স্বাস্থ্যবিধি ও ভাড়া আদায় উভয়েই সমস্যা গণপরিবহনে। যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়ে উপেক্ষিতই রয়ে গেলো স্বাস্থ্যবিধি। সকলশ্রেণির গণপরিবহনে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু কোন নির্দেশনাই কাজে আসছে না। এতে যাত্রী, চালক ও সহকারী সকলের বাধ্যতামুলক মাস্ক পরিধান করা। জীবাণুনাশক ছিটিয়ে জীবাণুমুক্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ঠেকাতে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা দিয়েছিলো সরকার। পরে অবশ্য মালিক-শ্রমিকদের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে তা থেকে সরে এসে যত সিট তত যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে সে নির্দেশনাও রয়ে যায় শুধু কাগজে কলমে। কোন গণপরিবহনে তা মানা হয় না। যত আসন তত যাত্রীর বদলে যত খুশি তত যাত্রী নিয়েই চলাচল করছে গণপরিবহনগুলো। বিষয়টি নিয়ে কারোরই নজরদারি নেই।
গতকাল রাজধানীর সড়কগুলোতে গণপরিবহনগুলোতে কোন রকমের স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যায়নি। এমনকি যত সিট তত যাত্রী নিয়মও পালন করছেনা বাসের চালক ও হেলপাররা। বেশিরভাগ লোকাল বাসে দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। অধিকাংশ যাত্রীই মুখে ছিল না মাস্ক। চালক থেকে শুরু করে হেলপারদের মুখেও মাস্ক দেখা যায়নি। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতেও দেখা যায়নি কোনও গণপরিবহনে। চালকের সহকারীরা যাত্রী টেনে টেনে বাসে তুলছেন পুরনো অভ্যাসেই। সব গণপরিবহনে একই অবস্থা।
রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন জেলায় চলাচলরত গণপরিবহনে দেখা যায়, শর্তাবলীর মধ্যে শুধুমাত্র মাস্ক পরিধানের বিষয়টি সামান্য অনুসরণ করলেও অন্যান্য শর্তাবলী মানা হচ্ছে না। বেশিরভাগ পরিবহনে আসনভর্তি করে যাত্রী বোঝাইয়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চালাচ্ছে। সরকার গণপরিবহনের বর্ধিত ভাড়া আদায়ের নির্দেশনা দিলেও কোন কোন গণপরিবহনে ৩০০ থেকে ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কোন রুটের যাত্রীবাহী বাসেই মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। নেয়া হচ্ছে অধিক ভাড়া। গাবতলী থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত ৮ নম্বর বাসে নিয়মিত যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। নির্ধারিত বর্ধিত ভাড়ায় আদায়ের কথা থাকলেও তা আদায় করা হয়েছে। ফার্মগেট, মতিঝিল, গুলিস্থান নিয়মিত ১০ টাকার ভাড়া আদায়ের স্থলে কোন কোন বাসে এর চেয়ে বেশি আদায় করতে দেখা গেছে।
দুরপাল্লার রুটেও একই চিত্র। সেখানে যাত্রীদের পকেট থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৩৯৫ কিমি ১ টাকা ৮০ পয়সা প্রতি কিমি হিসাবে ভাড়া হওয়ার কথা ৭১১ টাকা। কিন্তু নন-এসি সাধারণ গাড়িগুলোতে নেয়া হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকা। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির দূরত্ব ২৭২ কিমি, ভাড়া হওয়ার কথা ৪৮৯ টাকা ৬০ পয়সা। নেয়া হচ্ছে ৬২০ টাকা। অতিরিক্ত নিচ্ছে ১৩০ টাকা ৪০ পয়সা। ঢাকা থেকে বান্দরবানের দূরত্ব ৩২৩ কিমি ভাড়া হওয়ার কথা ৫৮১.৪০ টাকা কিন্তু নেয়া হয় নন-এসি গাড়িতে ৭৮০ টাকা। অতিরিক্ত নিচ্ছে ১৯৮.৬০ টাকা।
ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটির দূরত্ব ৩০৫ কিমি ভাড়া হওয়ার কথা ৫৪৯ টাকা কিন্তু নেয়া হয় নন-এসি গাড়িতে ৭৮০ টাকা। ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব ২৪২ কিমি ভাড়া হওয়ার কথা ৪৩৫ টাকা ৬০ পয়সা। নেয়া হচ্ছে ৫৭০ টাকা। অতিরিক্ত নিচ্ছে ১৩৪ টাকা ৪০ পয়সা। ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল হয়ে রাজশাহীর দূরত্ব ২৪৩ কিমি, ভাড়া হওয়ার কথা ৪৩৭ টাকা ৪০ পয়সা। নেয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা। অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে ১৬২ টাকা ৬০ পয়সা। ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে খুলনার দূরত্ব ২২২ কিমি, ভাড়া হওয়ার কথা ৩৯৯ টাকা ৬০ পয়সা। নেয়া হচ্ছে ৬৫০ টাকা। অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে ২৫০ টাকা ৪০ পয়সা। এভাবেই রাজধানী থেকে জেলাগুলোতে চলাচলকারী সকল যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
শাহ আলম নামের এক বাস যাত্রী বলেন, ছুটির দিনেও বাসে ছিলো অনেক ভিড়। কিন্তু সব বাসে উঠতে পারি না।
বাসে সিট না থাকলে বাধ্য হয়েই দাঁড়িয়ে যেতে হয়। স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়না কোন বাসেই। এখন আবার বেশি ভাড়া নেয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে। বাসের ভাড়া ও স্বাস্থ্যবিধি মানার সমস্যা থেকে আমরা কবে যে মুক্তি পাবো জানি না। আমরা যারা বাসে চলাচল করি তাদের কষ্টের শেষ নেই।
সকালের অফিস সময়ে যে পরিমাণ যাত্রী থাকে সে পরিমাণ গণপরিবহন নেই। যে কারণে আসনের চেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করতে হয়। যাত্রীরাও বাধ্য হয়ে পরিবহনে উঠে পড়েন। সরকারের কাছে আমরা দাবি করেছিলাম সব আসনে যাত্রী পরিবহনের। সরকার সেই দাবির অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু এরপরও অনেক পরিবহনে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়া হয়। যাত্রীসহ পরিবহন চালক ও সহকারীদের সুরক্ষা দিতে আমরা এরইমধ্যে সবাইকে টিকার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে এসব কথা বলে দায় সেরেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, কেউ সাধারণ যাত্রীদের কথা বিবেচনা করেন নি। সব আসনে যাত্রী পরিবহন করা হোক, কিন্তু তাতে যাতে স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে পরিপালন করা হয়। সেদিকে সরকারের নজরদারি রাখতে হবে। কিন্তু কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে করোনা মহামারি আরও ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকার একচেটিয়া নীতি অবলম্বন করে ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। দূরপাল্লার পরিবহনগুলোতে স্বল্প দূরত্বের জন্য বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। দূরপাল্লার রুটে কিলোমিটার চুরি করা হচ্ছে। ###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন