মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

নেছারাবাদে অভাবের তাড়নায় প্রতারকের খপ্পরে পড়ে ১৮ দিনের সন্তান বিক্রি

বিক্রির পুরো টাকা বুঝে পাননি বাবা মা

নেছারাবাদ(পিরোজপুর)উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১:২৫ পিএম

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার দুর্গাকাঠি গ্রামে অভাবের তাড়নায় ১৮ দিন বয়সি একটি দুধের শিশুকে বিক্রি করে দিয়েছেন এক দম্পতি। ওই হতভাগা দম্পত্তির স্বামী পরিমল বেপারি(৫০) মাত্র ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকায় দালালের মাধ্যমে সন্তানটি বিক্রি করেছেন। তবে সন্তান বিক্রির মাত্র দশ হাজার টাকা ছাড়া আর একটি টাকাও হাতে পাননি তিনি। একই গ্রামের বিজন হালদার এবং রনজিৎ কুমার মন্ডল হতভাগা দম্পত্তির স্বামি পরিমলের অভাবের সুযোগ নিয়ে তাকে ফুসলিয়ে সন্তান বিক্রির মধ্যস্থা করেছেন। সন্তান বিক্রির ওই দশ হাজার টাকা বাদে অবশিষ্ট টাকা পকেটাস্থ করেছেন মধ্যস্থকারিরা। বিক্রি হয়ে যাওয়া শিশু সন্তানটির পিতা পরিমল তার স্ত্রী কাজল সহ স্থানীয় একাধিক লোক এ কথা বলছেন। গেল ১৫ দিন পূর্বে ঢাকায় বসবাসকারি একটি ধর্ণাঢ্যবান পরিবার একটি গাড়ী নিয়ে এসে রনজিৎ এবং বিজনের কাছে টাকা পরিশোধ করে তারা বাচ্চাটি নিয়ে গেছেন। তবে কাদের কাছে বাচ্চাটি বিক্রি করা হয়েছে তাদের নাম ঠিকানা কিছুই জানেননা ওই অসহায় দম্পত্তি। বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

অসহায় পিতা পরিমল বলেন, আমি খুবই গরীব। আমার জায়গা জমি কিছুই নেই। অন্যর একটি পরিত্যক্ত ঘরে স্ত্রী এবং চারটি ছোট ছোট সন্তান নিয়ে বসবাস করি। আমি ও আমার স্ত্রী মানুষের কাছে হাত পেতে খাই। অভাবে ঘরে গেল কিছু দিন আগে একটি কণ্যা সন্তান আসে। এমনিতেই সংসার চালানো দায়। তার উপর আবার একটি সন্তান। অভাবের কথা শুনে বিজন এবং সন্তোষ মন্ডলের সহযোগীতায় ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় আমি আমার ১৮ দিনের শিশু সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছি। সন্তান বিক্রির সব টাকা হাতে পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে পরিমল আরো বলেন, সব টাকা একই গ্রামের বিজন হালদার এবং রনজিৎ মন্ডলের কাছে জমা আছে। তারা মাত্র আমাকে দশ হাজার টাকা দিয়েছে। এখন টাকা চাইলে বিজন জানায়, তোমাকে পরে জমি কিনে দিব। টাকা দিয়ে কি করবা।

পরিমলের স্ত্রী কাজল বেপারি বলেন, সন্তানটি জন্মদানের পর আমি অসুস্থ ছিলাম। ওর মুখখানাও দেখতে পাইনি। আমি সুস্থ হয়ে স্বামীর কাছে জেনেছি বিজন আর রনজিতের সহযোগীতায় আমার স্বামী সন্তানটি বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে সে টাকা এখনো হাতে পাইনি। কাজল আরো বলেন এখনো সন্তানের কথা মনে পড়লে আমার বুকটা কেদে ওঠে।

ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য অসিম বলেন, ঘটনাটি শুনেছিলাম। আমার স্ত্রী অসুস্থ তা নিয়ে ব্যস্ত আছি। আর কিছু জানিনা।

ওই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য জহর বলেন, পরিমল তার ওয়ার্ডের লোক। সে ও তার স্ত্রী খুবই সহজ সরল লোক। তাদের প্রকৃত ঠিকানা ভান্ডারিয়া। সে সাত আট বছর পূর্বে আমাদের এলাকায় আসে। তখন আমি তাদের দুরবস্থা দেখে এলাকার একটি ভাঙ্গা পরিত্যক্ত ঘরে থাকতে দিয়েছি। তার অভাবের সুযোগ নিয়ে বিজন এবং রনজিৎ বাচ্চাটি বিক্রি করতে উৎসাহিত করেছে। বিজন খুবই খারাপ প্রকৃতির লোক। বিজন প্রকৃত অর্থে কোন কাজবাজ করেনা। সে এলাকায় মাদক ব্যবসা সহ দালালি কাজকর্ম করে বেড়ায়। এখন পরিমলের সন্তান বিক্রির টাকায় বিজন দুর্ঘাকাঠি বাজারে একটি গার্মেন্টস বস্ত্রালয়ের দোকান দিয়েছে।

সমেদয়কাঠি ইউপি চেয়ারম্যান মো: হুমাউন বেপারি বলেন, বিজন এলাকার একজন বড় প্রতারক। সে আসলে মাদক বিক্রেতা। মাদক নিয়ে একবার ধরাও পড়েছিল। মাদকের পাশাপাশি এলাকায় বড় প্রতারক হিসেবে পরিচিত। সে এলাকার রনজিৎ কে সাথে অভাবি পরিমলকে ফুসলিয়ে তার দুধের শিশুকে বিক্রি করে টাকা হাতিয়েছেন। বিজন এবং রনজিৎ মন্ডল এলাকার দুইজন বড় প্রতারক।

নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, আমি একটু অসুস্থ আছি। বিষয়টি এই শুনলাম। খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন