শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

সেঞ্চুরিতেও তামীমের বিলাপ

প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৭ পিএম, ২৮ অক্টোবর, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : ২০১০ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক ইনিংসে ৮৬, সেই থেকে ইংল্যান্ডকে পেলে ছন্দময় ব্যাটিংয়ে মেতে ওঠাটা অভ্যেসে পরিনত হয়ে গেছে বাঁ হাতি ওপেনার তামীম ইকবালের! লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম ওঠাতে না পারার আক্ষেপ নিয়েই ক্যারিয়ার শেষ করতে হয়েছে ব্যাটিং জিনিয়াস শচীন টেন্ডুলকারকে। অথচ কি জানেন, লর্ডসে অভিষেক ম্যাচেই তামীমের সেঞ্চুরিতে অনার্স বোর্ডে উঠেছে এই বাংলাদেশির নাম! লর্ডসে ১০৩’র পর ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ১০৮! ইংল্যান্ডের মাটিতে, সিমিং কন্ডিশনে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি! এমন অতীতটা যার, ইংল্যান্ডকে পরিচিত কন্ডিশনে, চেনা-জানা উইকেটে পেলে প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ব্যাট তো তার কথা বলবেই। চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৭৮ রানের ইনিংসকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে না পারার কস্টটা লাঘব করেছেন মিরপুরে। গত বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনায় ২০৬ রানের ক্লাসিক ইনিংসে ম্যাচ বাঁচানোর পর টেস্ট সেঞ্চুরির অপেক্ষার অবসানে লেগেছে তার ১৮ মাস। মঈন আলীকে পর পর ২ বলে এক্সট্রা কভার এবং মিড অন দিয়ে বাউন্ডারির চুমোয় টেস্ট ক্যারিয়ারে উদযাপন করা ৮ম সেঞ্চুরিটি আবার প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তৃতীয়! ক্রিস ওকসকে এক ওভারে তিন তিনটি বাউন্ডারিতে ছন্দময় ইনিংসের আভাস দেয়া তামীম গতকাল লাঞ্চের আগেই পূর্ন করে ছেড়েছেন ফিফটি (৬৮)। সেঞ্চুরিতে লেগেছে তার ১৬৭ মিনিট। অথচ কি জানেন, সেঞ্চুরিতে নিজের জাত চেনানো ইনিংসের দিনে প্রথম রানটির জন্য তামীমকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৯টি বল! প্রথম ৪ ওভারে স্কোরকার্ডে রান মাত্র ১, তামীমের সংযমী ব্যাটিংয়ের কারণেই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইতোপূর্বের সেঞ্চুরি দু’টিতে তামীমকে খেলতে হয়েছে যথাক্রমে ১৫৭ও ১৫০ মিনিট, স্ট্রাইক রেট ওই দু’টি ইনিংসে ১০৩.০০ ও ৯৪.৭৩। সেখানে গতকাল সাবধানী শুরু ইনিংসে সেঞ্চুরিতে লেগেছে তামীমের ১৬৭ মিনিট,স্ট্রাইক রেট ৭০.৭৪!
টেস্ট ক্যারিয়ারে গড় তার ৪০.৩৫, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেখানে ৬ ম্যাচে ৬৩.২৭! টেস্ট ক্যারিয়ারে স্ট্রাইক রেট যার ৫৫.২৬,সেখানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৩.৩৪! ৬ ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরির পাশে ৫ ফিফটি! মুমিনুলের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৭০ রানে নেতৃত্বটা দিয়েছেন তিনিই। তার এমন দিনে বাংলাদেশ দল শেষ ৮ উইকেট হারিয়েছে ৪৯ রানে, এটাই মানতে পারছেন না তামীম। যে অবস্থায় রেখে এসেছিলেন দলকে, সেখান থেকে ২২০এ শেষ হয় কিভাবে ইনিংস? এই প্রশ্নই পীড়া দিচ্ছে তামীমকেÑ‘দলের বিপর্যয়কে রক্ষা করতে আসিনি এখানে (সংবাদ সম্মেলনে)। প্রথম ১০ ওভার একটু কঠিন ছিল, মাঝের ২০-২৫ ওভার ব্যাটিংয়ের জন্য একটু সহজ ছিল। একারণেই ওই সময়ে আমরা অ্যাটাকিং ছিলাম। বাউন্ডারির বলও পেয়েছি। তারপরও বিপর্যয়কে যতই ব্যাখ্যা দিতে চাই না কেন, কোনোভাবেই তা গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা হতে পারে না। আমরা কিছু ভুল শট খেলেছি। ১০০ রান বেশি করলে খেলা আমাদের হাতে থাকত।’
মঈন আলীর বল অফ স্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে যাচ্ছে, তা ধরে নিয়ে শট অফার না করে ছেড়ে দেয়ায় এলবিডাবøুতে থেমেছে তামীমের সেঞ্চুরির ইনিংস (১০৪)। ওখানেই নিজের ভুল দেখতে পাচ্ছেন তামীমÑ‘হঠ্যাৎ যেভাবে একটার পর একটা উইকেট পড়েছে, তাতে সেঞ্চুরিকে আমার কাছে স্পেশাল মনে হচ্ছে। ১৭০ রানের একটা জুটি ছিল। ওই জুটিতে যদি ৫০ রান আরও বেশি করতে পারতাম, তাহলে হয়তোবা ওই রিভার্স সুইং ওরা আরো ১০-১২ ওভার পরে পেত। তাতে দলেরই লাভ হতো। তাই বলব আমারই ভুল ছিল। আমি যদি সোজা খেলতাম, যদি শট খেলতাম যদি প্যাডেও লাগত তাহলে আউট হলেও বলার কিছু থাকতো না। সে কারণেই খারাপ লাগছে।’
চট্টগ্রাম টেস্টের মতো মিরপুরেও ইংল্যান্ড বোলাররা আদায় করেছে রিভার্স সুইং, সেখানে পর্যুদস্ত বাংলাদেশ। এটাকে অজুহাত হিসেবে দেখতে চান না তামীমÑ‘আজ( গতকাল) ৪৫ ওভারের পর বল স্পিন করা শুরু করছে। ওরা যেভাবে বল করছে রিভার্স সুইং, আমরা ওই ধরণের বল আমরা সচারচার খেলি না। তবে একটা কোনো অজুহাত হতে পারে না।’ তবে যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে ম্যাচটি প্রথম দিন, তাতে চট্টগ্রামের মতো ঢাকা টেস্টেও উপভোগ্য হয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখছেন তামীমÑ‘ভালো একটি দিক হচ্ছে আমরা আজ (গতকাল) ওদের ৩টি উইকেট নিতে পেরেছি। এ মুহুর্তে লড়াই সমান সমান। আগামীকাল (আজ) সকালে যদি আমরা দ্রæত ২ উইকেট তুলে নিতে পারি, তাহলে ম্যাচ আমাদের হাতে আসতে পারে। উইকেটে বল বেশ টার্ন করছে,তাতে কাল (আজ) সকালে ভালো একটি শুরু হবে বলে আশা করছি।’
মিরপুর টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ডকে বড় ধরনের পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে, সে হুংকারটা প্রথম দিন শেষেই দিয়েছেন তামীমÑ‘চতুর্থ ইনিংসে কিন্তু ওরা আবার ব্যাটিং করবে। তাই প্রথম ইনিংসে ২২০ রান নিয়েও আফসোসের কিছুই নেই। এখন ২২০ রান নিয়ে আমাদেরকে ফাইট করতে হবে।’

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন