কিছুদিন আগে তিনি বলেছিলেন, খেলতে চান ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে। তবে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না ব্যাট হাতে। বয়সটাও তো পক্ষে নেই খুব একটা। সব মিলিয়ে শেষের ডাক শুনতে পাচ্ছিলেন রস টেইলর। চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেললেন। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং গ্রেট জানিয়ে দিলেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে আগামীকাল ভোর ৪টায় শুরু হতে যাওয়া সিরিজই টেস্ট ক্রিকেটে তার শেষ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেও পুরোপুরি অবসরে চলে যাবেন এপ্রিলে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে। থেমে যাচ্ছে তাই ১৬ বছরের বর্ণাঢ্য এক আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের। যেখানে ৩৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের সঙ্গী একগাদা রেকর্ড।
গতকাল টুইটারে ঘোষণাটি দেন নিউজিল্যান্ডের অভিজ্ঞ এ ব্যাটসম্যান। অর্থাৎ বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজই হয়ে থাকবে তার শেষ টেস্ট। এরপর অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ওয়ানডে খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়বেন টেলর। ১ জানুয়ারি থেকে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সিরিজের প্রথম টেস্টে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল। ক্রাইস্টচার্চে ৯ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট। ঘরের মাঠে ফেব্রæয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া ও মার্চে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেবেন ৩৭ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান। হ্যামিল্টনে ৪ এপ্রিল নিজের শহরে ডাচদের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেটি খেলবেন টেলর। নিউজিল্যান্ডের হয়ে সেটিই হবে তার শেষ ম্যাচ। অবসরের ঘোষণা দিয়ে করা টুইটে টেলর বলেন, ‘ঘরোয়া মৌসুম শেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণাটা দিচ্ছি আজ (গতকাল)। বাংলাদেশের বিপক্ষে আরও দুটি টেস্ট এবং অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সব মিলিয়ে ৬টি ওয়ানডে। ১৭ বছর ধরে অবিশ্বাস্য সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করা সম্মানের বিষয়।’
নিউজিল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি (৪৪৫টি)। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান তার। রান করেছেন ১৮ হাজার ৭৪, সাড়ে ১৫ হাজার রানও নেই আর কারও। তার ৪০ সেঞ্চুরিও নিউজিল্যান্ডের রেকর্ড। মার্টিন ক্রো, কেন উইলিয়ামসনদের সঙ্গে টেইলরকেও রাখা হয় নিউজিল্যান্ডের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায়। শুধু দেশের নয়, তিন সংস্করণেই আলাদা করে ১০০ ম্যাচ খেলায় বিশ্ব ক্রিকেটেই তিনি প্রথম।
২০০৬ সালের মার্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে টেইলরের আন্তর্জাতিক অভিষেকে। ওই বছরের ডিসেম্বরে অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে। ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়ানডেতে তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেন ১২৮ রানের ইনিংস, ক্যারিয়ারের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ইনিংসে করেন ৪৩ বলে ৬২। টেস্ট অভিষেক ২০০৭ সালে। এখানেও তৃতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরি উপহার দেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপর ক্রমেই তিনি হয়ে ওঠে নিউজিল্যান্ডের বড় ব্যাটিং ভরসা। তার ব্যাট থেকে আসে দারুণ সব ম্যাচ জেতানো ইনিংস। নিউজিল্যান্ডকে নেতৃত্বও দেন তিনি ১৪ টেস্ট, ২০ ওয়ানডে ও ১৩ টি-টোয়েন্টিতে।
কিছুদিন আগেই ২০২৩ বিশ্বকাপে খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও সরে দাঁড়ানোর ঘোষণাটা দিয়েই দিলেন টেলর। নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমকে টেলর বলেন, ‘এটা ভালো যে, নিজের ইচ্ছেমতো সরে দাঁড়াতে পারছি। নিজের ও পরিবারের জন্য এটাই সঠিক সময়।’ ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের শেষ টেস্টটিতেও একটি রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবেন টেলর। নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট খেলার রেকর্ডটি ভাগ করে নেবেন ড্যানিয়েল ভেট্টোরির সঙ্গে। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ২৩৩ ওয়ানডে ও ১০২ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন টেলর। তিন সংস্করণেই প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে ন্য‚নতম একশ’ করে ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েছেন টেলর। সব সংস্করণ মিলিয়ে তার ১৮,০৭৪ রান, ৪৪৫ ম্যাচ ও ৪০ সেঞ্চুরি নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ।
এ বছরের শুরুর দিকে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের জয়সূচক রানটি এসেছিল তার ব্যাট থেকেই। চোটের কারণে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে খেলতে না পারা নিয়মিত অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন টেলরকে নিয়ে বলেন, ‘রস দীর্ঘদিন দলের ম‚ল অংশ হয়ে ছিল এবং নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটকে সে উঁচুতে স্থাপন করেছে। সে বিশ্বমানের খেলোয়াড়, ব্যাট হাতে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সেরা খেলোয়াড় হয়ে ছিল। নানা সংস্করণে তার সঙ্গে অনেকগুলো জুটি গড়তে পারাটা আনন্দের ছিল।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন