বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

আবাহনীর এক ঢিলে দুই পাখি

ইতিহাস গড়া হলো না রহমতগঞ্জের

জাহেদ খোকন | প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

ঘরোয়া ফুটবলে ইতিহাস গড়া হলো না জায়ান্ট কিলার খ্যাত রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির। তাদেরকে হতাশ করে মৌসুমের টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয় করলো ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। গতকাল সন্ধ্যায় কমলাপুরস্থ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ২-১ গোলে রহমতগঞ্জকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আবাহনী। বিজয়ী দলের হয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা কোস্টারিকার ফরোয়ার্ড ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস ও স্থানীয় ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন একটি করে গোল করেন। রহমতগঞ্জের পক্ষে এক গোল শোধ দেন ঘানার ফরোয়ার্ড ফিলিপ আদজাহ। ম্যাচ জিতে দুই মৌসুম পর ফেডারেশন কাপের ট্রফি ঘরে তুললো আবাহনী। তারা ২০১৮ সালের ফাইনালে বসুন্ধরা কিংসকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে সর্বশেষ এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। টুর্নামেন্টের ৩০তম আসরে আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হলেও পরের দুই আসরে কিন্তু ফাইনালে উঠতে পারেনি। তবে ৩৩তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে তিন বছর আগের শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছে দলটি। পাশাপাশি এএফসি কাপে নিজেদের স্লট নিশ্চিত করেছে আবাহনী। এবার তাদের চোখ ট্রেবল শিরোপায়। মৌসুমের দু’টি শিরোপা এখন তাদের ঘরে। প্রিমিয়ার লিগের ট্রফি জিততে পারলেই পূর্ণ হবে আবাহনীর ট্রেবলস্বপ্ন।

অন্যদিকে ১৯৮০ সাল থেকে শুরু হওয়া ফেডারেশন কাপে রহমতগঞ্জ কখনো চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। যদিও এক মৌসুম আগে টুর্নামেন্টের ৩১তম আসরে ফাইনালে খেলেছিল তারা। ২০১৯-২০ মৌসুমের ফাইনালে বসুন্ধরা কিংসের কাছে ২-১ গোলে হেরে রানার্সআপ হয়েছিল রহমতগঞ্জ। এবারও তাদের সামনে ছিল ট্রফি জয়ের হাতছানি। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি পুরান ঢাকার দলটি। বছর দুই আগে বসুন্ধরা কিংসের কাছে স্বপ্নভঙ্গের পর এবার আবাহনীর কাছে স্বপ্নভঙ্গ হলো তাদের।

কাল দুই ব্রাজিলিয়ান রাফায়েল অগাস্তো ও ডরিয়েলটনকে ছাড়াই ফাইনাল খেলতে মাঠে নেমেছিল আবাহনী। ইনজুরির কারণে ফাইনালে খেলতে পারেননি এ দুইজন। বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে রাফায়েল ও ডরিয়েলটনের সঙ্গে কলিন্দ্রেস জাঁদুতে ৩-০ ব্যবধানে ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আবাহনী। কিন্তু ফেডারেশন কাপের ফাইনালে রাফায়েল ও ডরিয়েলটন না থাকায় শুরুতে কিছুটা এলোমেলো ছিল পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোসের দল। তবে সময়ের সঙ্গে গুছিয়ে ওঠে আবাহনী। তবে ম্যাচের শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দিয়ে আবাহনীর সঙ্গে সমান তালেই লড়ছে রহমতগঞ্জ। বিশেষ করে আবাহনী থেকে এবার রহমতগঞ্জে আসা নাইজেরিয়ান সানডে চিজোবা দুইটি গোল মিস করেছেন। একবার আগুয়ান গোলরক্ষক শহিদুল ইসলাম সোহেলকে দেখে বক্সের বাইরে থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন সানডে। রহমতগঞ্জের আরেক বিদেশি ফিলিপও প্রথমার্ধে গোলের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন। রাফায়েলে পরিবর্তে আবাহনীর অধিনায়কত্ব করা নবীব নেওয়াজ জীবন গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। তবে প্রথমার্ধের যোগকরা সময়ে (৪৫+১ মিনিট) আবাহনীকে লিড এনে দেন ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস। পরিকল্পিত আক্রমণে তিনি বাঁ পায়ের দুর্দান্ত প্লেসিং শটে গোল করেন (১-০)। কলিন্দ্রেস এই রহমতগঞ্জের বিপক্ষেই ২০১৯-২০ মৌসুমে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে বসুন্ধরা কিংসের হয়ে গোল করেছিলেন। এবার করলেন আবাহনীর জার্সি গায়ে।

এগিয়ে থেকে বিরতিতে গিয়ে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় আবাহনী। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে রাকিব হোসেন আরকেটি গোল করলে আবাহনীর শিরোপা উদযাপন ছিল অপেক্ষা মাত্র। এসময় কলিন্দ্রেসের পাস খুজে নেয় ফয়সালকে। তার শট রহমতগঞ্জের গোলরক্ষক রাকিবুল হাসান তুষার ফিষ্ট করলেও চলে যায় বক্সের মধ্যে দাঁড়ানো রাকিবের কাছে। ঠান্ডা মাথায় প্লেসিং শটে গোল করেন তিনি (২-০)। দ্বিতীয় গোল হজম করলেও হাল ছাড়েনি রহমতগঞ্জ। ৭০ মিনিটে ফিলিপ এক গোল পরিশোধ করলে জমে ওঠে ম্যাচটি (১-২)। তবে এবার আর সেমিফাইনালে মোহামেডানের বিপক্ষে ম্যাচের পূনরাবৃত্তি করতে পারেনি রহমতগঞ্জ। শেষ পর্যন্ত হারের গ্লানি নিয়েই মাঠ ছাড়ে তারা।
ম্যান অব দ্য ফাইনাল হওয়ার পাশাপাশি টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন আবাহনীর ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস। সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জিতেছেন আবাহনীর ডরিয়েলটন ও রহমতগঞ্জের ফিলিপ। চ্যাম্পিয়ন ট্রফির সঙ্গে ফেয়ার প্লে ট্রফিও জিতেছে আবাহনী। চ্যাম্পিয়ন আবাহনীকে ট্রফির সঙ্গে ৫ লাখ টাকার চেক এবং রানার্সআপ রহমতগঞ্জকে ট্রফি ও ৩ লাখ টাকার চেক দেয়া হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন