রাজধানীর কুড়িল থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরত্বে স্থায়ী প্যাভিলিয়নে অনুষ্ঠিত ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসর শেষ হতে যাচ্ছে আজ। প্রতিবছর শেষ সময়ে এসে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ব্যবসায়ীদের বাড়ানোর প্রস্তাব থাকলেও এবার দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় এ বাণিজ্য মেলার সময়সীমা আর বাড়ছে না। তাই রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শন কেন্দ্রের এ মেলার পর্দা নামতে যাচ্ছে।
বাণিজ্য মেলার পরিচালক ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ জানান, নতুন পরিসরে নতুন জায়গায় আয়োজিত বাণিজ্য মেলা নিয়ে আয়োজক এবং ব্যবসায়ীরা খুশি। তবে অন্যবার ব্যবসায়ীরা মেলা বাড়ানোর আবেদন করলেও এবার করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় তারা কোনো আবেদন করেননি। ফলে যথাসময়েই শেষ হচ্ছে বাণিজ্য মেলা। আমরাও চাচ্ছি মেলার সময় আর না বাড়ুক। তবে সফলভাবেই মেলা শেষ হচ্ছে।
এদিকে মেলায় স্টল পাওয়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হলে তাদের হতাশার কথা জানিয়েছেন। মেলার শুরুতে সরকারি ছুটির দিন ছাড়া দর্শনার্থী ও ক্রেতা পাওয়া যায়নি। এছাড়াও নতুন স্থায়ী ভবন হওয়ায় যে পরিমাণ মানুষজন কৌতুহল বশত ভবন দেখতে এসেছেন সে পরিমাণ ক্রেতা পাওয়া যায়নি। তবে ব্যতিক্রম মন্তব্য করেছেন দেশীয় পণ্যের স্টলের বিক্রয় কর্মকর্তারা তাদের দাবি মেলায় আকর্ষণ বাড়াতে সব পণ্যে দেয়া হয়েছে বিশেষ ছাড়। পাশাপাশি হোম ডেলিভারিতে ফ্রি ঘোষণা করায় সারা পাওয়া গেছে বেশ। তবে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি তিন দফায় বিধি-নিষেধ জারি করে সরকার।
বিধি-নিষেধে বাণিজ্য মেলা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু উল্লেখ না থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলা চালু রাখেন আয়োজকেরা। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে মেলা প্রাঙ্গণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় কর্তৃপক্ষ। মাস্ক না পরা ও স্বাস্থ্যবিধি ভাঙায় জরিমানা করা হচ্ছে নিয়মিত। এসব কারণে দর্শনার্থীরা ছিলেন চাপের মুখে। বিধিনিষেধের প্রভাবে তুলনামূলক দর্শনার্থী ও ক্রেতা হয়নি। এতে বিক্রি হয়নি পণ্য। ফলে প্রতি ব্যবসায়ী হতাশার কথা জানিয়েছেন।
মেলায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছালাউদ্দিন ভূঁইয়া জানান, পূর্বাচলের নতুন ঠিকানায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শন কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের বাণিজ্য মেলা। মেলায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল ও ১৫টি খাবারের দোকান রয়েছে। তাদের সবাই শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। তবে বিধিনিষেধ থাকায় অনেকেরই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। তাছাড়া ব্যবসার চেয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা জরুরি হিসেবে মেলা সফলভাবে শেষ হতে যাচ্ছে।
ঢাকা সুইটস অ্যান্ড বেকারীর মালিক আব্দুর রহিম জানান, মেলায় স্থানীয় লোকজনের অংশগ্রহণ ছিলো বেশি। এতো বছর ঢাকায় হওয়াতে গ্রামের লোক তেমন হতো না। এবার সবদিক দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় শহরের চেয়ে গ্রামের লোকজনই বেশি হয়েছে।
রূপগঞ্জ সদর ইউপি সদস্য মোরশেদ আলম জানান, মেলাকে প্রানবন্ত ও আলোচিত করে রেখেছে সেভয় নামীর ব্র্যান্ডের আইসক্রিম কোম্পানি। ওদের স্টলে ক্রেতা বিক্রেতা নেচে নেচে আইসক্রিম ক্রয়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমনকি ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার পেয়েছে বেশি। পাশাপাশি তুর্কির লাইট, ১৩০ টাকার পণ্য, শীতের কাপরের স্টল, এমা কফি, কারাপন্য, যমুনা, আরএপএল ও গাজী গ্রুপের পণ্য বিক্রি ছিলো তুলনামূলক বেশি।
এছাড়াও বিধিনিষেধের প্রভাবে মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা কম থাকায় টিকেট বিক্রিতেও লক্ষ্য পূরণ হয়নি বলে জানিয়েছেন মীর ব্রাদার্সের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আবিদ হাসান হৃদয়। তিনি জানান, যে অর্থ খরচ করে ইজারা নিয়েছেন তা উঠানো যায়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন