স্বর্ণের বার আমদানি বাড়াতে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস)। সংগঠনটি বলছে, শুল্ক কমানো হলে বৈধপথে স্বর্ণ আমদানি বাড়বে আর তাতে আরও বেশি রাজস্ব পাবে সরকার। এছাড়া অলংকার বিক্রি বাবদ মূল্য সংযোজন কর কমানোরও প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব ভবন (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে সভায় এনবিআর সদস্য (কাস্টমস নীতি) মো. মাসুদ সাদিক, সদস্য (ভ্যাট নীতি) জাকিয়া সুলতানা ও সদস্য (আয়কর নীতি) সামস উদ্দিন এদিন উপস্থিত ছিলেন। বাজুস ছাড়াও স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ক্রপ প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাগ্রিকালচারাল মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, কেমিক্যাল ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ব্রেড, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্ততকারক সমিতি, ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন, এনিমেল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ছাড়াও বেশ কয়েকটি সংগঠন প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নেয়।
এসময় বাজুসের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজার। স্বর্ণের উচ্চমূল্য ও নানাবিধ কারণে জুয়েলারি শিল্পে পাঁচ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণ করায় জুয়েলারি ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে জুয়েলারি শিল্পে তিন শতাংশ ভ্যাট বিদ্যমান থাকায় এবং ভারতের ভিসাপ্রাপ্তি সহজলভ্য হওয়ায় এ দেশের ক্রেতাসাধারণ ভারত থেকে স্বর্ণালংকার ক্রয়ে উৎসাহী হচ্ছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে আরোপিত ভ্যাট অনুযায়ী একজন ক্রেতা ১০ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার ক্রয় করলে তাকে ৫০ হাজার টাকা ভ্যাট দিতে হয়। অন্যদিকে ভারত থেকে ১০ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার ক্রয় করলে মাত্র ৩০ হাজার টাকা ভ্যাট দিয়ে হয়। জুয়েলারি খাতে ভ্যাট সহনশীল ও যৌক্তিক পর্যায়ে অর্থাৎ দুই শতাংশ হারে নামিয়ে আনা হলে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দিতে উৎসাহিত হবেন এবং ক্রেতারাও ভ্যাট প্রদানে আগ্রহী হবেন।
আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, সোনা আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমানো হলে বৈধপথে আমদানির পাশাপাশি রাজস্ব আয় বাড়বে। এই শিল্পের বিকাশে প্রতি ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামের সোনার বার আমদানিতে দুই হাজার টাকা থেকে শুল্ক কমিয়ে এক হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, আপনাদের লিখিত প্রস্তাব পেয়েছি। আশা করছি এগুলো নিয়ে আমরা বসবো। যে প্রস্তাবগুলো গ্রহণযোগ্য হবে সেটা অবশ্যই বিবেচনা করা হবে এবং অফিশিয়াললি প্রসেস করবো।
সভায় বাংলাদেশ ক্রপ প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশন বালাইনাশকের ওপর বিদ্যমান আরোপিত শুল্ক কর হার ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করে। অ্যাগ্রিকালচারাল মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সমূহের জন্যও বর্তমানে অর্জিত লভ্যাংশের ওপর কর ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করে।
বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জাহিদুল আলম বলেন, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপকরণ সোলার ইনভার্টার আমদানি করতে হয়। এই ইনভার্টার আমদানির ওপর মোট কর ও শুল্ক ৩৭ শতাংশ। এই কর ও শুল্ক দিয়ে ইনভার্টার আমদানি করতে গিয়ে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সরকারের রোডম্যাপ ২০৪১ এর নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য পূরণে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন উপকরণ ইনভার্টারের ওপর আমদানির শুল্ক, কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করছি।
এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, আপনারা একটা পরিসংখ্যান করবেন, আমদানি করা ইনভার্টার কী কী পণ্যে কাজে লাগে। সৌরবিদ্যুতের সঙ্গে অন্যান্য শিল্পে ইনভার্টারের ব্যবহারের অনুপাত বের করার পর এনবিআরকে জানাবেন। এরপর এই বিষয়ে এনবিআর সিদ্ধান্ত নেবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন