বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

বাণিজ্য সুবিধা আদায়ে আমলানির্ভর না হওয়ার পরামর্শ

সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআই সভাপতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৮ এএম

দর কষাকষির দুর্বলতার কারণেই বিশ্ব বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ। গতকাল রোববার মতিঝিলে চেম্বার ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রহমান। এ সময় আন্তর্জাতিক ফোরামে বাণিজ্য সুবিধা আদায়ে দর কষাকষিতে আমলানির্ভর না হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। তাদের পরিবর্তে আইনজীবী ও অর্থনীতিবিদদের কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়-জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান বলেছেন- কর দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। আপনারা হয়রানির কথা বলেন, কিন্তু লিখিত অভিযোগ করেন না কেন? তাহলে কী ব্যবসায়ীরা কর ফাঁকি দেন? এর উত্তরে রিজওয়ান রাহমান বলেন, ট্যাক্স দিতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হন এটা এনবিআরও জানে। হয়তো তারা স্বীকার করেন না। এটা প্রধান কার্যালয় থেকেই হচ্ছে। নালিশ করলে কাজ হয় না, সে কথা বলবো না। কিছু কিছু কাজ হয়। তবে বেশিরভাগ সময় কাজ হয় না।
তিনি বলেন, সব ব্যবসায়ী ট্যাক্স ফাঁকি দেন, এটা বাজে কথা। কিছু ব্যবসায়ী ট্যাক্স ফাঁকি দেন। সব ব্যবসায়ী ট্যাক্স ফাঁকি দেন যদি আপনি বলেন, তাহলে ব্যবসায়ীরা কাল বলবেন সব সরকারি কর্মকর্তা ঘুস নেন। আপনি একজনের জন্য সমগ্র কমিউনিটিকে খারাপ বলবেন না।
এর আগে দেশে ট্যাক্সের হার বেশি উল্লেখ করে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে ট্যাক্সের হার ৩০ শতাংশ। অথচ এশিয়ায় ট্যাক্সের গড় হার ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গ্লোবালি ট্যাক্সের গড় হার ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে ট্যাক্সের হার ২৯ শতাংশ। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ডে ২০ শতাংশ। এ সময় ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রগ্রেসিভ হারে ৫ শতাংশ এবং সাড়ে ৭ শতাংশ ট্যাক্স কমানোর সুপারিশ করেন এই ব্যবসায়ী নেতা। সেই সঙ্গে ট্যাক্স দেওয়ার পদ্ধতিও সহজ করার দাবি জানান।
দেশে শিক্ষিতদের ৪৭ শতাংশ বেকার বিবিএস’র এমন তথ্য তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য আমরা সবাই অস্থির হয়ে যাই। সবাই ঢালাওভাবে এমবিএ করছি, পিএইচডি করছি। যেই ফিল্ডে আমি পিএইচডি করছি, সেই ফিল্ডে এক্সপার্টিস কতোটা আছে সেটা জানা দরকার। ব্লু ইকোনমির সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিমত দেন ডিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, আমাদের ৬৬৪ কিলোমিটার ফিশিং ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু আমরা এক্সেস পাই মাত্র ৬০ কিলোমিটার। মানে ১০ শতাংশও নয়। আমাদের বড় বড় জাহাজ প্রয়োজন। এই সেক্টরে একটা হেভি ইনভেস্টমেন্ট প্রয়োজন। এখানে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত। ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল যেটা আমরা জিতেছি, সেখানে আমরা একটি ইকোনমিক জোন করতে পারি।
সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআই সভাপতি সমসাময়িক অর্থনীতি বিষয়ক ১০টি বিষয়বস্তুর ওপর বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ২০২২ সালে ডিসিসিআই’র কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, এ বছর ঢাকা চেম্বার সিএমএসএমই, বেসরকারি বিনিয়োগ ও এফডিআই, রফতানি বহুমুখীকরণ, সমুদ্র অর্থনীতি, দক্ষতা উন্নয়ন, ডিজিটাল এনগেজমেন্ট, কর ব্যবস্থাপনা এবং এলডিসি উত্তরণ বিষয়ের ওপর অধিক হারে গুরুত্বারোপ করবে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, কোভিড মহামারির কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশেষ করে সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়টি আরো সহজ করা প্রয়োজন। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার জন্য আমাদের মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে আরও বেশি বিনিয়োগে এগিয়ে আসার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সমুদ্র অর্থনীতিকে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হিসেবে উল্লেখ করে তিনি জানান, আমাদের জিডিপিতে এ খাতের অবদান রয়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ এবং এ সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য একটি কার্যকর রূপকল্প প্রণয়নের দাবি জানান ডিসিসিআই সভাপতি।
রিজওয়ান রাহমান বলেন, এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে বেশ প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে, এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পাশাপাশি পিটিএ এবং এফটিএ স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নেগোসিয়েশনের দক্ষতা আরও বাড়ানো জরুরি। সেই সঙ্গে এফটিএ’র উপর আমাদের অধিক হারে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বিশেষ করে বিদ্যমান করকাঠামোর প্রতিবন্ধকতা নিরসন ও যুগোপযোগীকরণ, ক্রস-বর্ডার বাণিজ্য সম্প্রসারণে নীতি সহায়তা প্রদানের উপর জোরারোপ করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।
তিনি উল্লেখ করেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে আমাদের বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল ডিজিপি’র ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং ২০২১ সালে এফডিআই’র পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বেসরকারি বিনিয়োগ এবং এফডিআই বৃদ্ধিতে করপোরেট কর কাঠামোর সংস্কার, দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে সব ধরনের সেবা প্রদান নিশ্চিত করা একান্ত অপরিহার্য।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, একমাত্র অটোমেশনই পারে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্যান্য খাতে সব ধরনের দুর্নীতি রোধ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে। তিনি আরও বলেন, এলডিসি উত্তরণের পর আমাদের রফতানিমুখী পণ্যের উপর শুল্ক হার বর্তমানের চেয়ে ৬-৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে এখন থেকে আমাদের পণ্যের বহুমুখীকরণের সঙ্গে সঙ্গে বাজার সম্প্রসারণের উপর মনোযোগী হতে হবে। এছাড়া রফতানি বৃদ্ধিতে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারের প্রতি আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, কোভিড মহামারি থাকার পরও ২০২১ সালে আমাদের বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৪৩ শতাংশ এবং পণ্য রফতানি, রেমিট্যান্স এবং বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে বেশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।
এসময় ডিসিসিআই’র সিনিয়র সহসভাপতি আরমান হক এবং সহসভাপতি মনোয়ার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন