মাওলানা আবদুর রাজ্জাক
॥ চার ॥
এদের নাফরমানির স্তর সম্পর্কে শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালারই ইলম আছে। দায়ী, আল্লাহর অবাধ্য মাদউর প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টিতে লক্ষ্য করবে এবং তাকে আল্লাহর সঙ্গে সর্ম্পক করিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা চালাবে।
দাওয়াতের চতুর্থ মূলনীতি হল ‘দাওয়াতের পদ্ধতি ও মাধ্যম’
আল্লাহর দিকে আহ্বান; তার দীনের প্রচার কাজ ও দাওয়াতে দীনের সুপ্রভাব ফেলতে দায়ী মুখাপেক্ষি হয় এমন ইলম ও যোগ্যতার যার দ্বারা সে মাদউর অবস্তুা, সামাজিক প্রেক্ষাপট, পরিস্থিতি এবং মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতি বুঝতে সক্ষম হবে। ইলম বিষয়ের আলোচনা পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে। এখানে দায়ীর এমন জ্ঞান সর্ম্পকে আলোচনা করা হবে যা দাওয়াতি কাজের সূচনা, অবস্থা ও অন্তরায় সম্পর্কীয়। এটাই দাওয়াতের পদ্ধতি। আর দায়ী দীন প্রচারের কাজে যেসব আসবাবের সাহায্য নেয় সেগুলো দাওয়াতের মাধ্যম। যখন দায়ী এসব বিষয় অর্জন করতে পারবে তখন দাওয়াতি কাজ সফল হবে।
(ক) দাওয়াতের পদ্ধতি, মাধ্যমসমূহের উৎস। (খ) দাওয়াতের পদ্ধতি। (গ) মাধ্যমসমূহ।
উৎস : দাওয়াতের পদ্ধতি এবং মাধ্যমসমূহের মূল উৎস হল, আল কোরআনুল কারীম, পবিত্র সুন্নাহ, পূর্বসূরীদের ইতিহাস, মুজতাহিদ ইমামদের উদ্ভাবন, অভিজ্ঞতা।
কোরআনুল কারীম : কোরআনুল কারীমে রাসূলগণের ইতিহাস এবং তাদের সম্প্রদায়ের ঘটনাবলী সম্পর্কীয় বহু আয়াত বিদ্যমান রয়েছে। আমাদের রাসূল কারীম (সা.)-কে সম্বোধন করেও বহু আয়ত নাযিল হয়েছে। এগুলো থেকে দাওয়াতের পদ্ধতি এবং মাধ্যমসমূহ জানা সম্ভব। কালামে পাকে স্বয়ং আল্লাহ বলেন “রাসূলদের ওই সমস্ত বৃত্তান্ত আমি তোমার কছে বর্ণনা করেছি, যদ্বারা আমি তোমার চিত্তকে দৃঢ় করি এবং এর মাধ্যমে তোমার কাছে এসেছে সত্য এবং মুমিনদের জন্য এসেছে উপদেশ ও সাবধান বাণী” (সূরা হুদ-১২০)। আল্লামা ইবনে কাসির বলেন, আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূলকে বলেছেন “পূর্ববর্তী উম্মতরা তাদের নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা, নবীদেরকে তাদের দেয়া কষ্ট সহ্য করা, শেষে আল্লাহর শাস্তি এসে পড়া, কাফিরদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া এবং নবী রাসূল ও মুমিনদের মুক্তি পাওয়া ইত্যাদি ঘটনাবলী আমি তোমাকে শোনাচ্ছি, যেন তোমার মনকে আমি আরো দৃঢ় করি এবং তোমার অন্তরে যেন প্রশান্তি নেমে আসে”। এ দুনিয়ায় তোমার উপর সত্য প্রকাশিত হয়ে পড়েছে এবং তোমার সামনে সত্য ঘটনাবলী বর্ণিত হয়েছে। এটা কাফিরদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় এবং মুমিনদের জন্য উপদেশ”।
সুন্নাতুন নববীয়্যাহ : দাওয়াত ও তার মাধ্যম সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমনটি ফুটে উঠেছে নবী (সা.)-এর পবিত্র সীরাতে। রাসূল (সা.) মক্কা ও মদিনাতে অবস্থান, হিযরত, মানুষের সাথে লেনদেনসহ নতুন নতুন সংগঠিত ঘটনাবলী এবং অবস্থা থেকে আমাদের জন্য রয়েছে পাথেয়। যেকোন সময় ও কালে দায়ী যেসব প্রেক্ষাপটের সম্মুখীন হবে সে অবস্থা ও প্রেক্ষাপট প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে নবীর জীবনীতে পাবে। নবীর জীবনী থেকে প্রাপ্ত পাথেয়কে দায়ী আপন দাওয়াতের কাজে লাগাতে পারবে এবং দীন প্রচারের কাজে সফল হতে পারবে।
পূর্বসূরীদের ইতিহাস : সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ী এবং তাদের অনুসারীদের জীবন ইতিহাস দাওয়াতি কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যার দ্বারা দাওয়াতি কাজে সহযোগিতা নেয়া সম্ভব। কেননা পূর্বসূরীরা শরীয়তের মূল বিষয়ে সর্বাধিক জ্ঞাত ছিলেন।
মুজতাহিদদের উদ্ভাবন : শরীয়তের দলীল দ্বারা ফকীহগণ শরীয়তের বিধি-বিধান উদ্ভাবন করেছেন। সেসব বিধি-বিধানের মধ্যে দাওয়াত সংক্রান্ত অনেক বিষয়ও রয়েছে, যেমন সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ, জিহাদ ইত্যদি। এবং এসব বিষয়ে স্বতন্ত্র অধ্যায় ও কিতাবাদির সমাবেশ ঘটিয়েছেন।
অভিজ্ঞতা : মানুষের জন্য অভিজ্ঞতা হলো সর্বোত্তম শিকক্ষ। বিশেষ করে যারা সর্বস্তরের মানুষের মাঝে কাজ করবে তাদের জন্য অভিজ্ঞতা এক অনন্য পাথেয়। জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ অনেক কাজ নিতে পারে। হাদিসে এসেছে, মুমিন একই গর্তে দু’বার পাঁ দেয় না।
দাওয়াতের পদ্ধতি : দাওয়াতের ফলদায়ক পদ্ধতি হল, প্রথমে মাদউর রোগ চিহ্নিত করা এবং চিকিৎসা কী হবে তা জানা। মাদউর রোগ নির্ণয় ও মাদউর মাঝে অনুভূতি সৃষ্টির ক্ষেত্রে যে সব বিষয় অন্তরায় আছে সেগুলো দূর করে মাদউকে চিকিৎসা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন