লাগামহীন নিত্যপণ্যের দামে এখন রীতিমতো নাভিশ্বাস নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের। প্রতিদিনই বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। টিসিবির তথ্য বলছে, আরেক দাফা দাম বেড়েছে সয়াবিন, পাম অয়েল, মাঝারি চাল, আলু ও পেঁয়াজের মতো সাতটি নিত্যপণ্যের। এছাড়া মাঘের শেষেও নাগালে আসেনি শীতের সবজি। একই সঙ্গে অধিকাংশ মাছই এখন নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিলিয়ে আরেক দফা দাম বেড়েছে ভোজ্যতেলের। নতুন দাম অনুযায়ী প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ৮ টাকা বেড়ে ১৬৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪৩ টাকায়। সয়াবিনের পাশাপাশি রাজধানীতে গেল এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে পাম অয়েল, দেশি হলুদ ও পেঁয়াজ এবং আলু, দারুচিনি, মাঝারি চাল ও খোলা ময়দার। এদিকে, মাঘের শেষে এসেও সহনীয় পর্যায়ে আসেনি সবজির দাম। সবজির মতো এখন মাছের বাজারও চড়া। ফলে তেলাপিয়া, পাঙ্গাস আর চাষের কৈ ছাড়া অধিকাংশ মাছই এখন নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে। ভোক্তারা বলছেন, পণ্যমূল্যের লাগাম টানতে বাজার মনিটরিং হওয়া উচিত। তবে ভোক্তাদের চাওয়া থাকলেও রাজধানীতে নিয়মিত অভিযান করতে দেখা যায় না বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে।
সূত্র মতে, সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। মৌসুম শেষ হলেও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সবজি। দাম বেশি হওয়ায় কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে ক্রেতারা। দাম না কমায় হতাশ ক্রেতারা। তারা বলছেন, পণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে ক্রয় ক্ষমতা। অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে পাঁচ থেকে ১০ টাকা করে। ১০০ টাকা ছুঁয়েছে বেগুনের কেজি। সবজির দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগি, ডিম ও গরুর গোশতের দাম। যদিও বাজারভেদে দামের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর মহাখালী, রামপুরা, শান্তিনগর ও নিউমার্কেট, কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজার, টাউনহল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ছোট ফুলকপির পিস বিক্রি করছেন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর বড় ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ছোট ফুলকপি ৩০ টাকা এবং বড় ফুলকপি ৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছিল।
ফুলকপির পাশাপাশি দাম বেড়েছে পাকা টমেটোর। এক সপ্তাহ আগে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটো এখন ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বাছাই করা ভালো মানের পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪০ টাকা। দাম বাড়ার এ তালিকায় রয়েছে বেগুন। সপ্তাহের ব্যবধানে বেগুনের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে শিমের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
তবে গাজরের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। এতে এখন প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা। করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
বাজারে নতুন আসা পুঁইশাকের মেচড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। শালগমের (ওলকপি) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। লালশাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, পালংশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব সবজি ও শাকের দামে খুব একটা হেরফের হয়নি।
সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী রিপন মিয়া বলেন, আস্তে আস্তে শিম, ফুলকপি, পাকা টমেটোর সরবরাহ কমে আসছে। তাছাড়া বৃষ্টিতে কিছু সবজি নষ্ট হয়েছে। এ কারণে সবজির দাম বেড়েছে। আমাদের ধারণা সামনে সবজির দাম আর কমবে না বরং এখন দিন যত যাবে সবজির দাম বাড়বে।
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী রতন মিয়া বলেন, আড়তে সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেছে। ফুলকপি প্রতিটি ৪০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শিম ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, ভেণ্ডি ১২০ টাকা, করলা ৮০-১০০ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা ও মুলা ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজার থেকে সবজি কেনা জামিউল সিপু বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম অস্বাভাবিক। চাল, তেল, চিনি কোনো কিছু ক্রেতাদের নাগালে নেই। এখন সবজির দাম বাড়তে শুরু করেছে। বাজারে ভরপুর সবজি রয়েছে অথচ সবকিছুর দাম অস্বাভাবিক। এই ভরা মৌসুমে এতদামে সবজি কিনে খেতে হবে আগে কখনো ভাবিনি।
শান্তিনগর বাজার থেকে সবজি কেনা সফুরা বেগম বলেন, বাজারে ১০০ টাকা নিয়ে গেলে তেমন কোনো সবজি কেনা যায় না। দুটি সবজি কিনলেই টাকা শেষ হয়ে যায়। বেশিরভাগ সবজির দাম ৫০ টাকার ওপরে। এই সময়ে সবজির এত দাম হবে কেন? তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে আমাদের মতো গরিব মানুষ অনেক কষ্টে আছে। আমাদের সংসার কীভাবে চলছে তা শুধু আমরাই জানি। আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না। প্রতিনিয়ত খরচ বাড়ছে, কিন্তু আয় তো বাড়ছে না। এদিকে মুরগির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দামে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। দাম অপরিবর্তিত থাকার তালিকায় রয়েছে ডিম। ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। শিং ও টাকি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। ছোট ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। নলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দামেও আগের বাড়তি দামের তেমন পরিবর্তন আসেনি। গরুর গোশত আগের সপ্তাহের মতই ৬২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর সবজির দাম একটু বেশি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন