সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলেছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের। এ পরিস্থিতিতে প্রথমে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা দেয় সরকার। পরে যত সিট তত যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে সে নির্দেশনাও কেউই মানছেন না। দাঁড় করিয়ে যাত্রী নেয়া এবং ওয়েবিলের যন্ত্রণা থেকে রেহায় পায়নি যাত্রীরা। এভাবে চলতে থাকলে গণপরিবহনে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে গণপরিবহনগুলো। স্টপেজে থামতেই হুড়োহুড়ি করে যাত্রীরা নেমে পড়ছেন। আবার একইভাবে উঠছেন। বিধিনিষেধের ধারেকাছে দেখা গেল না শহরবাসীকে। সরকারি নির্দেশকে তোয়াক্কা না করেই মাস্কহীন মানুষদের চলাফেরা রাজধানী জুড়ে। যদিও সরকার বার বার সচেতনতার বার্তা দিচ্ছে কিন্তু তাতেও হুঁশ ফিরছে না কারোরই। গতকাল রোববার রাজধানীতে চলাচল গণপরিবহনগুলোতে কোন রকমের স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যায়নি। রোববার সপ্তাহের কর্মদিবসের প্রথম দিন হওয়ায় প্রত্যেকটি যাত্রীবাহী বাসে লোকজনের চাপ বেশি ছিলো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণপরিবহনসহ সব জায়গায় বিধিনিষেধ মানার প্রবণতা সৃষ্টি করতে হবে। বিধিনিষেধ না মানলে আক্রান্তের পাশাপাশি আরও বাড়বে মৃত্যুর মিছিল। পরিস্থিতি একেবারেই লাগামছাড়া হয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞানসম্মত বিধিনিষেধ দিতে হবে। সেটিও কার্যকর করতে হবে। যদি করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঢিলেঢালা ব্যবস্থা নেয়া হয়, তাহলে সারা দেশের অবস্থা খুবই খারাপ হতে পারে। কঠোর বিধিনিষেধ চলমান থাকলেও অধিকাংশ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা কম দেখা যাচ্ছে। সব ধরনের দোকানপাট এখন খোলা। অলিগলিতে চায়ের দোকান খোলা রয়েছে। সেখানে জটলা পাকিয়ে রীতিমতো আড্ডা বসে যাচ্ছে। মাস্ক পরার বালাই নাই। অনেকেরই মাস্ক থুতনিতে। করোনা থেকে মুক্তি পেতে মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই। মাস্ক পরতেই হবে। মাস্ক পরা থাকলে সংক্রমণ কম হবে। সড়কে মানুষের অহেতুক চলাচল নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও চেকপোস্টে তল্লাশি বাড়ানো প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে গণপরিবহনে চলাচল নিয়ন্ত্রিত করা দরকার।
গতকালও কোন নিয়মই পালন করছেনা বাসের চালক ও হেলপাররা। বেশিরভাগ লোকাল বাসে দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। অধিকাংশ যাত্রীই মুখে ছিল না মাস্ক। চালক থেকে শুরু করে হেলপারদের মুখেও মাস্ক দেখা যায়নি। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতেও দেখা যায়নি কোনও গণপরিবহনে। চালকের সহকারীরা যাত্রী টেনে টেনে বাসে তুলছেন। সড়কে নেই কোনো ধরনের তদারকি। অধিকাংশ বাসে যাত্রীদের ঠাসাঠাসি করে উঠানো হচ্ছে। সব গণপরিবহনে একই অবস্থা। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ও সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা তদারকির জন্য রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত নামিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন অথরিটি (বিআরটিএ)। বিভিন্ন এলাকায় এসব ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করেন। তবে গণপরিবহন ও যাত্রীদের সংখ্যার দিক দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয় বলে জানান সাধারণ যাত্রীরা। এসময় বেশ কিছু পরিবহনকে জরিমানার আওতায় আনা হয়। পাশাপাশি মাস্ক পরিধান না করে গণপরিবহনে চলাচল করায় বহু যাত্রীদের সতর্ক করা হয়।
হারুনুর রশিদ নামের এক বাস যাত্রী বলেন, সাধারণত রোববার বাসে একটু বেশি লোকজন উঠে। ভিড়ও থাকে বেশি। সবাইকে একই সময়ে অফিসে যেতে হয় তাই বাসে ভিড় বেশি থাকে। বাসে ভিড় থাকলেও হেলপাররা ডেকে উঠায়। বিধিনিষেধ মানাতে সড়কে নেই কোনো ধরনের তদারকিও। অধিকাংশ বাসে অফিসগামী যাত্রীদের ঠাসাঠাসি করে উঠানো হচ্ছে। ঠেলাঠেলি করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। যাত্রীদের অনেকের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। সরকারের কোন নির্দেশনাই মানা হচ্ছে না। এমনকি যত সিট তত যাত্রী নিয়মও পালন করছে না বাসের চালক ও হেলপাররা। আর বাসে আগের মতোই ভাড়া বেশি নিচ্ছে। দাঁড়িয়ে যাতায়াত করলেও ওয়েবিলের যন্ত্রণা থেকে এখনো যাত্রীরা মুক্ত হতে পারছে না।
একটি বাসের হেলপার রাশেদুল বলেন, অন্যদিনের তুলনায় আজকে যাত্রী একটু বেশি। তাই যাত্রীরা উঠে যায় আমারাও নিয়ে আসি। সব সিটেই যাত্রীরা বসেন। সিট খালি না থাকলেও দাঁড়িয়ে আগের মতো যাত্রীরা বাসে চলাচল করেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গণপরিবহনগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়ম মানে না। সব আসনে যাত্রী পরিবহন করা হলেও স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে পালন করা হয় না। সরকারের নজরদারি রাখা প্রয়োজন। কিন্তু কোথাও কোনও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। #
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন