ঈশ্বরদী (পাবনা) উপজেলা সংবাদদাতা : আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঈশ্বরদীতে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে ফিল্মি কায়দায় হামলা চালিয়ে এক অসহায় ব্যক্তির বাড়ি জোরপূর্বক দখল করেছে প্রভাবশালীরা। সে সময় বাড়িটি দখলে নিতে বাড়ির লোকজনদের বেধড়ক মারধর করে গুরুতর আহত করা হয়। ভাঙচুর করে তছনছ করা হয় ঘরের আসবাবপত্র। বাড়িটির প্রতিটি ঘরে তালা ঝুলিয়ে প্রধান ফটকের সামনে দেশীর অস্ত্রের মহড়া দিয়ে বসানো হয় পাহারা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলেও নিরব ভূমিকা পালন করে চলে যায়। গতকাল বুধবার দুপুরে ঈশ্বরদী উপজেলা শেখের দাইড় পূর্বপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকেই অসহায় ওই পরিবারটি খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে। প্রভাবশালীদের অস্ত্রের ভয়ে তারা চিকিৎসা সেবাও নিতে পারছেন না। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলেও সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে ওই অস্ত্রধারীরা।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের শেখের দাইড় পূর্বপাড়া গ্রামের আঃ গাফফার প্রাং ২০০৭ সালে তার নিজ নামের ৭৪ শতক জমি গোপনে ৯ লাখ টাকা মূল্যে একই এলাকার আব্দুর রশিদের কাছে বিক্রির উদ্দেশ্যে রেজিস্ট্রি বায়না করেন। সে সময় তিনি আব্দুর রশিদের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। এক সপ্তাহ পর ঘটনাটি তার সন্তানেরা জানতে পারলে তারা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে একটি সালিশ বৈঠক করেন। সেই সালিশ বৈঠকে সাবেক এমপি মহিউদ্দিন আহম্মেদের উপস্থিতিতে জমিটি ফেরত নিতে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাসহ সমুদয় টাকা ফেতর দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত ব্যক্তির মধ্যস্থতায় ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা আব্দুর রশিদের কাছে ফেরত দিয়ে ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে লিখিত করে নেয়া হয়। বাকি ৮০ হাজার টাকা প্রদানের জন্য সময় নেয়া হয়। কিন্তু সেই সময় অতিক্রম হওয়ার আগেই আব্দুর রশিদ আদালতে ওই রেজিস্ট্রি বায়না দেখিয়ে বাকি ৫ লাখ টাকা জমা দিয়ে জমির মূল পরিশোধকারী হিসেবে মালিক হলেও জমিটি রেজিস্ট্রি হয়নি। ঠিক তখনই আঃ গাফফার এর সন্তানেরা আদালতে এই বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘদিন শুনানি শেষে সম্প্রতি আদালত ৪০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত ঝামেলা সমাধানের জন্য একটি রায় প্রদান করেন। সঙ্গে সঙ্গে সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে আদালত তা স্থগিতাদেশ জারি করেন। সেই স্থগিতাদেশ অমান্য করে গতকাল জোরপূর্বক বসত ভিটাসহ জমিটি দখলে নিতে আব্দুর রশিদের সন্তানেরা ওই আব্দুল গাফফারের বাড়িতে হামলা করে বাড়িটি জোরপূর্বক দখলে নেয়। ভাঙচুর করে তছনছ করা হয় ঘরের আসবাবপত্র। সে সময় বেধড়ক মারধর করে গুরুতর আহত করা হয় আব্দুল গাফফারের ছেলে শফিকুল ইসলাম (২৮), তার স্ত্রী রানী খাতুন (২৪), ভাই মহিদুল ইসলাম (২৫) বোন ¯¦র্ণালী খাতুন (৩১) ও মায়া খাতুনস্হ (৩৩) অন্যদের।
এ বিষয়ে ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মনোয়ার হোসেন জানান, ওসি সারের নির্দেশে সেখানে গিয়েছি। উভয়পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছে। যারা সঠিক, তারা ন্যায় বিচার পাবেন বলেও জানান তিনি।
আব্দুর রশিদের পুত্র শহিদুল ইসলাম জানান, আমরা অনেকদিন ধরে ধৈর্য্য ধরে আছি। এখন আর সম্ভব নয়। জমিটি রেজিস্ট্রি হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রায় পেয়েছি তাই দখলে এসেছি। রেজিস্টি পরে করলেও হবে। এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে আসলেই খুন খারাবি হবে বলেও হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন