রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের সরবরাহ স্বল্পতার কারণে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় গ্রাহকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেক পরিবার সারাদিনের খাবার রান্নার জন্য শুধু এক ঘণ্টা সময় পেয়ে থাকে। আর এটাও সাধারণত খুব ভোরে। এছাড়া এমনও হয় অনেক পরিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের চুলায় জ্বালাতে পারেন না। এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম বাড়ানো তাদের জন্য তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে জানান বাসিন্দারা। অন্যদিকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের।
গ্যাসের দাম পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধির পক্ষে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বিশেষ করে খুচরা পর্যায়ের গ্রাহকদের জন্য। প্রতিমন্ত্রী এই মন্তব্য এমন সময়ে করেছেন যখন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে দ্বিগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।
এর আগে ১২ জানুয়ারি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, কারিগরি কারণে আগামী ১২ থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১০ দিন প্রতিষ্ঠানটির অধিভুক্ত এলাকার মধ্যে গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করবে।
তিতাসের ওয়েবসাইট অনুসারে, প্রতিষ্ঠানটির অধিভুক্ত এলাকার মধ্যে রয়েছে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর ও মুন্সিগঞ্জ। আর এসব এলাকায় তিতাস গ্যাসের ২৮ লাখেরও বেশি গ্রাহক রয়েছে। ১০ দিন অতিবাহিত হলেও সঙ্কট আগের জায়গায়ই রয়ে গেছে। অনেক এলাকায় তা আরও চরম আকার ধারণ করেছে।
সারা রাজধানীজুড়ে গ্যাসের সমস্যা থাকলেও পূর্ব রাজাবাজার, জিগাতলা, মোহাম্মদপুর, আদাবর, ভাটারা, বাড্ডা, বনশ্রী, মিরপুর, পল্লবী, গেন্ডারিয়া, জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা এলাকার বাসিন্দারা গ্যাস সরবরাহ সঙ্কটে সবচেয়ে বেশি ভুগছেন।
জানুয়ারিতে খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে প্রস্তাব দেয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো। এছাড়া তাদের প্রধান গ্যাস সরবরাহকারী পেট্রোবাংলাও পৃথকভাবে বাল্ক পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়।
বিইআরসি যদি বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব গ্রহণ করে তাহলে রান্নার জন্য দুই চুলার সংযোগে ব্যয় ৯৭৫ টাকা থেকে বেড়ে দুই হাজার ১০০ টাকা এবং এক চুলার ব্যয় ৯২৫ টাকা থেকে বেড়ে দুই হাজার টাকা হবে। এ প্রস্তাবের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পেশ করা ছাড়া তার মন্ত্রণালয়ের কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে জ্বালানি বিভাগকে ভর্তুকি হিসেবে ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আকারে গ্যাস কিনতে আমাদের ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত খরচ বহন করতে মন্ত্রণালয়কে বলেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেটে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম সাত ইউএস ডলার থেকে বেড়ে ৪৭ ইউএস ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, যদিও প্রস্তাবে খুচরা পর্যায়ে গ্যাসের দাম ব্যাপক বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম পাঁচ থেকে ১০ শতাংশের বেশি বাড়বে না। এদিকে রাশিয়া ও ইউক্রেন যদি যুদ্ধে জড়ায় তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিজস্ব সম্পদ অনুসন্ধান না করে আমদানি নির্ভরতাই ব্যয়বহুল আর সঙ্কটময় করে তুলছে জ্বালানি খাতকে। এবারের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ার পেছনে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বাড়াকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে জ্বালানি বিভাগ। যদিও এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, কেবল ৫ শতাংশ শর্ট মার্কেট থেকে কেনা হয়। সেটা অতি উচ্চমূল্যে কেনা হয় কিন্তু এর জন্য সামগ্রিকভাবে গ্যাসের মূল্য এতটা বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকরা নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন