখ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইডেন প্রশাসন দায়িত্ব নেবার পর বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। অধ্যাপক আহমদ বলছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীন ও রাশিয়ার এক ধরনের শীতল যুদ্ধ চলছে। সে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপারে কিছুটা নার্ভাস। তারই আলোকে এই দেশ দুটির সাথে সম্পর্কের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’ ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে নৌ চলাচল ‘অবাধ ও স্বাধীন’ রাখার উপায় খোঁজার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে ‘কোয়াড’ নামে যে জোট রয়েছে তাতে বাংলাদেশকেও যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত করতে চেয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন। এ বছরের মে মাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত বলছিলেন, কোয়াডে যোগ দিলে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ‘যথেষ্ট খারাপ হবে’।

যদিও ওই সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছিলেন, কোয়াডের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে কোন প্রস্তাবই দেয়া হয়নি তখনো। কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে বলা না হলেও এই জোটকে বলা হয় চীনের বিরুদ্ধে এই দেশগুলোর একটি অবস্থান। ‘এতে যোগ দেয়ার ব্যাপারে যদি বাংলাদেশের উপর চাপ তৈরি করা হয়, বাংলাদেশের অবস্থানের নির্ভর করে ভবিষ্যতে হয়ত কোন প্রভাব পড়তে পারে তবে এখনই ব্যাবসায়িক সম্পর্ক বা অন্য বিষয় প্রভাব পড়বে না বলে আমার মনে হয়,’ বলছিলেন অধ্যাপক আহমেদ। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
MRr Khan ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৫২ এএম says : 0
এটা কোনো সমস্যাই না চাপ দিলে কিছু হবে না মাঝ খানে গরিবের টাকা গুলো জলে গেলো
Total Reply(0)
Souravbarua Sajal ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৫৩ এএম says : 0
যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা অনুমেয় বাংলাদেশকে তাঁরা উত্তর কোরিয়া ও ইরানের কাতারে ফেললো আর তাদের নিষেধাজ্ঞা পড়লে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো একই পদ্ধতি অবলম্বন করে।
Total Reply(0)
Saif Uddin ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৫৩ এএম says : 0
এলিট ফোর্স RAB এর অনেক অর্জন ও সাফল্য আছে কিন্তু সরকারের অন্যায় আদেশ শুনে ভিন্ন দল মতের মানুষ কে দমন করতে খুন গুম ক্রসফায়ার এর মতো জগন্য কাজে জড়িয়ে একটা বিতর্কিত বাহিনীতে পরিণত হয়েছে বরিশালের লিমন কমিশনার একরাম নারায়ণগঞ্জ এ 7 খুন আরো অনেক
Total Reply(0)
Rahat Chowdhury ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৫৪ এএম says : 2
RAB বাংলাদেশের থেকে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস মাদক ব্যবসায়ী চাঁদাবাজ উচ্ছেদে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে।মার্কিনরা দালাল তাদের নিষেধাজ্ঞা RAB এর কিছু,ই হবেনা।মিয়ানমার লক্ষ লক্ষ মুসলিম হত্যা করে সে গুলো তারা দেখেনা।
Total Reply(0)
Jasim Uddin ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৫৪ এএম says : 3
মানবাধিকারের নামে অযাচিত দোষারোপ কাম্য নয়। অন্ততঃ যারা নিজেরাই মানবাধিকার হরনকারী তাঁদের মুখে তো নয়ই।
Total Reply(0)
Tarek Shakil ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৫৪ এএম says : 5
আমেরিকা সারা পৃথিবীতে,প্রতিটি মূহুর্তে মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করছে,আবার তাদের মুখে মানবতার বাণী শুনতে হচ্ছে বিশ্বকে। হাস্যকর
Total Reply(0)
Rafiqulislam Rafiq ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৫৪ এএম says : 1
বিবিসি দয়া করে বিশেষজ্ঞের মতামত না নিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মতামত নেন এর চেয়ে ভালো মতামত পাবেন লেখার জন্য
Total Reply(0)
Zahidul Islam salam ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:৪২ এএম says : 1
আমেরিকাতে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। আবার বাংলাদেশকে নিয়ে টানাটানি করছেন। যতসব বাটপারি। RAB আমাদের গর্ব।
Total Reply(0)
MOHAMMED M HOSSAIN ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:২৫ এএম says : 0
Bhai hoyto apni americar visa na peye koste emon kotha bolcchen? Akhon o america prithibite manobotar desh . ...
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন