শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

নির্লজ্জ নান্নু, বিব্রত বিসিবি

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

জাতীয় দলের সাবেক দুই অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও মোহাম্মদ আশরাফুলের কথার লড়াইয়ে রীতিমত তুলকালাম কা- বেঁধেছে। আশরাফুলকে নান্নু ‘দেশদ্রোহী ও ফিক্সার’ আখ্যা দেওয়ার পর দীর্ঘ এক ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আশরাফুল। স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগে ২০১৩ সালে নিষিদ্ধ করা হয় আশরাফুলকে, যিনি তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত হতেন। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে জাতীয় দলে ফেরা হয়নি আর, তবে আশরাফুল নিয়মিতই খেলছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে।
সম্প্রতি বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আশরাফুল বলেছিলেন, ক্রিকেট দলের নির্বাচক প্যানেলের সদস্যদের কাজে মেয়াদ ৩ থেকে ৪ বছর হলে ভালো হয়। এই বিষয়ে নান্নুর কাছে জানতে চাইলে একই টেলিভিশনের এক লাইভ অনুষ্ঠানে আশরাফুলকে দেশদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করেন, ‘আশরাফুলের এই কথার সাথে আমি একটা জিনিস যুক্ত করতে চাই। অস্ট্রেলিয়ার একজন প্রধান নির্বাচক কত বছর কাজ করেছে ওর বোধহয় ধারণা নেই। প্রায় ৯ থেকে ১২ বছর একনাগাড়ে কাজ করেছে। অস্ট্রেলিয়া কি ক্রিকেট থেকে পিছিয়ে গিয়েছে?’ এরপর খানিক ক্ষিপ্ত হতে দেখা যায় বর্তমান প্রধান নির্বাচককে। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলেন, ‘ওর তো বোঝানোর কথা না। যেসব খেলোয়াড় দেশদ্রোহী হয়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে নিষিদ্ধ হয়, ওদের কাছ থেকে ভালো পরামর্শ আশা করা কঠিন।’
সেই টিভি অনুষ্ঠানের ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয় আশরাফুলেরও। গতপরশু রাতে নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে লাইভে এসে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করেন আশরাফুল। সেখানে তিনি দাবি করেন, নান্নুর কারণেই তার জন্য জাতীয় দলের দরজা খুলছে না, ‘আপনার সাক্ষাৎকারেই বোঝা যাচ্ছে আপনার গুড বুকে আমি নেই বলেই এখন সুযোগ পাচ্ছি না। সেন্স ভাই আমাদের কম নেই। আল্লাহর রহমতে আমাদেরও মোটামুটি সেন্স আছে। খেলা নিয়ে আমরাও সারাদিন চিন্তা করি। ছোটবেলা থেকে এখনও ঘুম থেকে উঠে সারাদিন ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা করি। সাদাকে সাদা বলব, কালোকে কালো বলব। অন্যায় করেছি স্বীকার করি। আমার আত্মবিশ্বাস আছে বলে এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
আশরাফুলের দাবি, ফিক্সিংয়ের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করার কারণেই তিনি অনেকের অপ্রীতির পাত্র হয়েছেন, ‘আমি যদি প্রকাশ্যে স্বীকার না করতাম তাহলে হয়ত ভিন্ন চিত্র হত। তাহলে এক বছরের শাস্তি হত, হয়ত এখনও জাতীয় দলে খেলতাম। আপনাদের কাছে এখনও ক্ষমা পাইনি, আপনার কথাতে এটা বুঝা যাচ্ছে। আমার প্রকাশ্যে স্বীকার করা ভুল হয়েছে। একেকজন কিন্তু একেক জায়গায় ভুল কাজ করছেন। চোখ কান খোলা রাখলেই শুধু হবে।’
আশরাফুলের দাবি, নির্বাচক প্যানেল নিয়ে তার করা ঐ মন্তব্য নান্নুর উদ্দেশে ছিল না, ‘আমি কোনো ব্যক্তির নাম বলিনি, আমি ঐ দায়িত্বের কথা বলেছি। নান্নু ভাই লাইভে ঢুকে সরাসরি আক্রমণ করলেন আমার নাম ধরে। এটা আসলে খুব দুঃখজনক। আমি যে কথাটা বলেছি সেটা নান্নু ভাইকে নিয়ে বলিনি বা কারও নাম ধরে বলিনি। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমার মতামত বলেছি। উনি খুব সুন্দর করে অস্ট্রেলিয়ার একজনের উদাহরণ দিলেন। আমি কিন্তু উনার নাম বলিনি যে নান্নু ভাইকে সরানো উচিৎ বা এমন কিছু। আমার মনে হয়েছে নির্বাচক পদ কোনো পেশা হতে পারে না যে আমি এখানে সারাজীবন থাকব ১০-১২ বছর ধরে। এটা একটা সম্মানের জায়গা হবে, ৩-৪ বছর থাকবেন।’
এ সময় আশরাফুল বাংলাদেশের ক্রিকেটে তার অবদানের কথা তুলে ধরেন। অভিমানের সুরে তিনি বলেন, ‘নান্নু ভাই যেভাবে নাম ধরে দেশদ্রোহী, ম্যাচ ফিক্সার বললেন, এটা তো ২০১৩ সালে হয়েছে। আমি সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছি, শাস্তিও হয়েছে। যেভাবে আক্রমণ করলেন, কষ্ট লেগেছে। আমি তো উল্টাপাল্টা কিছু বলিনি। যদি বলেন আমার অবদান নেই, তাহলে তো কিছু বলার নেই। আমার কিন্তু কম অবদান নেই। আপনি যদি মনে করেন আমি কিছু করিনি, তাহলে তো দুঃখজনক। ভুল স্বীকার করার রেওয়াজ বাংলাদেশে খুব কম। ভুল করেছি, শাস্তিও পেয়েছি, সেটা অতীত হয়ে গেছে এবং আমি এখন নতুন করে শুরু করেছি। চেষ্টা করছি মরার আগপর্যন্ত যেন ভালোমত থাকতে পারি।’
আশরাফুল এ সময় নান্নুর সাথে তার অতীতের সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। এমন দাবিও করেন, নান্নুকে মাঠে পানি খাইয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে (ডিপিএল) ম্যাচ খেলার সুযোগ অর্জন করেছিলেন, ‘পুরো ম্যাচ পানি খাইয়ে আমার পরের ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিল। পানি নিয়ে দৌড়ে যেতাম, উনি চাইলেই খাওয়াতাম। পরে বললেন তুই পরের ম্যাচ খেলবি। নান্নু ভাইয়ের মাধ্যমেই আমার প্রিমিয়ার লিগে খেলা (অভিষেক)। আমি কখনও অতীত ভুলি না। অতীত সবসময় আমার মনে আছে।’
ততক্ষণে দুই সাবেক অধিনায়কের কথার লড়াই দৃষ্টিগোচর হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও (বিসিবি)। তাতে বিব্রত দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থাটি। এ বিষয়ে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস, ‘যেহেতু আশরাফুল এখন বর্তমান খেলোয়াড় আর সাবেক একজন অধিনায়ক, আমি মনে করি সরাসরি এভাবে আক্রমণ করা ঠিক হয়নি। আমি শুনেছি এটা। এটা নিয়ে আমাদের আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আমরা এটা নিয়েও বোর্ড সভাপতির সাথে আলাপ করব।’
জালাল জানালেন, তার বিভাগের অধীনে থাকা নির্বাচক প্যানেলের প্রধানের এমন বক্তব্য নিয়ে বিসিবি সভাপতির সাথে আলোচনা করা হবে, ‘কারও ব্যাপারেই এভাবে আক্রমণ করা ঠিক না। আপনি একটা পদে আছেন বোর্ডে। ঐ জায়গা থেকে এমন মন্তব্য না করাই ভালো ছিল। যেহেতু নির্বাচক কমিটি ক্রিকেট অপারেশন্সের অধীনে, আমি এটা নিয়ে আজকেও তাদের সাথে আলাপ করেছি। দেখা যাক। আমি এটা বোর্ড সভাপতির সাথে আলাপ করব।’
সামনেই বিসিএলের ওয়ানডে ফরম্যাট, যেখানে চারটি দলের স্কোয়াড সাজাবেন নির্বাচকরাই। আশরাফুল তার লাইভে দাবি করেছিলেন, নান্নুর কারণেই তিনি জাতীয় দলে ফিরতে পারছেন না। বিসিএল বা অন্য কোনো খেলার দল গঠনে ব্যক্তিগত এই দ্বন্দ্বের জের কাজ করবে কি না, এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে নিরপেক্ষতার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন জালাল, ‘আমার মনে হয় না এমন কিছু হবে। আমার মনে হয় না ব্যক্তিগতভাবে কেউ ভিকটিম হবে। যারা আসবে পারফরম্যান্সের জোরেই আসবে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Tariq ৪ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:৫৩ পিএম says : 0
asraful emono kono boro oporad koreni jetar karone take sarajibon sasti pete hobe ,personal protihingsar bepar eta
Total Reply(0)
Abdulllah ৪ জানুয়ারি, ২০২২, ২:৪৩ পিএম says : 0
Match fixing is not a minor crime. It is not only a major crime, but also a crime that the punishment of which should be for life long. All the match fixers including Ashraful not only sold themselves but they sold their country. So they should not be trusted to give a role to represent their country anymore in life. Yes, I agree that some of the players from match fixers group (who have been immature while doing the fixing) maybe considered to give permission playing domestic cricket.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন