খুলনা ব্যুরো : মংলা বন্দরে চীন থেকে এলসির মাধ্যমে আমদানিকৃত ২ হাজার ১০৫টি কম্পিউটর মনিটর ছাড়করণের নির্দেশ দিয়েছে আপিলাত ট্রাইব্যুনাল। তবে সে আদেশ মানছেন না মংলা কাস্টমসের কমিশনার। ফলে মালামাল ছাড়পত্র না দেয়ায় দীর্ঘদিন গুদামে থাকা কম্পিটারগুলো নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া পোর্ট ডেমারেজ বাড়ছে। আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করায় ক্ষুদ্ধ হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিবাদ জানাতে আজ রোববার খুলনা চেম্বার ভবনে যৌথ সভায় বসছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসায়ী সংগঠন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকার মেসার্স আর কে ইন্টারন্যাশনাল চলতি বছরের ফেব্রæয়ারিতে চীন থেকে ২ হাজার ১০৫টি কম্পিউটর মনিটর আমদানি করে। মংলা বন্দরে আসা এসব কম্পিউটার মেসার্স সি ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সির মাধ্যমে ছাড়করণের ব্যবস্থা করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু মালামাল খালাসের সময় কায়িক পরীক্ষার ঘোষণায় অতিরিক্ত পণ্য আনার বিষয়টি ধরা পড়ে। প্যাকিং লিস্ট ও বি/ই এর ঘোষণার সাথে অমিল পায় কাস্টমস্। ৪নং পণ্যে ২১ ইঞ্চির পরিবর্তে ২২ ইঞ্চি এবং ৫ নং পণ্যে ২২ ইঞ্চির পরিবর্তে ৪২ ইঞ্চি অতিরিক্ত পণ্য পায়।
আমদানিকারক আর কে ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো: নুর ইসলাম জানান, কাস্টমস কমিশনার তার ক্ষমতা অপব্যবহার করে গত ২১ আগস্ট তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমদানিকারকের ওপর ২০ লাখ এবং ১৫ লাখ টাকা বিমোচনসহ ৩৫ লাখ সর্বমোট ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য্য করে। যা প্রচলিত নিয়ম বহির্ভূত। কাস্টমস অ্যাক্ট অনুযায়ী কমিশনার আদেশের বিরুদ্ধে আমি শুল্কনীতি অনুযায়ী কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালে অপিল করি। গত ৩ অক্টোবর আপিলাত ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো: জাকির হোসেন এক আদেশে মামলাটি চূড়ান্ত নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমদানিকৃত পণ্য চালানের বিপরীতে জরিমানা বাবদ ব্যাংক গ্যারান্টি ও শুল্ককরাদি নগদ ট্রেজারি ৩৫ লাখ টাকা প্রদান সাপেক্ষে পণ্য খালাসের জন্য কাস্টমস কমিশনার বরাবর আদেশ দেন।
এ দিকে রায়ের আদেশ পাওয়ার পর গত ১৭ অক্টোবর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ মোতাবেক মংলা কাস্টমস হাউসের সহকারী কমিশনার পন্য খালাস গ্রহণ করার জন্য ওই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে পত্র (আদেশ নথি নং এস/৩৮৮৮/গ্রæপ-৪/এ্যা/মংলা/১৫-১৬/ ৫৭৫৭(১) প্রেরণ করেন। এর একদিন পর অর্থাৎ ১৮ অক্টোবর কাস্টমস কমিশনার কোনো প্রকার উল্লেখ ছাড়াই শুল্কনীতি লঙ্ঘণ করে একটি পত্র মারফত ১৭ অক্টোবর আদেশটি বাতিল করে দেন।
এরপর কমিশনার আপিলাত ট্রাইব্যুনালের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ মোতাবেক পন্য খালাস এর কার্যক্রম গ্রহণ না করে গত ২৩ অক্টোবর হাইকোর্টে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশটির বিরুদ্ধে আপিল করার উদ্দেশ্যে অ্যাটর্নী জেনারেল অফিসে পত্র প্রেরণ করলে ২৪ অক্টোবর ডেপুটি অ্যাটর্নী জেনারেল হাইকোর্টে আপিলের সুযোগ নাই মর্মে উল্লেখ করে আপিলাত ট্রাইব্যুনালের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ মোতাবেক পন্য খালাস প্রদান এর কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য কমিশনার পরামর্শ দিয়েছেন। ফলে হাইকোর্টে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশটির বিরুদ্ধে আপিল না হওয়ায় আপিলাত ট্রাইব্যুনালের আদেশ অদ্যাবধি বহাল রয়েছে।
সর্বশেষ জানা গেছে, কমিশনার ইচ্ছাকৃতভাবে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ অমান্য করে এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের পরামর্শ তোয়াক্কা না করে আমদানিকৃত পন্য শুল্কায়ন ও খালাস কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন, যা শুল্কনীতি, রাষ্ট্রীয় আইন ও সংবিধান পরিপন্থি বলে জানান আমদানিকারক নুর ইসলাম।
এ দিকে, পণ্য খালাসের জন্য আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য কাস্টমস কমিশনারকে চিঠি দিয়েছেন সি ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি লিমিটেড এবং মংলা কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়াডিং এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। হয়রানির প্রতিবাদে মংলা কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়াডিং এজেন্টস্ এসোসিয়েশন, নৌ-পরিবহন মালিক গ্রæপ, শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশন, বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্সসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসায়ী সংগঠন আজ রোববার খুলনা চেম্বার ভবনে যৌথ সভা ডেকেছেন।
মংলা কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়াডিং এজেন্টস্ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুলতান হোসেন খান বলেন, কাস্টমের শুল্ক বিভাগের খামখেয়ালীপনা ও দ্বৈত নীতির কারণে মংলা বন্দরের ব্যবসায়ীরা আগের মত আর পণ্য খালাস করছে না। কাস্টমস কমিশনার প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশনা মানছে না। সর্বশেষ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বন্দর ব্যবহারকারীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন