শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রাজধানীর সড়কে নৈরাজ্য

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে আশার আলো

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর সড়কে গণপরিবহনে চরম নৈরাজ্য দীর্ঘদিনের। এই নৈরাজ্যের সাথে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে পরিবহন খাত। ভাড়া নৈরাজ্য, যানজট, রাস্তায় বাস টার্মিনাল বানানোসহ নানা কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন নগরবাসী। এই দুঃসহ যন্ত্রণা যেন ঢাকাবাসীকে এখন নিত্যসঙ্গী করে ফেলেছে। এছাড়াও কিছু এলাকায় উন্নয়ন কাজের জন্য যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
এখনো ঢাকা শহরের যান চলাচল ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায় আসেনি। হাতের ইশারায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কখনো কখনো ট্রাফিক পুলিশকে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে লাঠি হাতে পরিবহন নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে হয়। কোন কোন সময় যানজট দীর্ঘ হলে ট্রাফিক পুলিশকে বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়। ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পার্কিং সুবিধা নেই। ফলে মূল সড়কে যত্রতত্র যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহনগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়। সেই সমস্যা সমাধানে সকল যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে নির্ধারিত স্থান চিহ্নিত করে পাকিং ব্যবস্থা করা উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। তবে রাজধানীর যানজট ও গণপরিবহন নৈরাজ্য কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নানা উদ্যোগে আশার আলো দেখছেন নগরবাসী। রাজধানীতে বসবাসকারী কয়েকজন জানান, গণপরিবহনের শক্তিশালী সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে এই খাতে শৃঙ্খলা আসবে না। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজিসহ নানা কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে। তাদের নিয়ন্ত্রণের কথা বলেন সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চলছে অগণিত ব্যাটারিচালিত রিকশা। এসব রিকশা গলির রাস্তাগুলোতে যানজট সৃষ্টি করছে। কখনো কখনো এসব রিকশা প্রধান সড়কে এসে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত মাসিক চাঁদার ভিত্তিতে চলছে এসব বাহন। ১৯৮৬ সালে প্যাডেলচালিত রিকশার লাইসেন্স দিয়েছিল সিটি করপোরেশন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি আবার নতুন করে প্যাডেলচালিত রিকশার লাইসেন্স দেয়া শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। রাজধানীর সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মান্ডা, বাসাবো, মানিকনগর, রামপুরা, বাড্ডা, শ্যামপুর, ডেমরা, মোহাম্মদপুর, বছিলা, উত্তরা, ভাটারা, ময়নারটেক, মিরপুর, পল্লবী এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বেশি।
ইতোমধ্যে বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় কাঁচপুর থেকে ঘাটারচর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে ঢাকা নগর পরিবহন। যানজট নিরসনে সরকারের বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা সাথে সমন্বয় রেখে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও বৃহৎ কর্মকাণ্ড এবং ভবিষ্যৎ কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে চলেছে। বিদ্যমান সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন, নৌ-পথে সম্ভাব্য যাত্রাপথে যান চলাচলের ব্যবস্থা, নতুন ১৮টি ওয়ার্ডসহ দক্ষিণ সিটির অন্যান্য ওয়ার্ড ঘিরে সড়ক অন্তর্জাল সৃষ্টি, ঢাকা শহরের উপর যানবাহনের চাপ কমানো, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং গণপরিবহনের শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পক্ষ থেকে বলা হয়, যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং করেন অনেকে। এতে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এই অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য গুলশান-বনানীতে পরীক্ষামূলক ভাবে ৫০০টি গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য অন স্ট্রিট স্মার্ট পার্কিং এর ব্যবস্থা করা হবে। ঢাকা শহরের রিকশার কোনো ডাটাবেজ নেই। তাই অনিবন্ধিত রিকশা তুলে দিয়ে নতুন করে কিউআর কোডযুক্ত দুই লাখ রিকশা নিবন্ধন দেয়া হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্র জানায়, রিকশা, ভ্যান, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি ও টালি গাড়ি ইত্যাদি ৭ লক্ষাধিক অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করে থাকে। অযান্ত্রিক যানবাহনকে শৃঙ্খলায় আনতে দীর্ঘ ৩৪ বছর পর নিবন্ধন ও নবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রমে ১ লাখ ৯০ হাজার ৮টি অযান্ত্রিক যানবাহনকে ইতোমধ্যে নিবন্ধন এবং সেগুলোকে ট্যাগ সংবলিত ডিজিটাল নম্বর প্লেট প্রদান করা হয়েছে।
গণপরিবহনে শৃঙ্খলার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ২১ নম্বর যাত্রাপথে বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর যাত্রাপথে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা নগর পরিবহন যাত্রা শুরু করে। ঢাকা নগর পরিবহনে যাত্রীরা নির্দিষ্ট স্থান হতে বাসে ওঠতে পারছে আবার নির্দিষ্ট জায়গায় বাস হতে নামতে পারছে। ফলে যাত্রীদের যেমন অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে না তেমনি হয়রানি ছাড়াই তারা যাতায়াত করতে পারছে। তারই ধারাবাহিকতায় আরও ৩টি নতুন যাত্রাপথে ঢাকা নগর পরিবহন চালু করার লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রম পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর নতুন ৩ যাত্রাপথে পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু করবে। বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রমের আওতায় শহরের মধ্যে চলাচলকারী ঢাকা নগর পরিবহন এর বাসগুলো রাখার জন্য সায়েদাবাদ বাস প্রান্তের মধ্যে একটি অংশের উন্নয়ন করা হচ্ছে। সেখানে নগর পরিবহনের প্রায় ৩০টি বাস রাখা যাবে বলে জানায় ডিএসসিসি।
ঢাকা শহরে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থাকলেও শহরের মধ্যে চলাচল করা বাসগুলোর জন্য কোন টার্মিনাল নেই। এ কারণে রাস্তার মাঝেই বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করানো ও বাস পার্ক করে রাখা হয়। এতে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। এজন্য রেশনালাইজেশন কার্যক্রমের আওতায় শহরের ৪টি স্থানে ৪টি নতুন আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে কামরাঙ্গীরচরের তেঘরিয়া ও কাঁচপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দুটি নতুন আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণ করবে। আন্তঃজেলা বাস প্রান্তগুলোর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে ঢাকার বাইরের বাসগুলোকে আর ঢাকা শহরের মধ্যে ঢুকতে দেয়া হবে না। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও চারদিকে দখলের দৌরাত্ম্যে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। সড়ক দুটির উভয়পাশে ৫ ফুট করে মোট ১০ ফুট হাঁটার পথ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, যানজট নিরসনে সরকারের বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা সাথে সমন্বয় রেখে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন, নৌ-পথে সম্ভাব্য যাত্রাপথে যান চলাচলের ব্যবস্থা, ঢাকা শহরের উপর যানবাহনের চাপ কমানো, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং গণপরিবহনের শৃঙ্খলার জন্য বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রম। বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রমের আওতায় আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। মূল সড়কে যত্রতত্র যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহনগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়। সেই সমস্যা সমাধানে আমরা সকল যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে নির্ধারিত স্থান চিহ্নিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, অনেকেই যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং করেন। এতে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এই অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য গুলশান-বনানীতে পরীক্ষামূলক ভাবে ৫০০টি গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য অন স্ট্রিট স্মার্ট পার্কিং এর ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া ঢাকা শহরে ২৮ হাজার রিকশার লাইসেন্স দেয়া ছিল। কিন্তু এখন প্রায় দশ লাখের বেশি রিকশা চলছে। এগুলো শৃঙ্খলার মধ্যে নেই, কোনো ডাটাবেজ নেই। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগের অনিবন্ধিত রিকশা তুলে দিয়ে নতুন করে কিউআর কোডযুক্ত দুই লাখ রিকশা নিবন্ধন দেব।###

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন