বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাস্তবে রূপ নিচ্ছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা!

পোশাক খাতের ঋণপত্রে যুক্ত হচ্ছে বিশেষ ধারা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে গত বছরের ডিসেম্বরে র‌্যাব ও র‌্যাবের সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে, এমন আশঙ্কার কথা সেই সময় জানিয়েছিলেন বিশ্লেষকরা। এখন সে আশঙ্কাই বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ব্যবহার হওয়া ঋণপত্রে (এলসি) যুক্ত হতে শুরু করেছে বিশেষ ধারা।

পোশাক খাতের ঋণপত্রে যুক্ত হতে শুরু করেছে বিশেষ ক্লজ বা ধারা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক এক ক্রেতার কাছ থেকে সম্প্রতি এমন ধারা যুক্ত হওয়া ঋণপত্র পেয়েছেন বাংলাদেশের এক ব্যবসায়ী। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণ দেখিয়ে এতে বিশেষ ধারা যুক্ত করেছে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানটি। ঋণপত্রে বিশেষ ধারা সংযোজনের কারণে আমদানি-রফতানির বিপরীতে অর্থ পরিশোধ নিয়ে জটিলতার আশঙ্কা করছেন পোশাক খাতসংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে এতে বড় ধরনের বাধা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

জানা গেছে, গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের পোশাক রফতানি-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী একটি ঋণপত্র পান। সুবিধাভোগী সব পক্ষের উদ্দেশে ঋণপত্রটির একটি ধারায় যা উল্লেখ করা হয়েছে তা এমন-জাতিসংঘ, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও সংস্থাগুলোর দ্বারা আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে এ ডকুমেন্টারি ক্রেডিট সম্পর্কিত লেনদেনে অক্ষম হতে পারি। নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন ঘটলে আমরা কোনো দায়বদ্ধতা গ্রহণ করব না এবং উদ্ভূত কোনো ক্ষতি, বিলম্বের জন্য দায়ী থাকব না।

বাংলাদেশের পোশাক পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতাদের মতে, এমন ধারার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। তবে ঋণপত্র গ্রহণ করা বা না করার বিষয়টি নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট পোশাক রফতানিকারক কারখানা কর্তৃপক্ষের ওপর। নিষেধাজ্ঞার কারণে এ ধরনের কোনো ঘটনা যদি ঘটে সেক্ষেত্রে করণীয় নিয়ে ভাবতে হবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যাংকের মাধ্যমে ক্রেতার পাঠানো ঋণপত্রে বিশেষ ধারা যুক্ত করা হয়েছে। ধারায় নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশ, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেনে ব্যবহূত ঋণপত্র কার্যকর থাকবে না। কোনো লেনদেনে অভিযুক্তদের সংশ্লিষ্টতা থাকলে ওই ঋণপত্রের বিপরীতে অর্থ পরিশোধের বাধ্যবাধকতাও থাকবে না। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কারো সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পেলে পরবর্তী সময়ে সবাইকে কঠোর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো এখন বৈশ্বিকভাবেই অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য না, বিশ্বে বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট শতভাগ দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ফলে বিশ্বের সব ব্যাংকই তাদের ইস্যু করা ঋণপত্রে এ ধারা অন্তর্ভুক্ত করবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাধ্যমে বাধ্যবাধকতা কার্যকর করা হবে।
রফতানিকারক ও ক্রেতা পক্ষ উভয়ের জন্য ঋণপত্রে এমন ধারা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বিশ্বে প্রবহমান ডলার নিয়ন্ত্রণ করে মার্কিন ট্রেজারি। এক্ষেত্রে ঋণপত্রের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেনে সম্পৃক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠান কী চাইল তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাধ্যবাধকতা গুরুত্বপূর্ণ। আর ব্যাংক অনুসরণ করবে আন্তর্জাতিক নিয়ম বা ধারা। ঋণপত্র নিয়ে সমঝোতায় যেতে হবে মার্কিন কোনো ব্যাংকের সঙ্গেই। আর বিশ্বে ব্যাংকিংয়ের ৯০ শতাংশের বেশি হয় যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে। ফলে মার্কিন ট্রেজারির মাধ্যমে আসতেই হবে।

তবে বিশেষ ধারা যুক্ত হওয়ায় পোশাক খাতের ব্যবসায় কোনো সমস্যা তৈরি হবে না বলে মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, সাধারণত ব্যবসায় নিষেধাজ্ঞায় সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তি থাকেন না। ক্রেতার পক্ষ ক্লজে বা ধারায় অনেক কিছুই থাকতে পারে, যা আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে ক্রেতাকে হয়তো অনুসরণ করতে হয়। কোনো কারখানা এ ধারা যুক্ত থাকায় এলসি নেবে না, এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এলসির ধারাগুলো নিয়ে এখন আরো অনেক সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে। রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান যেন অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে এলসি নেয়। এ ধরনের ধারা থাকলে তারা ক্রেতাকে অবশ্যই তা না রাখার জন্য বলবে। এক্ষেত্রে আমরা কোনো কিছু চাপিয়ে দেব না, আর সেটা ঠিক হবে না।

অর্থমূল্য বিবেচনায় বাংলাদেশের মোট রফতানির ৬৩ শতাংশই যায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউতে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে এতদিন অনেক ধরনের রেয়াত পেয়ে এসেছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে মূলত একপক্ষীয় সুবিধাই পাওয়া গিয়েছে বেশি। কিন্তু যখনই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাবে, তখন দুই ডজনের বেশি কনভেনশন সই করতে হবে ও মানতে হবে। তখন বাংলাদেশ আর কোনো ছাড় পাবে না। সামনের দিনগুলোয় ইউরোপীয় রাষ্ট্রজোটটির সঙ্গে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ পদক্ষেপটি নতুন অনুষঙ্গ হিসেবে যুক্ত হতে পারে।

দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাণিজ্য সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি নিয়ে দ্বিপক্ষীয় সভাগুলোয়ও বেশ আলোচনা হচ্ছে। পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, জিএসপি নিয়ে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া প্রায় সব শর্তই পূরণ করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু দিন শেষে শ্রমিক অধিকার নিয়ে আরো অনেক কিছু করার আছে বলে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়াটি দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। নীতি সুবিধার প্রসঙ্গ এলেই মার্কিনরা শ্রম অধিকারের পাশাপাশি মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের মতো বিষয়গুলো টেনে নিয়ে আসছে। এতে এসব বিষয়ও এখন বাণিজ্য সুবিধা নিয়ে দরকষাকষির অংশ হয়ে উঠেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Shahin Alam ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:৩৭ এএম says : 0
তারপরেও আমি ক্ষমতার মোহে অন্ধ
Total Reply(0)
Mithun Aich ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:৩৮ এএম says : 0
Really alarming
Total Reply(0)
Kafil Choudhury ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:৩৮ এএম says : 0
Really sad and alarming news
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:৪৫ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের দেশকে হেফাজত করুক
Total Reply(0)
টুটুল ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৫:০৪ এএম says : 0
কিছু মানুষের কারণে দেশ ভোগান্তিতে পরে
Total Reply(0)
তফসির আলম ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:৩৩ পিএম says : 0
পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। আশা করি সরকার কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে এর সমাধান করবেন
Total Reply(0)
Sabbir Sarker ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:৩৮ পিএম says : 0
সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ইনশাআল্লাহ
Total Reply(0)
Md Rasel Ahmed ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:৩৯ পিএম says : 0
যারা দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ষড়যন্ত্র চালায় তারা কখনো দেশপ্রেমিক হতে পারে না।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন