দীর্ঘদিন ধরে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। দিনেরবেলাও মশারি বা কয়েল জ্বালিয়ে থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। মশার কামড়ে শান্তি মতো ঘুম কিংবা পড়াশোনা কোনোটাই করতে পারছেন না তারা। শিক্ষার্থীদের দাবি মশা নিধনে সম্পূর্ণ নিরব ভূমিকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
দেশব্যাপী করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত ৫ অক্টোবর খোলা হয়েছে ঢাবির আবাসিক হলগুলো। হল খোলার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিটি হল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তবেই হলে উঠানো হয় শিক্ষার্থীদের। গণরুমগুলোতে দেড় বছর ধরে পড়ে থাকা লেপ তোশক ও অন্যান্য আসবাবপত্র সরিয়ে নতুন আসবাব নিয়ে হলে উঠেন শিক্ষার্থীরা। এর ফলে প্রথম কয়েকদিন হলগুলোতে মশা তেমন একটা দেখা যায়নি। কিন্তু সপ্তাহ কয়েক যাওয়ার পর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন ময়লার ভাগাড় থেকে উৎপন্ন মশার দেখা মিলে হলগুলোতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে ময়লা আবর্জনার স্তূপ জমলেও এগুলো পরিষ্কারে দ্রত পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের পেছনের পুকুরটি প্রায় আবর্জনার স্তুপ হয়ে থাকে। এটাকে মশার নিরাপদ প্রজননস্থল মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। এ পুকুরের কারণেই আশপাশের চার হলের শিক্ষার্থীরা মশাবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয় বলে দাবি তাদের। অন্যদিকে সূর্যসেন হলের ভেতরে রয়েছে বিস্তীর্ণ খোলা জায়গা। সেখানে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি একটি পুকুর থাকলেও সেটি পরিষ্কার করা হয় না। এ ছাড়া জহুরুল হক হলের পুকুরও অপরিষ্কার। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাসের যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ও ডোবা-পুকুরগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না রাখলে মশার বিস্তার বাড়তেই থাকবে। সরেজমিনে ডাকসু ভবন, টিএসসি, সমাজবিজ্ঞান অনুষদসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ময়লার স্তুপ দেখা গিয়েছে। এমনকি প্রশাসনিক ভবনের সামনেও বিশালাকার ময়লার ভাগাড় দেখা গেছে গতকাল।
এদিকে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হচ্ছেন মশাবাহিত নানা রোগে। বিশেষ করে এই সমস্যাটা প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে গণরুমগুলোতে। শিক্ষার্থীদের দাবি গণরুমগুলোতে অনেক শিক্ষার্থী একসাথে গাদাগাদি করে বসবাস করায় রুমগুলো সহজে পরিষ্কার করা যায় না। যার ফলে অপরিচ্ছন্ন রুমে সহজেই মশা আস্তানা গাড়ে। এ দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কার্যকর ব্যবস্থা থাকা দরকার বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে প্রতিটা হলে মশার ঔষধ ছিটানোর ফগার মেশিন দেওয়া হলেও হল প্রশাসনের গাফেলতির কারণে নিয়মিত ঔষধ ছেটানো হয়না। এদিকে উন্নতমানের কোনো স্প্রে না দিয়ে কেবল কেরোসিন দিয়ে ধোঁয়া ছেটানোর অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নাইম শেখ বলেন, শতবর্ষে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এত কিছু করেছে সেখানে সামান্য মশা নিধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেই এটা সত্যিই হতাশার। একই সাথে এটা লজ্জার যে মশা নিধনে বিশ্ববিদ্যালয়কে সিটি কর্পোরেশনের উপর নির্ভর করে থাকতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জিয়া হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, বুয়েটের খেলার মাঠে পর্যন্ত মশার ঔষধ ছেটানো হয় অথচ আমাদের মাঠ তো দূর, হলগুলোতে পর্যন্ত নিয়মিত ঔষধ ছেটানো হয় না। মশার জ্বালায় হলে ঘুমানো তো দূর বসাও যায় না। এমনকি মশারি টাঙিয়ে ও রেহাই পাচ্ছি না। বিশেষ করে বিকেলে মশার গুনগুনানিতে রুমে থাকাও যায় না।
মুহসীন হলের আরেক শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন মাহিন বলেন, শতবর্ষে পদার্পণ করেও ঢাবি এখনো ছাত্রদের কাছে সমালোচনা কুড়োয়। আবাসন সঙ্কট এ সমস্যার মূল কারণ। এ দায় কোন রাজনৈতিক দলের নয়, এ দায় প্রসাশনের। আবাসন সঙ্কট থেকেই মূলত নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি, এর মধ্য অন্যতম হলো অস্বাভাবিক মাত্রায় মশা। ফের ডেঙ্গু মহামারীর আশঙ্কা করে স্যার এএফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান বলেন, ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করেছিল। ফলশ্রুতিতে আমরা আমাদের এক সহপাঠিকে হারিয়েছি । বর্তমানেও মশার উপদ্রব যে হারে বেড়েছে এতে করে আবার যে ডেঙ্গু মহামারী রূপ নিবে না তা বলা যায় না। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত দ্রুত একটা কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন