শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

২৬ সেনা অভ্যুত্থানে আড়াই হাজার কর্মকর্তা হত্যা

জিয়ার শাসনামল ফেসবুক স্ট্যাটাসে সজীব ওয়াজেদ জয়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক বাহিনীতে ২৬টির মতো অভ্যুত্থান আর তাতে আড়াই হাজারের মতো সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

গত মঙ্গলবার রাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন। সজীব ওয়াজেদ জয়ের স্ট্যাটাসটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো- জিয়াউর রহমানের আমলে (১৯৭৫-৮১) দেশে ২৬টির মতো সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছিল বলে বিভিন্ন ভাষ্যে জানা যায়। কেউ কেউ বলেন সংখ্যাটি ২১। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর। এই অভ্যুত্থানটি সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি তথ্য জানা যায়। বাকিগুলো ধোঁয়াশার আড়ালে। ১৯৭৭ সালের অক্টোবরের অভ্যুত্থানে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছিলেন শতাধিক সেনা অফিসার। অনেকে নিহত হয়েছিলেন অভ্যুত্থান দমাতে গিয়ে। আবার বিচারের নামে মেরে ফেলা হয় কয়েক শ সেনাকে। সব মিলিয়ে মোট সংখ্যাটি আড়াই হাজারের মতো হতে পারে।

তাদের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি সেনাকে ফাঁসি ও ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। বাকিদের মৃত্যুর কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। সেই সময় থেকে আজও তারা পরিবারের কাছে নিখোঁজ। জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক বাহিনীতে অভ্যুত্থানচেষ্টার ঘটনা ও মৃতের সংখ্যা মেলানো খুবই কঠিন। এ নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি।

প্রায় ৪৫ বছরের মাথায় এসে গত ১৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিয়ার আমলে নিহতদের তালিকা করার নির্দেশ দেন। তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এ রকম একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা কতটা কঠিন? এটি আদৌ কি সম্ভব? সেই সময়ের বেশির ভাগ প্রত্যক্ষদর্শী জীবিত নেই। আবার অনেক দালিলিক প্রমাণ নষ্ট করারও অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে গবেষণা প্রায় হয়নি বললেই চলে।
পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে নথি। এ বিষয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান করেছেন সাংবাদিক ও গবেষক জায়েদুল আহসান পিন্টু। তিনি বলেন, এটা খুব কঠিন কাজ। তবে অসম্ভব নয়। হয়তো এখনও ব্যক্তিগতভাবে কিছু দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যাবে। কিছু ঘটনার সাক্ষী ও স্বজন এখনও বেঁচে আছেন। দ্রæত কাজ শুরু করলে হয়তো এখনও সত্যের খুব কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব। তবে দেরি করলে বা আরও ১০ বছর পর করলে কিছুই মিলবে না।

জায়েদুল আহসান বলেন, কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, ওই ৫ বছরে কমপক্ষে ১৯টি অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছিল। তবে নিহতের সংখ্যা কারও কাছে এককভাবে নাই। হয়তো বিচ্ছিন্নভাবে আছে। জায়েদুল আহসান বলেন, যত দ্রুত সম্ভব একটি তথ্যানুসন্ধানী কমিশন গঠন করা দরকার। যে কমিশন ওই সময়কালের হত্যা, হত্যাকান্ড, নির্বিচার হত্যা, বিনা বিচারে হত্যা এবং বিচারের নামে প্রহসনের ট্রাইব্যুনালে হত্যা বা ফাঁসি এসব কিছুর তথ্য সংগ্রহ করবে। তথ্য সংগ্রহের উপায় হলো দলিল-দস্তাবেজ বা মৌখিক সাক্ষ্য গ্রহণ।

তিনি বলেন, দলিল-দস্তাবেজ দুই সামরিক সরকারের আমলেই (জিয়া ও এরশাদ) নষ্ট করে ফেলা হয়েছে বা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। তবে এখনও ব্যক্তিগত পর্যায়ে কারও কারও কাছে থাকতে পারে। সেগুলো আহ্বান করা ও সেই সময়ের মানুষের সাক্ষ্য গ্রহণ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, এই তথ্যানুন্ধানী কমিটিকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন করতে হবে, যাতে তথ্য চেয়ে তারা যে কাউকে তলব করতে বা সমন জারি করতে পারে। তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী বা সেনাপ্রধানও হন, তবু কমিশনে এসে তথ্য দিতে বাধ্য থাকেন। জায়েদুল আহসানের মতে, এই কমিশন দুভাবে গঠিত হতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি বা সাবেক প্রধান বিচারপতি হতে পারেন এটির প্রধান। তার সঙ্গে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিক ও গবেষক থাকতে পারেন।

আবার সংসদীয় কমিটিও হতে পারে। সেটা সংসদ ঠিক করবে। সেখানে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী থাকতে পারেন। সেটা সর্বদলীয় হতে পারে। আবার দুটি কমিটি একসঙ্গেও হতে পারে। তারা আলাদাভাবে কাজ করে একসঙ্গে বসতে পারে। তবে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, সরকার চাইলে এ রকম একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা কঠিন হবে না।

তিনি বলেন, সরকার তালিকা করতে চাইলে এটা করা কোনো ঘটনাই না। এটা খুবই সহজ। কারণ এর প্রতিটি ঘটনারই রেকর্ড আছে। সরকার চাইলে সব তথ্যই সরকার পাবে। কারণ ওই সময়ের অনেকেই তো এখনও বেঁচে আছেন। আপনার-আমার কাছে হয়তো কঠিন। আমরা অ্যাক্সেস পাব না। যাদের ফাঁসি দিয়েছে, তাদের রেকর্ড তো জেলখানাতেই আছে। লেখক ও সাংবাদিক আনোয়ার কবির বলেন, জিয়ার আমলে সশস্ত্র বাহিনীতে চলা হত্যা, গণহত্যা, গণফাঁসি নিয়ে তথ্যানুসন্ধানী কমিশন গঠনের জন্য অনেক দিন ধরেই কথা হচ্ছে। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর প্রথম এই কমিশন গঠনের দাবি ওঠে জাতীয় সংসদে। এরপর নানা সময়ে আমার বই ধরে সংসদে বিভিন্ন সংসদ সদস্য দাবি তুলেছেন। কিন্তু কমিশন গঠন হয় না, তথ্যের সন্ধানও হয় না। প্রাণ হারানো সেনার তালিকাও হয় না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Bhuiyan Manik ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:০১ এএম says : 0
বাহ সুন্দর লিখনি। পড়াশুনার স্মারক দিনদিন সমৃদ্ধ হোক।
Total Reply(0)
Jabed Hossain Talukdar ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:০১ এএম says : 0
আমার বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন ১৯৮০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে চলে আসেন আমরা কিছুটা জানি সেই ইতিহাস।
Total Reply(0)
Tanim Siddiqui ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:০২ এএম says : 0
জিয়াউর রহমান শাসনামলে সশস্ত্র বাহিনীতে কতজন মারাগেছে যেমন জানা প্রয়োজন, তেমনি পিলখানা ঘটনায় কতজন মানুষ মারাগেছে তা এদেশের মানুষের জানা প্রয়োজন।
Total Reply(0)
Akram Hossain ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:০২ এএম says : 0
সবই নির্মমতা। হবাক হতে হয় এসব ঘটনা জানতে পেরে। জাতি অনেক ইতিহাসই জানে না। জানা উচিৎ। জানানোর ব্যবস্থা করা উচিৎ। করতে হবে রাষ্ট্রকেই।
Total Reply(0)
Shahadat Shoiket ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:০২ এএম says : 0
ইদানিং কালে যেসব নির্বিচারে মানুষ হত্যা গুম ও নির্যাতনের মত ঘটনা ঘটেছে তার সুষ্ঠু সমাধান ও বিচার কত বছরে জাতি পাবে
Total Reply(0)
ইকবাল কবির ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১০:২২ এএম says : 0
আপনার ভাষ্য মতে জিয়া একজন ভয়ংকর খুনী,মনে রাখবেন জিয়ার মতো খুনীর আমলেই আপনার মা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে এসে ছিলেন,এটা কি ঠিক নয়?নিশ্চয়ই খুনী জিয়ার শাসনের সময়টা নিরাপদ ভেবেই এসেছিলেন?আর জিয়ার শাসনামলে বঙ্গবন্ধুর খুনী ফারুক -রশিদ গং দেশে ঢুকতে পারেনি।এরশাদের আমলে বঙ্গবন্ধুর খুনীরা দেশে ঢুকে রাজনৈতিক দল করে দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন,পরে বেগম জিয়ার সংসদের বিরোধী দলে ছিলেন(যদিও ওই নির্বাচনকে রাজনৈতিকদল গুলো গণনায় ধরেন না)তাই এই দেশে যাদের জন্ম এই দেশে যারা বড় হচ্ছেন তাদের চেয়ে বেশী ভাল ও দেশের বাস্তবতা আর কেউ ভাল জানেন না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন