আড়াইহাজারে তিন যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে তাদের লাশ উপজেলার হাইজাদী ইউনিয়নের ইলমদী বেনজীর বাগ এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার ভোরে পুলিশ ক্ষত বিক্ষত মরদেহ গুলো উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করেছে। তাদের তিনজনকে ওই রাতের সাড়ে ৪টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ দিকে পুলিশ বলছে ছিনতাই করতে গিয়ে এরা নিহত হয়েছে। অপর দিকে নিহতদের স্বজনদের দাবী এরা লেগুনা চালক এবং ভালো মানুষ।
নিহতরা হলেন, জেলার সোনারগাঁ উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের বস্তল বৌ-বাজার গ্রামে সিরাজুলের ছেলে মফিজুল (২৬), একই এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে জহিরুল জেসনু (২৭) এবং আড়াইহাজার উপজেলার হাইজাদী ইউনিয়নের মাধবদী গ্রামের মোসলেমের ছেলে নবী হোসেন (৩০)। তবে কে বা কারা তাদেরকে হত্যা করেছে তা জানা যায়নি।
লাশগুলো উদ্ধার করে পুলিশ আড়াইহাজার উুপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার গোলাম দস্তগীর প্রিন্স তাদের তিনজনকেই মৃত ঘোষনা করেন। স্বজনদের আহাজারীতে হাসপাতালের বাতাস বারী হয়ে উঠেছে।
প্রাথমিক ভাবে এলাকাবাসি তাদেরকে ডাকাত বলে চিহ্নিত করলেও পরে নিহতদের স্বজনেরা এসে লাশ গুলো শনাক্ত করেন এবং তারা ভাল লোক বলে দাবী করেন। তারা জানান, নিহত নবী হোসেন এবং মফিজুল পেশায় লেগুনা চালক এবং জহিরুল ওরফে জেসনু লেগুনার মালিক। তারা লেগুনা দিয়ে যাত্রী আনা নেওয়া করে থাকে।
ওসি আনিচুর রহমান মোল্লা বলেন, হাইজাদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হোসেন ভুইয়া সকাল সোয়া ৬টায় আমাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছেন যে তার এলাকায় তিনজনকে ‘ডাকাত’ সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। সেখানে দুইজনকে মৃত এবং একজনকে আহত অবস্থা পাওয়া যায়। পরে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। সেখানে চিকিৎসক সবাইকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরো বলেন, এর আগে ভোর ৫টার দিকে রুপগঞ্জে অবস্থিত ফকির ফ্যাশনের শ্রমিকবাহী একটি মিনিবাস আড়াইহাজার উপজেলার সিংহদী এলাকায় আটক করে ছিনতাইয়ের চেস্টা করে এরা। পরে গার্মেন্ট শ্রমিকরা এদের আটক করে ইলুমদী বাজারে নিয়ে আসে। এই শ্রমিকদের কাছ থেকে আটককৃতদের ছিনিয়ে নিয়ে এলাকাবাসী ইলমদী বাগে নিয়ে তাদের গনপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। তবে এলাকাবাসী বলছে, শ্রমিকরা আগেই এদের মেরে ফেলেছে।
ওসি জানান, আটককৃত জহিরুলের নামে কোন মামলা নেই। তবে মফিজুল ও নবী হোসেনের নামে সোনারগাঁও থানায় একটি চুরির মামলা রয়েছে।
এলাকাবাসি জানান, যে এলাকায় তাদের লাশ পাওয়া গেছে সেখানে প্রায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তবে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় বৃহস্পতিবার ভোরে ঘটনাস্থলের আশে পাশে কোথাও কোন ডাকাতির সংবাদ পাওয়া যায়নি।
নিহত মফিজুলের মা মনোয়ারা বেগম জানান, মফিজুল ভোর ৪টার দিকে ইলমদী এলাকার শ্রমিক নেয়ার জন্য গাড়ি নিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়। তার সঙ্গে লেগুনার মালিক জেসনু ও আসে। সকালে আমরা তার হত্যার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে এসে লাশ শনাক্ত করি। আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।
নিহত জহিরুলের বন্ধু গোলজার জানান, আমরা একসাথে গাড়ির ব্যবসা করি। সে খারাপ না। তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত জহিরুলের ছোট ভাই তারেক জানান, আমার ভাই রাত চারটার দিকে লেগুনার ড্রাইভার মফিজুলের সাথে শ্রমিক নেওয়ার জন্য ওই এলাকায় যায়। আমার ভাই একজন ভাল মানুষ তাকে শত্রæতা মুলক ভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই। এদিকে সরেজমিনে এলাকায় গেলে দেখা গেছে, পুরো ঘটনাটি রহস্যভরা । পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে।
হাইজাদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হোসেন ভুইয়া বলেন, আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। নিহতরা ডাকাত কিনা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। নিহত মফিজুলের মা মনোয়ারা জানান, তার ছেলে ভোর ৪টার দিকে শ্রমিক আনার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। তার ছেলে ডাকাত নয়। মফিজুল একজন লেগুনা চালক। তার ছেলে কোন অন্যায় করেনি।
নিহত জহিরুলের বোন হেলেনা জানান, তার ভাই এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করে বিদেশ চলে যায়। ৬ মাস আগে একটি লেগুনা কিনে । তার ভাই ডাকাত না। তারা ৫ বোন ২ ভাই। এদের কান্নায় হাসপাতলের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
নিহতের ব্যবহুত লেগুনা গাড়ি ২টি পুলিশ উদ্ধার করেছে। ওসি আরো জানান, এই ব্যাপারে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। স্বজনরা মামলা দিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন