স্ট্রোক কি?
সাধারণত রক্তনালী দুর্ঘটনার কারণে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে বা হারিয়ে গেলে তাকে স্ট্রোক বলে। এটা যে কারো ক্ষেত্রে যে কোন সময়ে হতে পারে। আমাদের শরীরে রক্তভা-ার হৃৎপি- থেকে রক্ত বিভিন্ন নালীর মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে। মস্তিষ্কেও কিছু নালীর মাধ্যমে রক্ত পরিবাহিত হয়। রক্ত সরবরাহ বা পরিবহনের সময় যদি কোন কারণে ব্যাঘাত ঘটে বা নালিকাগুলো ফেটে যায় তখনই স্ট্রোকের সৃষ্টি হয়। যখনই এটা ঘটে তখনি মস্তিষ্কের কোষগুলো অক্সিজেনের অভাবে মরে যেতে থাকে। সাথে সাথে মস্তিষ্কের আক্রান্ত স্থানের কাজগুলো বিনষ্ট হতে থাকে যেমন স্মৃতি হারিয়ে যাওয়া বা মাংসপেশির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা।
একজন ব্যক্তি স্ট্রোকে কতটুকু আক্রান্ত হয়েছে সেটা বুঝা যায় তার মস্তিষ্কের কোন জায়গায় স্ট্রোক হয়েছিল এবং সেখানে ক্ষতের পরিমাণ কতখানি তা দেখে। এটা স্ট্রোকের পরে এমআরআইতে ধরা পড়ে।
উদাহরণস্বরূপ কারো অল্প পরিমাণে স্ট্রোক হলে তার সামান্য কিছু সমস্যা যেমন হাতে বা পায়ে অস্থায়ীভাবে দুর্বলতা দেখা যেতে পারে। কেউ বড় ধরনের স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তার স্থায়ীভাবে দেহের এক পাশ অবশ হয়ে যেতে পারে, কথা বলার সক্ষমতা হারিয়ে যেতে পারে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, একজন স্ট্রোক রোগীর স্ট্রোকের পরে প্রথম ২-৩ সপ্তাহ ঝুঁকি থাকে পুনরায় স্ট্রোক করার, এ সময় তাই রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হয়। এরপর রোগীকে সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থা (মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিম এপ্রচ) যেমন- মেডিসিন, অকুপেশনাল থেরাপি, ফিজিওথেরাপি, স্পিচ এবং ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, প্রয়োজনে কাউন্সেলিং প্রদান করা হলে ৩-৪ মাসের মধ্যে ৯০-৯৫ ভাগ উন্নতি আসে।
স্ট্রোকের ধরনঃ
স্ট্রোক প্রধানত দুই ধরনের হয়। যেমন-
১) ওংপযবসরপ ঝঃৎড়শব:
রক্ত নালীর ভিতর দিয়ে রক্ত পরিবহনের সময় যদি কোন রক্তজমাট বাধা সৃষ্টি করে তখনই তাকে ওংপযবসরপ ঝঃৎড়শব বলে। এই কারণে রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছায় না। এই ধরনের স্ট্রোকের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি। প্রায় শতকরা ৮৭ ভাগ স্ট্রোক এই ধরনের হয়ে থাকে।
২) ঐবসড়ৎৎযধমরপ ঝঃৎড়শব:
মস্তিষ্কের ভিতরে দুর্বল কোন রক্ত নালী ফেটে গেলে বা ছিদ্র হয়ে গেলে তাকে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক বলে। এক্ষেত্রে রক্ত মস্তিষ্কের ভিতরে বা আশেপাশে ছড়িয়ে যেতে পারে। তাছাড়া চাপ সৃষ্টি করে কোন অংশ ফুলে যেতে পারে, মস্তিষ্কের কোষ বা টিস্যুসমূহ ক্ষয়ে যেতে পারে।
৩) ঞৎধহংরবহঃ ওংপযবসরপ অঃঃধপশ (ঞওঅ):
এছাড়াও আরেক ধরনের স্ট্রোক দেখা যায়। যখন মস্তিষ্কে রক্তসরবরাহ স্বল্প সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায় এবং তা ২৪ ঘণ্টারও কম সময় স্থায়ী হয় তাকে ট্রান্সেমিক ইস্কেমিয়া এটাক বলে। এটা মস্তিষ্কে কোন স্থায়ীভাবে ক্ষতি সৃষ্টি করে না তবে তারা স্ট্রোক করার ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকি হিসেবে সংকেত প্রদান করে। সুতরাং কেউ এতে আক্রান্ত হলে কোনভাবেই অবহেলা করবেন না।
স্ট্রোকের প্রধান লক্ষণসমূহঃ
স্ট্রোকে আক্রান্ত হবার পরে সাধারণত যে যে উপসর্গগুলো দেখা যায় সেগুলো হল-
হঠাৎ দেহের এক পাশের মুখ, হাত অথবা পা দুর্বল কিংবা অবশ হয়ে যাওয়া।
হঠাৎ করে বিভ্রান্তিতে ভোগা, কথা বলতে বা কোন বিষয় বুঝতে অসুবিধা অনুভব করা।
হঠাৎ করে এক চোখ কিংবা দুই চোখ দিয়ে দেখতে অসুবিধায় পড়া।
হাঁটতে অসুবিধা হওয়া, মাথা ঘোরা, ভারসাম্য অথবা সমন্বয় হারিয়ে যাওয়া।
হঠাৎ করে কোন কারণ ছাড়াই মারাত্মক মাথা ব্যথা অনুভূত হওয়া।
লেখক: শ ম ফারহান বিন হোসেন
ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপিসট
অকুপেশনাল থেরাপি বহির্বিভাগ
সেন্টার ফর দ্যা রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্যা প্যারালাইজড (সিআরপি)
মিরপুর, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৬৮৫৬৫৬১৯৯
ই-মেইলঃ ভধৎযধহথপৎঢ়@ুধযড়ড়.পড়স
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন