বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

মেহেদি রঙে রাঙানো জয়

প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৬ পিএম, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬

ইংল্যান্ড : ২৪৪ ও ১৬৪
বাংলাদেশ : ২২০ ও ২৯৬
ফল : বাংলাদেশ ১০৮ রানে জয়ী।
শামীম চৌধুরী : স্টোকসকে বোল্ড আউটে হতভম্ব করে সাকিবের স্যালুট! উইকেট উদযাপনের এমন দৃশ্য এর আগে দেখেছে কেউ? জয়টা যখন হাতের কাছে, তখন উদযাপনে এমন অভিব্যক্তি তো হাততালি পাবেই। ১১ বছর আগে ইংল্যান্ড সফরে ইংল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে ইংল্যান্ডের সাবেকদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য, বাংলাদেশকে টেস্ট এরিনা থেকে বাদ দেয়ার মতো দম্ভোক্তিÑ সাকিবের স্যালুটটি যে তাদের উদ্দেশেই! ক্রিকেট নামের খেলা জন্ম দেয়া এই ক্রিকেট দেশটিকেই চরম শিক্ষা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। যাদের কাছে ইতোপূর্বের ৯ টেস্টে তিনদিনে হার বাংলাদেশের ৪টি, ইনিংস ব্যবধানে হার ৩টিÑ অফ স্পিনার মিরাজ ম্যাজিকে (১২/১৫৯) সেই ইংল্যান্ডকে তিন দিনে দিয়েছে হারিয়ে দিয়ে সে কি উৎসব! তৃতীয় দিনের খেলা শেষ হতে তখনো বাকি ১২ মিনিট, তার আগেই শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে প্রস্তুত পুরস্কার বিতরণী মঞ্চ!
টেস্টে বাংলাদেশের সেরা জয় উদযাপনে ২২ গজি পিচকে ঘিরে মুশফিকুরদের নৃত্যের তালে নেচেছে পুরো বাংলাদেশ। টেস্টে বাংলাদেশের আগের ৭টি জয়ের ৫টি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, ২টি ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওই ৫টি জয়ে বীরত্ব প্রকাশ পেলেও তা ছিল প্রত্যাশিত, ২০০৯ সালে গেইল, চন্দরপল, স্যামুয়েলসদের বিদ্রোহে জোড়াতালি দেয়া দলটিকে হোয়াইট ওয়াশেও ছিল না তেমন গর্ব। ক্রিকেটের বনেদি, দাম্ভিক ইংল্যান্ডকে হারাতে পারার আনন্দটাই যে আলাদা। ১৫ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমে কি ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখেই না পড়তে হয় বাংলাদেশ দলকে ? নিয়মিত টেস্ট খেলতে অভ্যস্ত দলটি না জানি বাংলাদেশকে ছিড়ে কুটে খায়? এ শঙ্কা তো ছিলই, নিয়মিত সেরা বোলারদের না পাওয়ায় টেস্টে ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে ২০ উইকেট নেয়ার ক্ষমতা আদৌ নেই বলে বাংলাদেশ স্পিনারদের প্রকারান্তরে দিয়েছিলেন তাতিয়ে হেড কোচ হাতুরুসিংহে!
চতুর্থ ইনিংসে ২০৯’র বেশি রান তাড়া করে জেতার অতীত নেই ইংল্যান্ডের। সে কারণেই ২৭২’র চ্যালেঞ্জে কুকদের ফেলে দিয়ে নির্ভারই ছিল টীম ম্যানেজমেন্ট। সকালে তাড়াহুড়া ব্যাটিংয়ে ১৪৪ রান যোগ করতে বাংলাদেশের ৭ উইকেট শেষ হয়ে যাওয়ায় ছিল আক্ষেপ। ১৯ এবং ৭৮ রানের মাথায় মুশফিকুর-রিয়াদের দু’দুটি ক্যাচ ড্রপে শঙ্কাটা হয়েছিল তীব্র। হঠাৎ রিদম ফিরে পাওয়া ইংল্যান্ড ওপেনিং জুটির ১০০ তে স্তব্ধ হওয়ার উপক্রম বাংলাদেশ সমর্থকরা পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিলেন ম্যাচের আশা। তবে টী ব্রেকের পর অন্য এক বাংলাদেশ আবির্ভূত মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে! ব্রেকের পর প্রথম বলে ব্রেক থ্রু মিরাজের লো বলে ডাকেট বোল্ড! সেই যে শুরু, মাত্র ৭০ মিনিটে ছিন্ন ভিন্ন ইংল্যান্ড, ৬৪ রানে হারিয়েছে ১০ উইকেট! টেস্টের প্রথম দিনে মাত্র ৪৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে যে বিভীষিকা দিনে পীড়া দিয়েছে বাংলাদেশ, তার চেয়েও ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে বড় বিভীষিকা দেখল বিশ্ব! ভয়ংকর এক স্পেলে (১৪.৩-২-৫০-৬) অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রথম ২ স্পেলে মার খেয়ে চতুর্থ স্পেলে ভয়ংকর সাকিব এক ওভারে স্টোকস, আদিল রশিদ, জাফর আনসারীÑএই তিন তিনটি শিকারে ইংল্যান্ডের সব প্রতিরোধ দিয়েছেন ভেঙে। ফিনকে এলবিডাব্লুতে ফিরিয়ে দিয়ে অবশিষ্ট উৎসবটা মিরাজকে নিয়ে করেছে বাংলাদেশ।
জিততে জিততে চট্টগ্রাম টেস্টে ২২ রানে হারের কষ্টটা এতোটাই পেয়েছে যে,ঢাকা টেস্টে জয়ের তাগিদে জিদটা একটু বেশিই গেছে চেপে। ঢাকা টেস্টকে সামনে রেখে এ প্রত্যয়ই ব্যক্ত করেছিলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। চেয়েছিলেন চট্টগ্রামের মতো স্পিন বান্ধব উইকেট, পেয়েছেন আরো বেশি কিছু উপহার। চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষিক্ত অফ স্পিনার মেহেদী তার নিজের রঙে রাঙিয়েছেন টেস্ট। অভিষেক ইনিংসে ৬ উইকেটে নিজের আগমনী বার্তা দিয়ে ঢাকা টেস্টকে অরো বেশি বিয়ে বাড়ি উৎসবে দিয়েছেন রাঙিয়ে!
কি হয়নি ঢাকা টেস্টে? প্রথম ইনিংসে মাত্র ২২০’র পুজি নিয়ে ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো আড়াইশ’র নিচে বেধে ফেলে লিডটা ২৪’র বেশি নিতে দেয়নি সফরকারীদের মুশফিকুররা। ২৭২’র চ্যালেঞ্জে ফেলে সেখানে ১৬৪এ ইংল্যান্ডকে অল আউট করেছে মিরাজ, সাকিব। ক্যারিয়ারের প্রথম ২ টেস্টে ৫ উইকেটের ইনিংসে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে নিজের নামটি লেখানো মিরাজ ঢাকা টেস্টে ২ ইনিংসে ৬টি করে শিকারে রচনা করেছেন ইতিহাস। ১৯ বছর ৫ দিন বয়সে এমন সাফল্যে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১৯ উইকেটে ১১ বছর আগে বাঁ হাতি স্পিনার এনামুল জুনিয়রের সাফল্যকে (১৮ উইকেট) গেছেন ছাড়িয়ে। টেস্ট ক্যারিয়ারের অভিষেকেই সিরিজ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন। ইংলিশ দর্প চূর্ণ করা মিরাজেই মেহেদীর রঙে রঙীন মিরপুর টেস্ট!
প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার অভিনন্দন
সফররত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে ঐতিহাসিক বিজয়ের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ১০৮ রানে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে।
প্রেসিডেন্টের অভিনন্দন
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ সফররত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে ঐতিহাসিক জয়লাভ করায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট গতকাল এক অভিনন্দন বার্তায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল এই জয়লাভ করায় দলের খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানান। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ দলের এই জয়ের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে প্রেসিডেন্ট আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অভিনন্দন বার্তায় দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করায় সকল খেলোয়াড়, কোচ, দলের কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)’র কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টকে সকলকে অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহ্সানুল করিম প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে বলেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়দের টীম স্পিরিট ও তাদের অসাধারণ নৈপুণ্য দেখে গোটা জাতি গর্বিত।’ শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থনের কারণেই এ ঐতিহাসিক সাফল্য এসেছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত মেয়াদে (১৯৯৬-২০০১) বাংলাদেশ বহু প্রতীক্ষিত টেস্ট ও ওয়ানডের মর্যাদা লাভ করে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিজয়ের এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
খালেদা জিয়ার অভিনন্দন
ক্রিকেটের পরাশক্তি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ে বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল এক অভিন্দন বার্তায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, কোচিং স্টাফ, কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানান খালেদা জিয়া।
অভিনন্দন বার্তায় তিনি বলেন, এই জয় বাংলাদেশ ক্রিটের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। পরাশক্তি ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ক্রিকেটের এই অভিজাত ফরমেটে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিল বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা। তাদের কঠোর পরিশ্রম, মনোযোগ ও দেশপ্রেম আজ বাংলাদেশের জন্য এই অবিস্মরণীয় জয় এনে দিয়েছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে আগামী দিনে বাংলাদেশই হবে বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Jabbar ৩১ অক্টোবর, ২০১৬, ১০:৫৮ এএম says : 0
congratulation Bangladesh cricket team, Specially Mehedi
Total Reply(0)
tania ৩১ অক্টোবর, ২০১৬, ১১:৪৪ এএম says : 0
thanks to sakib for the Salute
Total Reply(0)
Najmul Hasan ৩১ অক্টোবর, ২০১৬, ৪:১৩ পিএম says : 0
তিন ফর ম্যাটে এক নাম্বার হবে বাংলাদেশ! সে দিন বেশি দূরে নয়।বাংলাদেশ অনেক ভাল ভাল ক্রিকেটার আছে, বেশ বেশি খেলার সুযোগ পেলে বাংলাদেশ অনেক ভাল করবে।তখন আমাদের ইন্ডিয়া বা অস্ট্রিয়ার কাছে অনরোদ করতে হবে না খেলার জন্য, ওরা আমাদের কাছে অনরোদ করবে খেলার জন্য।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন