বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কক্সাবাজারে গলাকাটা বাণিজ্য

পর্যটকরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

পর্যটনের প্রাণ বলা হয় কক্সবাজারকে। সময় পেলেই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকতে প্রশান্তির জন্য ছুটে চলে প্রায় সব বয়সের মানুষ। বরাবরের মতো এবারও সাপ্তাহিক দুইদিন ছুটি সাথে বিজয় দিবসের অতিরিক্ত ছুটিতে কক্সবাজারসহ দেশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছুটে যান করোনাকালীন ২ বছর ঘরবন্দি মানুষ। পর্যটকদের সমাগমের সুযোগে কিছু অতিলোভী হোটেল রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী ও পরিবহন সংস্থা অতিরিক্ত টাকা আদায় এবং পর্যটকদের নানাভাবে হয়রানি করেছে।
বিষয়টিকে লজ্জা, ঘৃণা এবং দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে লজ্জাজনক এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না জনপ্রতিনিধি, কক্সবাজার জেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট পর্যটন ব্যবসায়ী নেতারা।

এই ছুটিতে শুধু কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন দেশ-বিদেশের ৫ লাখের অধিক পর্যটক। মিডিয়ার বদৌলতে ব্যাপক পর্যটক আগমনের এই দৃশ্য সরাসরি দেখেছেন দেশ-বিদেশের মানুষ। এতে নতুন করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে কক্সবাজারের প্রতি। নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে দেশের পর্যটন অর্থনীতি।
এই সময়ে সাড়ে চার শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস, রেস্ট হাউজ, রেস্টুরেন্ট ও পরিবহন সংস্থাগুলোতে টার্নওভার হয়েছে কোটি কোটি টাকা। তারপরেও অতিলোভী এবং অতি মুনাফাখোর কিছু ব্যবসায়ী পর্যটকদের কাছ থেকে গলাকাটা ব্যবসা করে পর্যটক হয়রানি বিষয়টিও ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩ দিনের বাজেট নিয়ে পর্যটকরা ভ্রমণে এলেও অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া খাওয়া-দাওয়া যানবাহন ভাড়াসহ পর্যটন ব্যবসায়ীদের গলাকাটা ব্যবসার কারণে অধিকাংশ পর্যটক দুই দিনের মাথায় কক্সবাজার ছাড়তে বাধ্য হন।
কয়েকজন পর্যটক এ প্রসঙ্গে বলেন, তিন দিনে কক্সবাজার ভ্রমণ করে বিমান ভাড়া হোটেলে থাকা খাওয়ায় যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় সে টাকা দিয়ে ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া সহজে ভ্রমণ করা যায়। তাদের প্রশ, তাহলে মানুষ কেন কক্সবাজার ভ্রমণ করবে? তারা বলেন, পর্যটকদের সাথে পর্যটন ব্যবসায়ীদের দুর্ব্যবহার অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ঘৃণ্য। এটি দেশের জন্যও অপমানজনক। এর দায় এড়াতে পারেন না জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরাও।

হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির হিসাব মতে দুই লক্ষাধিক পর্যটকদের জন্য একসাথে আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে কক্সবাজারে। বিজয় দিবসের ছুটিতে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় অনেকেই হোটেলে থাকতে পারেননি। হাজারো পর্যটককে রাত যাপন করতে হয়েছে গাড়িতে, রাস্তায় অথবা আত্মীয় স্বজনের বাসাবাড়িতে। এই অতিরিক্ত পর্যটক এর চাপে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।

হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আবুল কাশেম সিকদার বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া এবং পর্যটক হয়রানির বিষয়টি দুঃখজনক। বিষয়টি তারা তদারকি করছেন বলেও জানান আবুল কাশেম সিকদার। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে টুরিস্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষ কলাতলী বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে কিছু কিছু পর্যটকদের তাদের কাছ থেকে নেয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরতও দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন জানান, অতিরিক্ত পর্যটক আগমনের সুযোগে কিছু কিছু হোটেল রেস্টুরেন্টে গলাকাটা ব্যবসা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত টাকা সংশ্লিষ্ট পর্যটককে ফেরত দেয়া হয়েছে। তবে কারো বিরুদ্ধে এপর্যন্ত শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে, পর্যটক হয়রানি বিষয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হওয়ায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সরকারের উচ্চমহল থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানা যায়।
সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে নড়েচড়ে বসেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে পর্যটক হয়রানি বিষয়টি তদন্ত ও বন্ধ করার জন্য এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা, হোটল মালিক নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এতে পর্যটক হয়রানি বন্ধে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, আমাদের দেশে পর্যটনে বিশাল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি পার্শবর্তী দেশগুলোতে পর্যটন খাত ডেভলাপ করছে। তাই আমাদের দেশের পর্যটন খাতে সেবার মানটা উন্নত হওয়া উচিত। শুধু ব্যবসা করলে হবে না, এই বিশাল সম্ভাবনা কে ধরে রাখার জন্য পর্যটন খাতে সেবার মানও বাড়াতে হবে।
তা নাহলে পর্যটকরা কক্সবাজার বিমুখ হবে, বাংলাদেশ বিমুখ হবে। এতে করে আমাদের পর্যটন খাতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তিনি বলেন, পর্যটক হয়রানির সুনির্দিষ্ট যে কোন অভিযোগ থাকলে এগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
MD Khaled Parvez ২১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৩০ এএম says : 0
এটা দেখার আসলে কেউ নাই।
Total Reply(0)
মোঃ কামরুজ্জামান ২১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৩২ এএম says : 0
এই সময়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হতো।
Total Reply(0)
হুসাইন আহমেদ হেলাল ২১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৩৩ এএম says : 0
সাধারণ পাবলিকের দুর্দশা দেখার মতো কেউ নাই।
Total Reply(0)
জাকির হোসেন ২১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৩৩ এএম says : 0
এই ধরনের গলাকাটা বাণিজ্যের তিব্র প্রতিবাদ জানাই।
Total Reply(0)
Md Belal ২১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:২৫ এএম says : 0
গত দুই বৎসর করণা মহামারীর কারণে ব্যবসায়ীদের কান্না আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে গিয়েছিল তখন তারা হাতজোড় করে পর্যটকদের কাছে কান্না করত আপনারা আসেন না হলে আমরা না খেয়ে মরবো আমাদের স্টাফদের বেতন দিতে পারব না কিন্তু এবছর সুযোগ হওয়ার কারণে ওরা গলাকেটে পর্যটকদের কাছ থেকে টাকা পয়সা আদায় করেছে এটা ঠিক না তাহলে পর্যটন শহর কক্সবাজার বিমুখ হবে মানুষ তখন না খেয়ে মরতে এই সমস্ত মৌসুমী ব্যবসায়ীদের
Total Reply(0)
Sarwar Chowdhury ২১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৩৩ পিএম says : 0
কক্সবাজারের ব্যবসায়ী এবং প্রশাসন খুব খারাপ। আমি পরিবার নিয়ে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছি। কক্সবাজার একটা ভীতিকর জায়গা। আমি আর কোনদিন যাবনা। প্রশাসনের সহযোগিতায় এটা একটা ভয়াবহ ফাঁদ।
Total Reply(0)
Sarwar Chowdhury ২১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৩৫ পিএম says : 0
স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় কক্সবাজার একটা ভীতিকর জায়গা
Total Reply(0)
আবদুল খালেক ২১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৩৫ পিএম says : 0
এটাই আমাদের আসল পরিচয়, শুধুমাত্র নিজের সার্থের জন্য আমরা নিজেদের মনমাসিকাতাকে বিকিয়ে দেই।নিজের সার্থের জন্য অপরের জীবন নিতে পারি।আর নিতি কথা বলায় আমরা মহাপনডিত। আমারা শুধুমাত্র নিজের সার্থে দেখি।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন