মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

যৌনকর্মী হতে বাধ্য করছে আবহাওয়া পরিবর্তন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৮ এএম

আবহাওয়া পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব সম্পর্কে এখনই সতর্ক হওয়ার সময়। অথচ যাদের এ বিষয়ে এগিয়ে আসা দরকার তারা মাথাই ঘামাচ্ছে না। ফলে এর কুফল ভোগ করছেন বিভিন্ন দেশের নিরপরাধ মানুষ। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে জিম্বাবুয়েতে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সেখানে আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব এতটাই নেতিবাচক হয়ে ধরা পড়েছে যে, অনেক নারীই যৌনকর্মী হতে বাধ্য হচ্ছেন। এমনই এক নারী তাওয়ান্ডা (ছদ্মনাম)। ১৬ বছরের এই কিশোরীর জীবনে আধার নেমে এসেছে। সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় শান্ত চোখে আকাশের দিকে চেয়ে থাকে তাওয়ান্ডা। কারণ রাত শুরু হওয়ার আগেই যে তাকে তৈরি হতে হবে। আকাশের দিকে চেয়ে হয়তো আনমনে সে কথাই ভাবছিল এই কিশোরী। জিম্বাবুয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শতাধিক নারী এই কাজে বাধ্য হয়েছেন। কয়েক বছর ধরে শহরের কেন্দ্রগুলোতে তারা যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তাওয়ান্ডা বলেন, সন্ধ্যা নামা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হয়। কারণ আমাদের কাছে যারা আসেন তারা তাদের পরিচয় জানাতে চান না। এদের মধ্যে অনেকেই বিবাহিত আবার কেউ কেউ সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি। তারা চান না যে, তাদের এ ধরনের কাজের কথা কেউ জেনে যাক। অন্যথায় আমরা হয়তো ২৪ ঘণ্টাই তাদের সেবা দিতে পারতাম। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর তাওয়ান্ডার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। পড়াশোনার খরচ জোগানো তার দাদির পক্ষে সম্ভব ছিল না। কয়েক বছর ধরে চলা খরায় ফসল হচ্ছিল না। অভাবের তাড়নায় তখন দিশেহারা অবস্থা। গ্রামে নিজের ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছিল না তাওয়ান্ডা। অবশেষে ভালো কিছুর আশায় রাজধানী হারারেতে পাড়ি জমায় সে। তাওয়ান্ডা জানায়, সেখানে সে একজন বেবিসিটার হিসেবে এসেছিল। পুরোনো স্মৃতিচারণ করে এই কিশোরী বলে, ছয় মাস আমি গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেছি। আমি খুব সামান্যই বেতন পেতাম। কোভিড মহামারি শুরুর পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে। আমি যে নারীর অধীনে কাজ করতাম তিনি আমার বেতন আরও কমিয়ে দেন। সে কারণে আমি চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হই। এখন আর নিজের বাড়িতে ফিরতে চায় না তাওয়ান্ডা। সেখানেই বন্ধু-বান্ধবের প্ররোচনায় যৌনকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করে সে। বর্তমানে রাজধানী হারারে থেকে ১২ কিলোমিটার পূর্বের এপওয়ার্থে বসবাস করছে তাওয়ান্ডা। সহিংসতা, পতিতাবৃত্তি এবং মাদকদ্রব্যের জন্য কুখ্যাত ওই শহরে জনসংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। ‘বুস্টার’ নামে পরিচিত একটি এলাকায় তাওয়ান্ডা এবং অন্যান্য কিশোরীরা সমবেত হয়। দিনের বেলায় সেখানে খুব একটা লোকজনের আনাগোনা না থাকলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়তে থাকে। ইয়োথ টু ইয়োথ নামের একটি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ক্যাথেরিন মাসুন্ডা বলেন, যৌনকর্মে জড়িত তরুণী বা কিশোরীদের সংখ্যা নির্ণয় করা কঠিন। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। অনেক নারীই বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই তারা এমন কাজে নামতে বাধ্য হয়েছেন। শুধু খরা নয় বরং, বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ শস্য এবং সম্পদ নষ্ট করছে, মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। শিপো নামের অপর এক কিশোরী বলেন, ২০২০ সালে আমি স্কুলের পড়াশোনা শেষ করি। আমি সয়াবিন চাষ করতে চেয়েছিলাম। এতে পরিশ্রম কম কিন্তু লাভ বেশি। এ থেকেই আমি আমার পড়ার খরচ এবং বাসা ভাড়া দেব ভেবেছি। কিন্তু সে সময় প্রচুর বৃষ্টি হলো এবং বন্যায় সব ভেসে গেল। আমার প্রজেক্টও মুখ থুবড়ে পড়ল। জিম্বাবুয়ে ইয়োথ কাউন্সিল হারারের প্রাদেশিক পরিচালক মেমোরি কেনিয়াতি বলেন, যৌনকর্মী হিসেবে কম বয়সী নারীদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। এই বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। জিম্বাবুয়ের অনেক অঞ্চলে দাবদাহ, কম বৃষ্টিপাত আবার কিছু অঞ্চলে অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং আকস্মিক বন্যার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। রাজধানী হারারে থেকে ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণের মাশোনাল্যান্ড প্রদেশের মারাম্বা গ্রামের প্রধান ডেভিড মারেকেরা বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তন শুধু আমাদের স¤প্রদায়ে অভাব ডেকে আনছে না বরং আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতও নষ্ট করে দিচ্ছে। আল-জাজিরা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন