শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

ফাইনালে সাকিবের বরিশাল

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৯ এএম

যেন একই নাটকের দুটি মঞ্চায়ন। সমান্তরালে চলা দুটি ম্যাচের নাট্যকারও যেন একজন।

বিকেলের ম্যাচে শেষ ১২ বলে জয়েল জন্য খুলনা টাইগার্সের চাই ২৪ রান, শেষ ওভারে ১৬। রোমাঞ্চকর সেই ম্যাচের দুই ওভারে দুই উইকেট ফেলে ৭ রানে জিতে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে নাম লিখিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। সন্ধ্যায় আরেকটি রোমাঞ্চের পসরা সাজানো ম্যাচও জমলো শেষ দিকে এসে। ১২ বলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের প্রয়োজন ২২ রান। শেষ ওভারে ১৮। একই সমান্তরালে যাওয়া এই ম্যাচেও শেষ দুই ওভারে পড়লো জমে যাওয়া দুই ব্যাটসম্যান। সেই চাপ সামলে জেতা হলোনা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার। ইমরুল কায়েসের দলকে ১০ রানে হারিয়ে ফাইনালে নাম লেখালো উড়তে থাকা সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশাল।
অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে বিপিএলের শেষ সময়ে গ্যালারিতে এসেছিলেন দর্শক। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে যদিও সাধারণ কেউ ছিলেন না এদিন, দলকে উজ্জ্বীবিত করতে প্লে-অফের দলগুলোর বাছাই করা সমর্থকদের জন্য সৌজন্য টিকিট দিয়েছিল বিসিবি। তবে হোম অব ক্রিকেটে সেই ২৫ শতাংশ দর্শকই উপোভগ করলেন রোমাঞ্চকর দুই ম্যাচ।
বিকেলের ম্যাচে সব ভার গিয়ে যেন পড়ল মেহেদী হাসান মিরাজের ওপরই। সেই মিরাজ, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স যাকে সরিয়ে দিয়েছিল অধিনায়কত্ব থেকে। সেই মিরাজ, প্রথম ৩ ওভারে যিনি দিয়েছেন ৩২ রান। শেষ ওভারে খুলনা টাইগার্সের প্রয়োজন ছিল ১৬ রান, ক্রিজে ৫৫ বলে ৭৪ রানে অপরাজিত আন্দ্রে ফ্লেচার, সঙ্গী বিপজ্জনক থিসারা পেরেরা। তবে পুরো ওভারে মিরাজ বলতে গেলে তাঁদের সুযোগই দিলেন না। শেষ বলে গিয়ে ক্যাচ তুললেন পেরেরা, নিজের বলে সেটি ধরে শুয়ে পড়লেন মিরাজ। যেন চট্টগ্রামের সব ভার সয়ে নিলেন তিনি একাই!
মুশফিকুর রহিম ও খুলনার স্বপ্ন ভেঙে চট্টগ্রামকে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে নিয়ে গেলেন মিরাজ। এর আগে ব্যাটিংয়েও রেখেছিলেন অবদান। ৬৫ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর চ্যাডউইক ওয়ালটনের সঙ্গে গড়েছেন পঞ্চম উইকেটে বিপিএলের রেকর্ড ১১৫ রানের জুটি, মাত্র ৫৮ বলে। তাতেই উইল জ্যাকসকে ছাড়া খেলতে নামা চট্টগ্রাম পায় ১৮৯ রানের বড় সংগ্রহ। জবাবে মুশফিক ও ফ্লেচারের ৪৯ বলে ৬৪ ও ফ্লেচারের সঙ্গে ইয়াসির আলীর ৩৮ বলে ৬৫ রানের ইনিংসে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল খুলনা। তবে ১৯তম ওভারে শরীফুল ইসলামের পর ২০তম ওভারে ৭ রান দূরে থাকতেই মিরাজের সামনে আটকে গেল তারা। এর ফলে বিপিএলের শিরোপাটা আরেকবার অধরা থেকে গেল মুশফিকের।
আর সন্ধ্যার ম্যাচে সকল আলোই ছিল একজনকে ঘিরে- সাকিব আল হাসান। আগের দিন শেষ হওয়া আইপিএল নিলামে থেকেও এবারই প্রথম উপেক্ষীত থাকতে হলো দেশের ক্রিকেটের সবচাইতে বড় বিজ্ঞাপন এই বিশ^সেরা অলরাউন্ডারকে। তবে বিপিএলে উড়তে থাকা বরিশালকে যে একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যাট-বল হাতে সাকিবই! সেই সাকিবের ‘অন্ধকার দিনে’ কুমিল্লাকে হারিয়ে বিপিএলের ফাইনালে উছেঠে বরিশাল। ৮ উইকেটে করা বরিশালের ১৪৩ রানের জবাবে ১৩৩ রানে থামে ৭ উইউকেট হারানো কুমিল্লা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে বরাবরের মতো ঝড়ো শুরু এনে দিলেন মুনেম শাহরিয়ার ও ক্রিসে গেইল। আইপিএলে দল না পাওয়ার কষ্টেই কি-না সাকিব এদিন ছিলেন নিজের ছায়া হয়েই। মাত্র ১ রানে এবারের বিপিএলে প্রথম আউট হলেন দৌড়ে রান নিতে গিয়ে! মুনিম (৩০ বলে ৪৪) আর গেইলের (১৯ বলে ২২) ছাড়া সময়ের দাবি মেটাতে পারেন কেবল জিয়াউর রহমান (১২ বলে ১৭)। বাকিদের আসা যাওয়ার ভিড়ে টিকে থাকার লড়াই করে যাওয়া ডোয়াইন ব্রাভো করেন ২১ বলে ১৭। ঐ পর্যন্তই। ৮ উইকেট হারানো বরিশাল থামে মাত্র ১৪৩ রানে।
জবাবে কুমিল্লা নির্ভার খেলা খেলতে গিয়ে সময়ের সাথে সাথে ম্যাচ থেকে কখন যে ম্যাচ থেকেই ছিটকে গেছে টের পেয়েছে ৬৮ রানে তিন উইকেট খুইয়ে। বিদায় নেয়া ব্যাটারদের নামের পাশে স্কোরগুলোও ছিল দৃষ্টিকটু- লিটন দাস ৩৫ বলে ৩৮, মাহমুদুল হাসান জয় ৩০ বলে ২০ আর অধিনায়ক ইমরুল ৫ বলে ৫! পরে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ফাফ ডু প্লেসি (১৫ বলে ২১) আর ছক্কার ঝড় তোলা মঈন আলী (১৫ বলে ২২) আউট হয়েছেন সমানে সমানে লড়ে। শেষ দিকে সুনিল নারিনের লড়াই (১৬ বলে ১৭) ব্যবধান ঘোঁচাতে পারেনি কুমিল্লার। বল হাতে সাকিব নিষ্প্রভ থাকলেও মুজিব, শফিকুল, ব্রাভো, রানাদের ঝলকে ফাইনালে নাম লেখায় বরিশাল।
তবে শিরোপা লড়াইয়ে উঠতে আরেকটি সুযোগ পাবে কুমিল্লা। আগামীকাল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে চট্টগ্রামের মুখোমুখি হবে ইমরুলের দল। যে জিতবে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি সেই খেলবে সাকিবের বরিশালের সঙ্গে শিরোপা লড়াই।

ক্যাপশন : বার বার অধিনায়ক বদলের বিতর্কে চূর সেই চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স দলটিই এখন শিরোপার মঞ্চ থেকে এক ম্যাচ দূরে। রোমাঞ্চকর এক ম্যাচে খুলনাকে হারানোর উচ্ছ্বাস মিরাজ-শামীরদের। গতকাল মিরপুরে -ইনকিলাব

সংক্ষিপ্ত স্কোর
১ম এলিমিনেটর, চট্টগ্রাম-খুলনা
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স : ২০ ওভারে ১৮৯/৫ (লুইস ৩৯, আফিফ ৩, ওয়ালটন ৮৯*, শামীম ১০, মিরাজ ৩৬, হাওয়েল ৮*; খালেদ ২/৪০, নাবিল ১/১৫, রুয়েল ১/৩২, মেহেদি ১/৩৭)। খুলনা টাইগার্স : ২০ ওভারে ১৮৫/৫ (ফ্লেচার ৮০*, সৌম্য ১, মুশফিক ৪৩, ইয়াসির ৪৫, থিসারা ৩; নাসুম ১/২৪, শরিফুল ১/৪৩, মিরাজ ২/৪০, মৃত্যুঞ্জয় ১/৩৪, হাওয়েল ০/৩৬)। ফল : চট্টগ্রাম ৭ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা : চাডউইক ওয়ালটন।

কোয়ালিফায়ার, বরিশাল-কুমিল্লা
ফরচুন বরিশাল : ২০ ওভারে ১৪৩/৮ (মুনিম ৪৪, গেইল ২২, শান্ত ১৩, সাকিব ১, জিয়াউর ১৭, ব্রাভো ১৭, সোহান ১১; মুস্তাফিজ ০/২৮, নারিন ১/১৬, তানভির ১/৩৩, মঈন ২/২৩, শহিদুল ৩/২৫)।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ২০ ওভারে ১৩৩/৭ (লিটন ৩৮, জয় ২০, ইমরুল ৫, ডু প্লেসি ২১, মঈন ২২, নারিন ১৭; মুজিব ২/৩৩, শফিকুল ২/১৬, সাকিব ০/২৭, ব্রাভো ১/২৬, রানা ২/১৫)।
ফল : বরিশাল ১০ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মেহেদী হাসান রানা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন