অবশেষে আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা পাঠাতে সম্মত হয়েছেন ইউরোপীয় ক‚টনীতিকরা। মঙ্গলবার নরওয়ের অসলোতে তালেবান প্রতিনিধিদলের সাথে সাক্ষাতের পর তারা এই সম্মতি দেন। ২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর এটি ছিল ইউরোপে তালেবানের প্রথম সরকারি সফর। গোষ্ঠীটি ক্ষমতায় ফিরে আসার পর আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দেয় পশ্চিমারা। ফলে দেশটির মানবিক পরিস্থিতির দ্রæত অবনতি ঘটে। ইতোমধ্যেই সেখানে খরা এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির ফলে লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধা এবং দুর্দশার শিকার।
ইউরোপীয় ক‚টনীতিকরা তালেবানদের সাথে বৈঠকে কী শর্ত দিয়েছেন, সেই প্রসঙ্গে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের এক অধিবশেনে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গাহর স্টোর বলেছেন, তালেবানের বৈঠক গুরুতর এবং অকৃত্রিম বলে মনে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি যে, আমরা মার্চে মেয়েদের স্কুলে ফিরে যাওয়া দেখতে চাই, ১২ বছরের বেশি বয়সীদেরও। আমরা মানবিক কার্যক্রম দেখতে চাই।’
আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার ইইউ-এর প্রতিশ্রæতিকে স্বাগত জানিয়ে আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের একটি টুইটের প্রতিক্রিয়ায় আফগানিস্তানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশেষ দূত টমাস নিকলাসন টুইটারে লিখেছেন, তিনি সারা দেশে ছেলে ও মেয়েদের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন, মার্চ থেকে যেগুলোর শিক্ষাবর্ষ শুরু হবে।
অনুষ্ঠিত এ সপ্তাহের আলোচনাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দিকে একটি পদক্ষেপ হিসাবেও স্বাগত জানিয়েছে তালেবানরা। তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবারের আলোচনার ফাঁকে বলেন, ‘আমাদেরকে নরওয়ের এই সুযোগ প্রদান করাটাই একটি অর্জন, কারণ আমরা বিশ্বের সাথে মঞ্চ শেয়ার করেছি।’ তিনি বলেন, ‘এই বৈঠকগুলো থেকে আমরা আফগানিস্তানে মানবিক, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি।’
তবে, এখন পর্যন্ত কোনো দেশ তালেবানের মৌলবাদী শাসনকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাহায্য দেওয়ার আগে তালিবানরা কীভাবে শাসন করতে চায়, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। এরমধ্যে ইউরোপের এই পদক্ষেপ অস্বস্তিতে ফেলেছে পশ্চিমা দেশগুলোকে। এ বিষয়ে নরওয়ে জোর দিয়ে বলেছে যে, এই আলোচনা তালেবানের বৈধতা বা স্বীকৃতির প্রতিনিধিত্ব করে না।
নরওয়েজিয়ান প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি জানেন যে, অসলোর বৈঠকের কারণে অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন। তবে এটি আফগানিস্তানে মানবিক বিপর্যয় এড়াতে প্রথম পদক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানে দশ লাখ শিশু অনাহারে পড়ার ঝুঁকিতে, ছেড়ে যাওয়া কোনো বিকল্প নয়। বিশ্বের সাথে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে যেমনটি এটি রয়েছে।’
এর আগে, নরওয়েজিয়ান স্বরাষ্ট্র্র সচিব হেনরিক থুন মঙ্গলবার তালেবান প্রতিনিধি দলের সাথে আলোচনার আগে নরওয়েজিয়ান বার্তা সংস্থা এনটিবিকে বলেন, ‘আমরা সুস্পষ্ট দাবিগুলো রাখতে যাচ্ছি, যেগুলো আমরা অনুসরণ করতে পারি এবং দেখতে পারি যে, সেগুলো পূরণ হয়েছে কিনা।’
উল্লেখ্য, অসলোর বৈঠকে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির নেতৃত্বে তালেবান প্রতিনিধিদল ফরাসী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা বার্ট্রান্ড লোথোলারি, ব্রিটেনের বিশেষ দূত নাইজেল ক্যাসি এবং নরওয়েজিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র : ডন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন