স্বজনহারাদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে সুগন্ধা নদীর পাড়ের পরিবেশ। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লাশের সংখ্যা। আর একদিকে লাশের গন্ধ অন্যদিকে মানুষের আহাজারি। ভুক্তভোগীদের এই অসহায় আর্তনাদে শোকে ভাসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। গভীর উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি লঞ্চে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে গভীর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত বেড়ে ৪৫ জনে দাঁড়িয়েছে। আশপাশের হাসপাতাল ও ক্লিনিকে দগ্ধ অনেকের মৃত্যু হওয়ায় হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে মাঝনদীতে লঞ্চটিতে আগুন লাগে বলে জানা গেছে।
প্রাণঘাতি এই দুর্ঘটনার খবর ‘টক অব দ্যা সোশ্যাল মিডিয়া’য় পরিণত হয়। অগ্নিকাণ্ড ও আহাজারির বিভিন্ন দৃশ্য ভাইরাল হয় ফেসবুকে। হতাহতদের জন্য শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। নৌযানের "অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা" না থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকেই।
ফেসবুকে মতিউর শাওন লিখেছেন, ‘‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক দূর্ঘটনা ঘটে গেলো। সকল প্রকার নৌযানের "অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা" কাগজে-কলমে সার্ভে সনদেই উল্লেখ থাকে কেবল।বাস্তবে লঞ্চ কতৃপক্ষ/যাত্রী কেউই আগুন লাগার সম্ভাব্য বিষয়গুলোকে তোয়াক্কা করে না।লঞ্চে যাতায়াতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি,যাত্রীদের কথা বাদই দিলাম,অনেক ড্রাইভারকে (ইঞ্জিন পরিচালক) দেখেছি ইঞ্জিনরুমে বসেই সিগারেট খায়।লঞ্চের একাধিক হোটেল,কেন্টিন সবখানেই তো সিলেন্ডার গ্যাসের চুলা জ্বালানো হয়।’’
ভুক্তভোগী অসহায় এক মায়ের আহাজারি তুলে ধরে নুর মুহাম্মাদ হামিম লিখেছেন, ‘‘সবচেয়ে আহত হইছি তখন যখন এক মা বলছে "ভাই নদী থেকে উঠার সময় আমার বাচ্চাটা পরে গেছে। আমার বাচ্চা আইনা দেন।" ঐ মায়ের আহাজারিটা সহ্য করার মত ছিলো না। যারা সাতরে উঠতে পারছে তারা পাগলের মত করতেছে স্বজনদের জন্য। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের দৃশ্যটা দেখলে যে কারো চোখা তার অবাধ্য হবে। সকাল বেলা এত ভয়াবহ দৃশ্য সত্যি খুব যন্ত্রণা দেয়।এর কিছুদিন আগে তেলে কার্গোতে আগুন লাগে একই নদীতে।’’
বেলাল ফরাজি লিখেছেন, ‘‘নদীতে এত পানি থাকা সত্বেও কোন পানি কাজে আসলো না। এটা থেকেই জ্ঞানীদের শিক্ষা নেয়া উচিত,আল্লাহ সবাইকে সুস্থ্য রাখুক,প্রত্যেক টা মৃত্যু ব্যাক্তিকে আল্লাহ তার জীবনের গুনা মাফ করে দিয়েন।’’
রাইসুল রাসেল লিখেছেন, ‘‘জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ যতটা কষ্টের তার চেয়েও বেশি কষ্ট বেঁচে থাকা। তার উপর ঠাণ্ডা আবহাওয়া সেই যন্ত্রণাকে দ্বিগুণ করে তুলে। যারা মারা গেছেন তারা বরং বেঁচে গেছেন। কিন্তু কথা হল, এত বড় লঞ্চে অগ্নিনির্বাপণের কি কোনো ব্যবস্থাই ছিল না?’’
রাজু পারভেজ লিখেছেন, ‘‘সত্যি খুব দুঃখজনক ঘটনা।এ ধরনের ঘটনা মনকে ব্যাথিত করে।আল্লাহপাক তুমি মরহুমদের জান্নাত দান কর।পরিবারের সবাইকে ধর্য্য ধরার তওফিক দিও। আমীন।’’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন