স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর ওয়ারীতে গত বৃহস্পতিবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ‘মক্কা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ নামের এক কথিত আমদানিকারকের অফিস ও গুদাম সিলগালা করা হয়। র্যাব-১ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজ আহমেদের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ওয়ারী থানার র্যাঙ্কিং স্ট্রিটের একটি আবাসিক ভবনে ফ্লোর ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ এই তথাকথিত প্রতিষ্ঠানটি সুচতুরভাবে এই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। গুদামে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের কসমেটিক পণ্য বাজারজাত করার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে, যার মধ্যে ভ্যাসলিন, ট্র্র্যাসেমি, লরিয়েল, নিভিয়া, হেড এন্ড সোল্ডার, নিওট্রিজিনা, ইয়াস, জনসনসহ আরো বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের প্রসাধনী পণ্য, বিভিন্ন পণ্যের মোড়কের বস্তা। এসব পণ্যের লেবেলে প্রস্তুতকারক দেশ হিসেবে ইউএসএ, জার্মানি, ইউকে, কানাডা, তুর্কি ইত্যাদি দেশের নাম প্রিন্ট করা। কিছু কিছু পণ্য লেবেলবিহীন ও প্রস্তুত মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ মোছা অবস্থায়ও পাওয়া যায়। ম্যাজিস্ট্রেট এসব পণ্যের আমদানি ও বিএসটিআই ছাড়পত্রসহ অন্যান্য কাপজপত্র প্রদর্শন করতে বললেও তারা এর কোনোটাই উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক রফিকুল ইসলাম এ সময় পলাতক থাকে এবং কর্মচারীদের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করে কাগজপত্রসহ হাজির হতে তলব করা হলেও সে হাজির না হয়ে বরং কিছু সময় পর তার মোবাইল বন্ধ করে দেয়। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেটের জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিষ্ঠানটির উপস্থিত তিন কর্মচারীসহ দুই ম্যানেজার জানায় যে, এসব পণ্যসমূহ সব চায়না থেকে আমদানি করা হয়। মালিক হাজির না হওয়ায় পরবর্তীতে ম্যাজিস্ট্রেট বাধ্য হয়ে বিএসটিআই প্রতিনিধির উপস্থিতিতে অফিস-কাম গুদামটি সিলগালা করে দেন এবং নমুনা পণ্য ও কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রতিবেদন দাখিলপূর্বক যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিএসটিআইকে নির্দেশ দেন।
গত দুই-তিন বছর যাবৎ তথাকথিত প্রতিষ্ঠানটির মালিক চতুরতার সাথে এ ব্যবসা করে আসছে। বিদেশী এসব নামী ব্র্যান্ডগুলোর লেবেলে প্রস্তুতকারক দেশ হিসেবে ইউএসএ, জার্মানি, ইউকে, কানাডা ইত্যাদি উন্নত দেশের নাম দিয়ে চায়না থেকে সস্তায় প্রস্তুত করে নিয়ে আসে যেগুলো খুবই নি¤œমানের। প্রতিষ্ঠানটি তার পণ্যের গায়ে আমদানিকারক হিসেবে ‘মক্কা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ এবং বাজারজাতকারী হিসেবে ‘সুন্দরবন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ নাম দিয়ে বাজরজাত করছে। এদের প্রায় সব পণ্যই শীতকাল টার্গেট করে চায়না থেকে আমদানিকৃত বা স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এসময় ইউনিলিভার বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, ‘ভ্যাসলিন হেলদি হোয়াইট’ ব্র্যান্ডটি আমেরিকায় প্রস্তুতের কোনো কার্যক্রম কখনই নেই, তাই এটা ১০০ ভাগ নিশ্চিত যে, এই পণ্যটি নকল পণ্য হিসেবে সে বাজারজাত করছে। তাই তারা ‘ভ্যাসলিন হেলদি হোয়াইট’সহ ইউনিলিভারের অন্যান্য ব্র্যান্ডের আসল পণ্য কেনার জন্য আমদানিকারক হিসেবে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের নাম লেবেলে দেখে নেয়ার পরামর্শ দেন এবং তথাকথিত এ ধরনের আমদানিকারকের পণ্য কিনে প্রতারিত না হওয়ারও পরামর্শ দেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাজারে উল্লেখিত ব্র্যান্ডসমূহের স্থানীয় ও আশপাশের দেশের প্রস্তুতকৃত পণ্য পর্যাপ্ত থাকা সত্তে¡ও ভোক্তারা উন্নত দেশের কসমেটিক পণ্যের প্রতি বেশি আগ্রহী। ভোক্তাদের এই আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক লাভের জন্য এসব জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের লেবেলে প্রস্তুতকারক হিসেবে উন্নত দেশের নাম ছাপিয়ে সস্তায় নি¤œমানের পণ্য বাজারজাত করছে। এসব পণ্য বেশিরভাগই স্থানীয়ভাবে রাতের আঁধারে তৈরি করা বা চায়না থেকে বিশেষ অর্ডারে আমদানিকৃত। এখানে উল্লেখ্য যে, আমদানি নীতি অনুসারে কোনো ব্র্যান্ডেড পণ্য আমদানি করার সময়, ব্র্যান্ড মালিকের ছাড়পত্র আমদানি নথির সাথে জমা না দিলে এবং বিএসটিআই বাধ্যতামূলক পণ্যের ক্ষেত্রে ছাড়পত্র জমা না দিলে, এসব পণ্যের কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরো কঠোর হলে ভোক্তারা এ ধরনের প্রতারণা থেকে মুক্তি পাবেন বলে বিশ^াস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন