বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

খুলনায় সিআইডি’র ফরেনসিক ল্যাবের কার্যক্রম শুরু : ১৬ জেলার মামলার তদন্তে গতি বাড়বে

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:২৩ পিএম

খুলনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)’র ফরেনসিক ল্যাবের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। সদর দপ্তরের নির্দেশক্রমে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এ ল্যাবের যাত্র শুরু হয়। এতে করে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৬ জেলার চাঞ্চল্যকর মামলার আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় গতি বাড়বে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীর পর এবার খুলনায় এ ল্যাবের কার্যক্রম শুরু হলো। আর এ ল্যাবের মাধ্যমে পাওয়া যাবে ১০ ধরনের সেবা।

বিভাগীয় এ ফরেসনিক ল্যাবে যে সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো ফিঙ্গার প্রিন্ট, হস্তলিপি, অস্ত্র ও গুলির ব্যালেস্টিক পরীক্ষা, ফটোগ্রাফী, ফুট প্রিন্ট, জাল নোট ও মেকি মুদ্রা শনাক্ত, ডিজিটাল আইটি, সাইবার সংশ্লিষ্ট, অনু-বিশ্লেষণ শাখা, সকল প্রকার মাদক পরীক্ষার জন্য ক্যামিকেল শাখা, বিষক্রিয়া পরীক্ষায় ভিসারা রিপোর্ট শাখা, ধর্ষনের অলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
সিআইডি’র সূত্রমতে বিভাগের খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, বাগেরহাট, নড়াইল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মাগুড়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর এবং বরিশাল বিভাগের জেলা বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠির চাঞ্চল্যকর মামলার সকল প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে খুলনার সিআইডি’র ল্যাবে।
আগে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ফরেনসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ঢাকাস্থ ল্যাব থেকে করা হতো। এরপর ২০২০ সালে রাজশাহীতে ল্যাব স্থাপনের পর এই দু’টি বিভাগের মামলার আলামত সেখানে পাঠানো হতো। এতে করে রিপোর্ট প্রাপ্তিতে বিলম্ব ও মামলার তদন্ত ধীরগতিতে চলতো। তবে এখন থেকে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৬ জেলার চাঞ্চল্যকর মামলার ফরেনসিক রিপোর্ট পেতে বেশি সময় লাগবে না।
খুলনায় ফরেনসিক ল্যাব চালুর বিষয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি সিআইডি সদর দপ্তর থেকে পত্র প্রেরনের মাধ্যমে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের রেঞ্জ ডিআইজি দপ্তরকে অবগত করা হয়। এরপর বিভাগীয় রেঞ্জ ডিআইজি’র দপ্তর থেকে দু’টি বিভাগের ১৬ জেলার পুলিশ সুপারদের পত্র প্রেরণ করা হয়। জেলা পুলিশ সুপার দপ্তর থেকে সকল থানায় এ বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে। ওই পত্রে ৭ ফেব্র“য়ারি থেকে চাঞ্চল্যকর মামলার সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সকল আলামত সিআইডি’র খুলনা বিভাগীয় পরেনসিক ল্যাবে প্রেরনের জন্য বলা হয়েছে।
সিআইডি খুলনা বিভাগীয় ফরেনসিক ল্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আবদুর রহিম বলেন, গত ১ ফেব্র“য়ারি সিআইডি সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ল্যাব বিশেষজ্ঞসহ সকল প্রকারের টেকনিশিয়ান, যোগদান করেছেন। ফরেনসিক এ ল্যাবের সকল কার্যক্রম খুবই গুরুত্বের সাথে চলছে।
সিআইডি খুলনার অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ জানান, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৬টি জেলার চাঞ্চল্যকর মামলার সকল প্রকার পরিক্ষা-নিরীক্ষা হবে। মামলার তদন্ত দ্রুততার সাথে শেষ করে তদন্ত কর্মকর্তারা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবেন। আদালতে দ্রুত সময়ে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হলে বিচারিক কার্যক্রমে গতি ফিরে আসবে। এতে করে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি অনেকটাই কমে যাবে।
সেবাসমূহ
রাসায়নিক পরীক্ষাগার : সব ধরনের মাদকদ্রব্য, মৃত মানুষ ও পশু-পাখির ভিসেরা, কবর থেকে উত্তোলিত হাড়, চুল, মাটি ও সফট টিসু, বিষাক্ত বা চেতনা নাশক পদার্থের উপস্থিতি, রক্ত মিশ্রিত আলামতের রক্তের উপস্থিতি, এসিড মিশ্রিত আলামতে এসিডের উপস্থিতি, বিস্ফোরক দ্রব্য, দাহ্য পদার্থ, জাল টাকা তৈরীতে ব্যবহৃত ক্যামিক্যাল প্রভৃতি আলামতের রাসায়নিক বিশ্লেষনের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট শাখা : ক্রাইম সিন হতে সংগৃহীত দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান আঙ্গুলের ছাপের সাথে সন্দিগ্ধ আসামিদের আঙ্গুলের ছাপের তুলনামূলক পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান এবং সংগৃহিত ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ল্যাটেন্ট প্রিন্ট ডাটাবেজে সংরক্ষিত ফিঙ্গারপ্রিন্টের সাথে তল্লাশি করে মিল/অমিল সম্পর্কে মতামত প্রদান।
হস্তলিপি শাখা : বিচারাধীন দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলার দলিলের বিতর্কিত লেখা স্বাক্ষর জাল, নাম্বার ঘঁষামাজা করে কিংবা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে অবমোচন করা হলে তা পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান।
জাল নোট ও মেকীমুদ্রা শাখা : দেশি-বিদেশী সকল কারেন্সি নোট ও দেশী-বিদেশী সকল প্রকার কয়েন বা ধাতব মুদ্রার বিষয়ে ভিডিও স্পেকট্রাল কম্পারেটর এর মাধ্যমে নোটে থাকা দৃশ্যমান ও অদৃশ্য বৈশিষ্ট্যগুলি বিশ্লেষণের বিশ্লেষণ পূর্বক বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান।
ফটোগ্রাফি শাখা : অপরাধীর ছবি গ্রহণ, সংরক্ষণ ও ফরেনসিক বিভিন্ন শাখার আলামতের বর্ধিত ছবি সরবরাহ করা এবং বিতর্কিত ছবির সাথে নমুনা ছবির মিল আছে কিনা তা বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান।
ব্যালিস্টিক্স শাখা : আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট কোন অপরাধের ঘটনায় উদ্ধাকৃত বা অপরাধের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ, ফায়ার্ড কার্তুজ ও ফায়ার্ড বুলেট বা এগুলির কোন অংশ বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান।
অণুবিশ্লেষণ শাখা : গাড়ির ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর, আগ্নেয়াস্ত্রের নম্বর, প্রস্তুতকারী দেশের নাম এবং কোন ধাতব বস্ত্রর উপর থেকে মুছে ফেলা/বিকৃত করা লেখা, ক্রমিক নম্বর, সংখ্যা, ট্রেড মার্ক বা যে কোন চিহ্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান।
পদচিহ্ন শাখা : পায়ের ছাপ বা জুতার ছাপ পরীক্ষা করে অপরাধী বা ভিকটিম শনাক্তকরণে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান।
ক্রাইমসিন ইউনিট : অপরাধ স্থল পরিদর্শন করে বস্তুগত সাক্ষ্য সংগ্রহ, ডকুমেন্টেশন (ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি, স্কেচম্যাপ ইত্যাদি প্রস্তুত), সংরক্ষণ পূর্বক বস্তুগত সাক্ষ্য সংশ্লিষ্ট থানা বা তদন্তকারী ইউনিটকে প্রদান।
আইটি শাখা : মামলা সংশ্লিষ্ট মোবাইল, মেমোরি কার্ড, হার্ডডিস্ক, ল্যাপটপ, ডিভিআর ইত্যাদি ডিজিটাল এভিডেন্স পরীক্ষা-নিরীক্ষা পূর্বক মতামত প্রদান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন