ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে ইজিবাইক এবং এর যন্ত্রাংশ আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছেন। বাঘ ইকো মটর্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি কাজী জসিমুল ইসলামের করা রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি মামুনুর রহমান ও খন্দকার দিলুরুজ্জামানের দ্বৈত বৈঞ্চ বুধবার এই আদেশ জারি করেন। রিটকারীর আবেদনে বলা হয়, বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ৪০ লাখ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলাচল করছে, যাদের কোনো বৈধ অনুমোদন নেই। বিদেশ থেকে প্রধানত (চীন) প্রায় ২ হাজার কনেটেইনার ভর্তি ইজিবাইক আমদানির প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশে আসবে। হাইকোর্ট তার নির্দেশনায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক পরিচালনা বন্ধের পাশাপাশি এর আমদানি বন্ধেরও নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাটারিচালিত ও অননুমোদিত পরিবহন বন্ধে ইতিপূর্বেও বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে সব নির্দেশনার কোনোটিই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। এ কারণে এবারের নির্দেশনায় ইতিপূর্বে দেয়া রিকশা ও অটোরিকশা বন্ধের নির্দেশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রণালয়ের সচিব, বিআরটিএ চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্বাহী প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের মামলায় বিবাদী করা হয়েছে। আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
ইতিপূর্বে ২০১৪ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে নির্দেশনা বিশেষ বিশেষ রাস্তায় আংশিক বাস্তবায়িত হলেও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে স্থানীয়ভাবে নির্মিত নসিমন, করিমন, ভটভটি ইত্যাদি নামীয় পরিবহন বন্ধে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হলেও এসব পরিবহন এখনো মহাসড়কগুলোতে অহরহ চলতে দেখা যায় এবং এদের কারণে দুর্ঘটনা ও যানজট এখনো অব্যাহত আছে। সে সব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা ও অব্যবস্থাপনার কারণেই হাইকোর্টকে আবারো একই বিষয়ে অনুরূপ রুল জারি করতে হলো। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করলে কোর্টের নির্দেশনা বা জনপ্রত্যাশায় কোনো সুফল দেবে না। গণপরিবহন ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল, পরিবেশবান্ধব, জনবান্ধব ও নিরাপদ করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে আর হেলাফেলা বা সময় ক্ষেপণের সুযোগ নেই। বিশেষ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা হাইকোর্টে রিট করে প্রতিবিধান চাওয়া ব্যতিরেকে এসব কর্তৃপক্ষের সাধারণ দায়িত্বই হচ্ছে গণপরিবহন ব্যবস্থায় সামগ্রিক শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
পরিবেশদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বর্তমান বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। কলকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি গণপরিহনের পরিবেশগত ইম্প্যাক্ট নিয়ন্ত্রণকে সারাবিশ্বেই গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করা হয়েছে। বায়ু ও পানির দূষণ নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমিয়ে আনতে যেখানে পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে, সেখানে এসিড ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোরিক্সাগুলো আমাদের জন্য নানাভাবে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেইসাথে এসব লাখ লাখ ইজিবাইক প্রতিদিন শত মেগাওয়াট বিদ্যুত খরচ করলেও তা থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। বেশিরভাগই চলছে অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে। এসব পরিবহনের নষ্ট ব্যাটারি ও যন্ত্রাংশের যথাযথ সংরক্ষণ ও রিসাইক্লিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় তা মাটি, পানি ও বায়ু দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবিলম্বে এ সব বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। এই সঙ্গে আধুনিক পরিবেশবান্ধব বিকল্প গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে উৎপাদিত পরিবেশবান্ধব পরিবহনকে আরো সহজলভ্য করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকসহ অবৈধ অটোরিকশার সংখ্যা অব্যাহতভাবে বেড়ে চলার পেছনে রয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক ক্ষমতাশীল মহল ও পুলিশের সংশ্লিষ্টদের চাঁদাবাজি। এ কারণেই এসব বন্ধ হচ্ছে না। জনস্বার্থে হাইকোর্টের নির্দেশনার পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অভাবে এসব অবৈধ যান চলতে পারছে। কাজেই এ ব্যাপারে কঠোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই নিতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন