রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যবসা বাণিজ্য

পাহাড়ে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন ও পাথর আহরণ ভয়াবহ নাব্যতা সঙ্কটে মাতামুহুরী

প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার : চকরিয়ার মাতামুহুরী নদী বর্তমানে ভয়াবহ নাব্যতা সঙ্কটে পড়েছে। নদীর উজানে বান্দরবানের লামা ও আলীকদমে পাহাড়ে ব্যাপক বৃক্ষ নিধন ও বারুদের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাথর আহরণের কারণে মূলত প্রতিবছর নদীতে পলি জমে নদীর এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে নদীর একাধিক স্থানে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর।
জানা গেছে, মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানি আটকিয়ে চকরিয়া-পেকুয়া ও লামা আলীকদমের হাজার হাজার কৃষক প্রতিবছর সেচ সুবিধা নিয়ে ইরি-বোরো ও রবি শষ্যের চাষাবাদ করে আসছে। কৃষকরা চাষের মাধ্যমে ইতোমধ্যে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। এখানকার কৃষিপন্য স্থানীয় ভোক্তার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি করা হচ্ছে। এতে করে চাষীরা মাতামুহুরী নদীর সুফল নিয়ে প্রতিবছর চাষাবাদের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপুর্ন অবদান রেখে চলছে। এ বছর কৃষকরা মাতামুহুরী নদীর পৃর্থক দু’পয়েন্টে ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাবার ড্যামের মাধ্যমে নদীর মিঠাপানি আটকিয়ে জমিতে সেচ সুবিধা নেয়া শুরু করেছে। তবে স্বীধানতার পর ১৯৭২ সাল থেকে এখানকার কৃষকরা উপজেলা প্রশাসনের ব্যয় বরাদ্ধে নির্মিত অস্থায়ী ক্রসবাঁধের মাধ্যমে পানি আটকিয়ে সেচ সুবিধা নিয়েছে। উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম, লক্ষ্যারচর ইউপি চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মানিক, কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ উদ্দিন চৌধুরী জানান, এক সময় মাতামুহুরী নদী জনসাধারণের জন্য আশীর্বাদ হলেও বর্তমানে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ প্রতিবছর বর্ষাকালে পাহাড়ী ঢলের তোড়ে নদীর দুই তীরে ভয়াবহ ভাঙ্গনের সৃষ্টি হচ্ছে। আর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে শত পরিবার হারাচ্ছে বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি ও আবাদি জমি। এতে মানুষ প্রায়ই নি:স্ব হচ্ছে। এ দিকে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, মাতামুহুরীর উৎপত্তিস্থল বিশেষ করে লামা-আলীকদমে কয়েক যুগধরে পাহাড়ে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন ও বারুদের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাথর আহরণের কারণে মূলত প্রতিবছর বর্ষাকালে পাহাড়ী ঢলের তোড়ে নদীতে পলি জমে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থার উত্তোরণে নদীতে ড্রেজিং করা অবশ্যই জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো: আবছার উদ্দিন বলেন, একযুগের বেশি সময় ধরে পাউবো মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চিহিৃত করে উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রেখেছে। তবে প্রতিবছরই বর্ষাকালে নদীতে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় নতুন নতুন এলাকায় ভাঙ্গনের সৃষ্টি হচ্ছে। স্থায়ীভাবে নদীতে ড্রেজিং করা গেলে নদী ভাঙ্গনের ভয়াবহা একটু হ্রাস পেত বলে তিনি মনে করেন।
অপরদিকে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মঈন উদ্দিন মাতামুহুরী নদীতে নাব্যতা সঙ্কটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মিয়ানমারের মন্ডু শহরের পাহাড়ী এলাকা থেকে এ নদীর উৎপত্তি শুরু। শেষ হয়েছে মহেশখালী চ্যানেল হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশে। নদীর আয়তন ১১২ কিলোমিটার। বাংলাদেশে নদীর আয়তন পড়েছে ৫৮ কিলোমিটার। তিনি বলেন, তার মধ্যে কক্সবাজার পাউবো লামা উপজেলার নীচ থেকে মহেশখালী চ্যানেলের কাছাকাছি এলাকায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার নদী দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন। অবশিষ্ট নদীর অংশবিশেষ পার্বত্য চট্রগ্রামের আওতায় পাউবো দেখভাল করে। নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, বিশাল আয়তনের মাতামুহুরী নদী ড্রেজিং করা সময় ও বিপুল অর্থের প্রয়োজন। তবে তিনি নদীর নাব্যতা সঙ্কট উত্তোরণের লক্ষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন বিভাগে একটি সারসংক্ষেপ পাঠাবেন বলে জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন