স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সুনামের অধিকারী ও সাহসী ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। গতকাল বৃহস্পতিবার অনলাইনে এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে গঠিত সার্চ কমিটি অতীতের তুলনায় স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কাজ করছে। কিন্তু তা পরিপূর্ণ স্বচ্ছ নয়। পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে সৎ, যোগ্য ও সুনামের অধিকারী ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য কমিটির ড. মজুমদার সুনির্দিষ্ট চারটি সুপারিশ রাখেন।
সুপারিশগুলো হচ্ছে- (১) অনুসন্ধান কমিটিকে পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রদর্শনের মাধ্যমে বিরাজমান আস্থার সঙ্কট দূর করার জন্য তার কার্যপদ্ধতি অবিলম্বে জনগণকে অবহিত করা। একইসঙ্গে কী মানদণ্ডের ভিত্তিতে ও কী পদ্ধতিতে কমিটি তার বিবেচনাধীন ব্যক্তিদের সুনাম যাচাই করবে এবং তাঁদেরকে অনুসন্ধান করে বের করবে তাও জনগণকে জানানো।
(২) পরিপূর্ণ তথ্য প্রকাশ তথা কোনো কিছু গোপন না করার স্বার্থে অনুসন্ধান কমিটির প্রাথমিকভাবে প্রকাশিত ৩২২ জনের নামের পাশাপাশি প্রস্তাবকরারী ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের নাম প্রকাশ করা। প্রাথমিক তালিকা থেকে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নারীসহ ২০ থেকে ৩০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে তা প্রকাশ করা। এরপর সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভূক্ত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা, তাঁদের সম্পর্কে শুনানি করা এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে তাঁদের সম্পর্কে তথ্য নেওয়া।
(৩) অনুসন্ধানের ভিত্তিতে পরিপূর্ণ সতর্কতা ও যথাযথ বিবেচনাশক্তি কাজে লাগিয়ে একটি প্রতিবেদনসহ ১০ জনের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা। প্রেসিডেন্টের কাছে প্রেরণের তিন দিন আগে প্রতিবেদনটিসহ চূড়ান্ত তালিকা জনগণের অবগতির জন্য প্রকাশ করা। (৪) অনুসন্ধান কমিটির কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর কমিটির কাজের প্রসেডিংসহ একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন ও প্রকাশ করা।
সুজন-এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে কোন দল কার নাম দিয়েছে তা প্রকাশ করা উচিত। এতে করে নির্বাচনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে পারব। যদি দেখি তাদের দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ, তাদের সহায়ক লোকদের নাম দিয়েছে তাহলে বোঝা যাবে তারা ভাল নির্বাচন চায় না।
তিনি আরও বলেন, ভাল নির্বাচন কমিশন হলো ভাল নির্বাচনের প্রথম ধাপ। নির্বাচন কমিশন যদি দলনিরপেক্ষ না হয় তাহলে অন্য কোনো সরকার ব্যবস্থার অধীনে হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কম। তিনি বলেন, আগের দুই নির্বাচন কমিশন এক-দুই বছর কাজ করার পর আমরা বুঝতে পেরেছি কেমন কমিশন। কিন্তু নাম প্রকাশ করা না হলে প্রথম দিন থেকে বুঝতে পারব এটা পক্ষপাতদুষ্ট কমিশন। নির্বাচন দেখার অপেক্ষা করতে হবে না।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ ইসির পাশাপাশি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের উচ্চ আদালতের দেয়া নিকৃষ্টতম রায় হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার রায়। এই রায়ের পর দেশ অস্থির হলো। স্থিতিশীল কবে হবে আমরা জানি না। ৫০ বছরে দেশে যত রায় হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকারক রায় হয়েছে এটা।
সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, বিবেচনাধীন ব্যক্তিদের পরিচয়, প্রস্তাবক ইত্যাদি জানাতে হবে, তাহলে স্বচ্ছতার পথে অগ্রগতি হয়েছে বলা যাবে। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থাটা নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে সে বিষয়ে কিছু হবে কি না সন্দেহ আছে, একটা ভালো নির্বাচন কমিশন অন্তত হোক।
সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারের সঞ্চালনায় আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, রোবায়েত ফেরদৌস, সুজনের সহসম্পাদক জাকির হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন