শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

অভিবাসন ঠেকাতে ইংলিশ চ্যানেলে সেনা!

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০২২, ১১:৫৯ এএম

ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে আশ্রয়প্রার্থীদের আগমন ঠেকাতে সেনা মোতায়েনের নীতি গ্রহণ করেছে ব্রিটিশ সরকার৷ পার্লামেন্টে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তবে সরকারে ভিতরে ও বাইরে এ নিয়ে সমালোচনা চলছে৷

ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে অভিবাসীদের ফ্রান্স থেকে যুক্তরাজ্য যাওয়া থামছে না কোনোভাবেই৷ ২০২১ সালে ২৮ হাজারের বেশি অভিবাসী সমুদ্র পেরিয়ে দেশটিতে পৌঁছেছেন৷ ঝুঁকিপূর্ণ এই প্রবণতা অব্যাহত আছে ২০২২ সালেও৷ এমন অবস্থায় ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা দিয়েছে, পরিস্থিতি সামলাতে এবার তারা ইংলিশ চ্যানেলে সেনা নিয়োগ করবে৷

১৭ জানুয়ারি পার্লামেন্টে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলের জমা দেয়া নতুন নীতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে৷ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্যাটেল জানিয়েছেন, ‘‘অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে আমাদের চ্যানেল রক্ষার অভিযানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে৷'' তবে এই পদক্ষেপকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন না অনেক বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদরা৷

সামরিক সদস্যদের যুক্ত করতে ২০২০ সাল থেকেই চেষ্টা করছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল৷ পার্লামেন্টে জমা দেয়া প্রতিবেদনে তিনি বলেছেন, ‘‘কোনো বিভাগ এককভাবে চ্যানেল পাড়ি দেয়ার মতো জটিল ইস্যুটি সামলাতে পারবে না৷ এমন অবস্থায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করাই সঠিক সিদ্ধান্ত৷ বলতে গেলে সম্মিলিতভাবে সীমান্ত রক্ষা করতে সরকারের গোটা ব্যস্থাকেই আমরা এখানে যুক্ত করছি৷''

পার্লামেন্টে এই নিয়ে বিতর্কে রক্ষণশীল দলের ফিলিপ ডেভিস বলেছেন বিপজ্জনক পারাপার ঠেকানোর ‘‘সহজ উপায় হলো নৌকাগুলোকে ফ্রান্সের জলসীমায় ফেরত পাঠানো৷'' তার মতে এর মাধ্যমে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম ‘অভিবাসীদের কাছে নিস্ফল প্রমাণে' খুব বেশিদিন সময় লাগবে না৷

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলও তার উত্তরে বলেছেন, ‘‘এটিই সরকারের নীতি৷'' আর এজন্যই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷ অভিবাসীদের নৌকাগুলোকে ফেরত পাঠানোর কৌশল ও প্রযুক্তি এরই মধ্যে পরীক্ষিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷

তবে পুশব্যাক বা ফেরত পাঠানোর নীতির সমালোচনা করে আসছে অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংগঠন ও ফ্রান্স সরকার৷ পুশব্যাক ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও নীতিবিরোধী৷ গত সপ্তাহে ইইউ এর স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিশনার ইলভা জোহাসনও এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন৷

এদিকে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের প্রতিনিধিত্ব করা ট্রেড ইউনিয়নগুলোর মাধ্যমে জানিয়েছেন তারা অভিবাসীদের বহনকারী নৌকা ফেরত পাঠাবেন না৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও বলেছে তারা সম্ভাব্য পুশব্যাক কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে না বরং সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সহায়তা দিবে৷

অনিয়মিত উপায়ে আসা অভিবাসীদের তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর একটি বিতর্কিত পরিকল্পনাও গত বছর হাজির করেছিলেন প্রীতি প্যাটেল৷ সেই পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, কোন আশ্রয়প্রার্থী যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করলে তাদেরকে আফ্রিকার কোনো দেশে বা দেশটির অধীনে থাকা বিভিন্ন দ্বীপে স্থানান্তর করা হবে৷

বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ‘‘আউটসোর্সিং প্রক্রিয়া এবং যাদের আমাদের দেশে থাকার কোনো আইনী ভিত্তি নেই, তাদের সরিয়ে দেয়ার সব সুযোগগুলো সরকার বিবেচনায় রাখছে৷'' এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চলমান বলে জানিয়েছেন তিনি৷ তবে কোনো দেশের নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি৷ বলেছেন, দেশ কোনটি, ‘‘সেটি কোন বিষয় নয়৷'' মূলত যুক্তরাজ্যের বর্তমান সরকার এমন একটি ব্যবস্থা নিতে চায় যাতে অবৈধ উপায়ে দেশটিতে আগমন আশ্রয়প্রার্থীদের কাছে কোনোভাবেই আকর্ষণীয় না হয়৷

ইংলিশ চ্যানেল হয়ে অভিবাসন বন্ধে সামরিক সদস্যদের নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিলেও এ নিয়ে সরকারের ভিতরেই মধ্যেই মতবিরোধ রয়েছে৷ এই কৌশলের সঙ্গে একমত নন সরকারের কয়েকজন নীতি নির্ধারকও৷ ডিফেন্স সিলেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান টবিয়াস এলউড তাদের একজন৷ তিনি মনে করেন এটি তাড়াহুড়ো করে নেয়া সিদ্ধান্ত যা সামরিক বাহিনীর জন্য বড় ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে৷ তার মতে সামরিক বাহিনীর জন্য এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ অনেক ইস্যু আছে৷ বিশেষ করে যখন ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া তাদের শক্তি বাড়িয়ে চলছে বা চীনের নীতি মোকাবিলার মতো বিষয় আছে৷

লেবার পার্টির ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট্টে কুপার বলেছেন, চ্যানেলে টহল দেয়ার জন্য ২০১৯ সালেই নৌবাহিনীকে যুক্ত করেছে সরকার৷ তাদের ব্যবহৃত দুইটি নৌযান অভিবাসীদের নৌকাগুলোকে বাধা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, যার পেছনে সরকারের খরচ সাত লাখ ৮০ হাজার পাউন্ড৷

লেবার পার্টির ওয়েবসাইটে দেয়া বিবৃতিটিতে তিনি বলেন, ‘‘চ্যানেল পারাপারে প্রাণাহানি ও অপরাধী চক্রের মুনাফা ঠেকাতে ফরাসি সরকারের সঙ্গে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে৷'' সামরিক বাহিনী যুক্ত করার ফলে কী পরিবর্তন আসবে, বিরোধী দলীয় এই নেতা সরকারের কাছে সেই ব্যাখ্যা দাবি করেছেন৷

কুপার বলেন, ইংলিশ চ্যানেল হয়ে অভিবাসন ঠেকাতে এখন পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ বা কৌশল নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার সেগুলো বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সমালোচিতই শুধু নয়, এমনকি অবৈধও৷ অনুমতি ছাড়া ইংলিশ চ্যানেলে ফরাসি জলসীমায় ব্রিটিশ সামরিক জাহাজের উপস্থিতিতে কূটনৈতিক উত্তেজনাও তৈরি করতে পারে৷ সব মিলিয়ে এই পদক্ষেপ মোটেও ফলপ্রসূ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উপর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আস্থা হারিয়েছেন কীনা, সরকারের নেয়া সবশেষ পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে তার কাছে এই জবাব চেয়েছেন তিনি৷

ব্রিটেনে শরণার্থী ও অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংস্থা রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এনভার সলোমোনও সামরিক সদস্যদের যুক্ত করার সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন৷ তিনি এক টুইটে এই সিদ্ধান্তকে ‘প্রধানমন্ত্রীর টিকে থাকার মরিয়া পদক্ষেপ' হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷ তিনি বলেন, সামরিকায়ন মোটেও ফলপ্রসূ হবে না, বরং যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ ও মানবিক সহায়তা দেয়া প্রয়োজন৷ ‘‘একটি স্বচ্ছ, মানবিক ও কার্যকর আশ্রয় ব্যবস্থা তৈরি করবে এমন কোন সমাধান খুঁজে পেতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে,'' বলেন তিনি৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন