উদ্বোধনের মাত্র ১০ ঘণ্টার মাথায় প্রত্যাহার করা হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নারী ও শিশুদের জন্য করা বিশেষ জোন। সৈকতের ব্যস্ততম লাবণী পয়েন্টে এ জোন করা হয়েছিল। এরপরই এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে দেশজুড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক নানা প্রতিক্রিয়ার পর বালুচরের এ জোন বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানায় জেলা প্রশাসন। গত বুধবার রাত ১০টায় জোন বাতিলের বিষয়টি জানিয়ে জেলা প্রশাসনের ফেসবুক গ্রæপে স্ট্যাটাস দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. আবু সুফিয়ান।
সেখানে লেখা হয়, জেলা প্রশাসন পর্যটকদের মতামতের ওপর সব সময় শ্রদ্ধাশীল। বিভিন্ন সময়ে পর্যটকদের মধ্যে অনেকে অনুরোধ করেছেন নারী ও শিশুদের জন্য এক্সক্লুসিভ জোন থাকলে ভালো হয়। সেই বিবেচনায় বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সিদ্ধান্তে পৃথক এলাকা চিহ্নিত করে নারী-শিশুদের জন্য এক্সক্লুসিভ জোন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এক্সক্লুসিভ জোনে যাদের ইচ্ছা হবে যাবে, আর অন্য পর্যটকরা তাদের ইচ্ছেমত ঘুরবেন।
আরও লেখা হয়, এ সংক্রান্ত সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হয়। প্রচারিত সংবাদের প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনায় বিষয়টি নিয়ে বিরূপ মতামত পাওয়া যায়। পর্যটকদের মতামতের ওপর সব সময় আমরা শ্রদ্ধাশীল, সুতরাং পর্যটকদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নারী ও শিশুদের জন্য এক্সক্লুসিভ জোন চালু রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হলো।
এদিকে কক্সবাজার সৈকতের নারী পর্যটকদের নিরাপত্তায় স্থাপিত বিশেষ জোন খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রত্যাহারের বিষয়টি সচেতনমহলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন মহলের মতে এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত আলাপ-আলোচনা করে সরকারের পলিসির সাথে সঙ্গতি রেখেই করা দরকার ছিল। এখন মহিলাদের জন্য আলাদা জোন স্থাপনের ১০ ঘণ্টার মধ্যে তা প্রত্যাহার করে নেয়া জেলা প্রশাসন ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির অদূরদর্শিতার পরিচয় বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল।
এছাড়াও হোটেল-মোটেল ও দীর্ঘ সৈকত এলাকা ঘিরে রাজনৈতিক বিবেচনায় গড়ে ওঠা চাঁদাবাজ ধান্দাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ী অপরাধ চক্রের কারণে কক্সবাজারে পর্যটন শিল্প মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে বলে মনে করছেন সচেতনমহল। পাশাপাশি দাবি উঠেছে পর্যটন জোন তদারকি বীচ মেনেজমেন্ট কমিটি ভেঙে দেয়ার।
গত সপ্তাহে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনে সন্ত্রাসী আশিক চক্রের হাত এক পর্যটক নারী ধর্ষণের ঘটনায় কক্সবাজার এর আইনশৃঙ্খলা ও পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি শূন্যের কোটায় পৌঁছে। দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে বিষয়টি।
উল্লেখ্য দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোন ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি নামে একটি কমিটি থাকলেও তা এখন দলীয় নেতা ও আমলানির্ভর একটি কমিটিতে পরিণত হয়েছে। অতীতে এই কমিটিতে হোটেল-মোটেল জোনের অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীরা সদস্য হিসেবে থাকলেও গত ১০/১২ বছরে এই কমিটিতে যাদেরকে রাখা হয়েছে তাদের অধিকাংশ আমলা এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারি দলের সদস্য। তাদের না আছে ব্যবসায়িক কোন অভিজ্ঞতা আর না আছে লাখ লাখ পর্যটক সামাল দেয়ার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা।
এই কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক হলেও সদস্য সচিব হলেন হোটেল শৈবালের ম্যনাজার। এভাবে অন্যান্য সদস্যরা সরকারি কর্মকর্তা অথবা রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারদলীয় নেতা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজির সুবাদে হোটেল-মোটেল জোন ও সৈকত এলাকা ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন অপরাধী চক্র। ওই অপরাধী চক্র বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটিকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠে দিনের পর দিন। সম্প্রতি ওই অপরাধী চক্র নরপিশাচ আশিদের হাতে হোটেল-মোটেল জোনে ধর্ষণের শিকার হয় পর্যটন নারী। অপরাধী চক্রের অপর আশিকের হাতে ধর্ষিত হয়েছে এক স্কুল ছাত্রী।
আরও জানা গেছে, ওই অপরাধীচক্র হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় বেশ কিছু হোটেল ও কটেজ জিম্মি করে রেখে সেখানে রাতদিন মাদক ব্যবসা পতিতা ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের চাঁদার অংশিদার হওয়া অথবা রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির এগুলো দেখেও যেন দেখে না। তাদের বিরুদ্ধে হয় না কোন অ্যাকশন।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, অপরাধী চক্রের হাতে সম্প্রতি খুন হয়েছেন জেলা শ্রমিক দল নেতা জহিরুল ইসলাম শিকদার ও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন যুবলীগ নেতা আব্দুল মুনাফ শিকদার। আর এই ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে জড়িত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মেয়রসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন সরকারি দলের নেতাদের কর্মী সমর্থকরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন