সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যবসা বাণিজ্য

প্রতিটি গ্রামে আবর্জনা দিয়ে জৈব সার তৈরির উদ্যোগ নেয়া জরুরি

প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা : খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার তাগিদে দেশে আবাদ ও উৎপাদন বাড়ছে। বেশি ফলন পেতে অতিমাত্রায় ব্যবহার হচ্ছে রাসায়নিক সার। এর ফলে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে উদ্বেগজনকহারে। কৃষকের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। রাসায়নিক সারে তাৎক্ষণিক ফলন ভালো হলেও জমির ক্ষতি হচ্ছে অপূরণীয়। কিন্তু জৈব সারে ফলনও ভালো হয়, আবার আবাদী জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে। দেশের প্রতিটি গ্রামের কৃষকরা খুব সহজেই ময়লা ও আবর্জনা ডাস্টবিনের মতো বাড়ীর পাশের অব্যবহৃত জমি বা বাগানের নির্দিষ্ট স্থানে জমা করে রাখলে ঘর-গৃহস্থালি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে, তৈরী হবে জৈব সার। যা গোবর সারের মতোই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে কিছু কিছু জায়গায় অল্পবিস্তর সার তৈরী হয়। কিন্তু ব্যাপকভাবে সরকারের পরিকল্পনামাফিক দেশের প্রতিটি গ্রামে জৈব সার তৈরী বাধ্যতামূলক করা হলে কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটবে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
এখন সারের জন্য কাড়াকাড়ি নেই, সার উল্টো খোঁজে কৃষককে- একথা সত্য কিন্তু তাতে সামগ্রিকভাবে কৃষির স্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছে না। আগেকার মতো রাসায়নিক সারের বদলে যেদিন পুরো মাত্রায় কৃষিতে জৈব সার ব্যবহারের মাত্রা বাড়বে সেদিন জমির উর্বরা শক্তি বাড়বে, উৎপাদ কৃষক ও ভোক্তার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশে জৈব সার তৈরীর বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে সম্ভাবনাকে যথাযথ কাজে লাগানো হচ্ছে না। অথচ পরিকল্পনামাফিক জৈব সার তৈরী হলে সার আমদানীর জন্য কাড়ি কাড়ি টাকা ব্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে দেশ। কৃষি বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের মতে, আবাদী জমি বাড়ছে না, অথচ বাড়ছে জনসংখ্যা। খাদ্য চাহিদা মিটাতে তাই ফসল দ্রæত ও বেশি ফলনের জন্য রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে। এর বিপরীতে জৈব সারের ব্যবহার হলে মাটির ক্ষয়রোধ বিশেষ করে উপকারী পোকা-মাকড় ও কেঁচো যা প্রাকৃতিক লাঙ্গল হিসেবে পরিচিত তা ধ্বংসের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। তাছাড়া আবাদী জমির ক্ষতিকর ভেজাল ও নকল সারের ব্যবসা বহুলাংশে বন্ধ হবে। এসব কারণে সংশ্লিষ্টরা সারাদেশে বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারিভাবে জৈব সার তৈরীর প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু জোরদার হচ্ছে না। সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্নস্থানে কমবেশী কেঁচো সার বা ‘ভার্মি কম্পোস্ট’ এবং ‘কুইক কম্পোস্ট’ সার তৈরী হচ্ছে। কিন্তু তা উল্লেখযোগ্য নয়। কেঁচো সার ও কুইক সার আগের সেই গোবর সারের মতো।
সূত্রমতে, দেশের প্রতিটি গ্রামের কৃষকরা গোবরের পাশাপাশি খুব সহজেই ময়লা ও পচা আবর্জনা ডাস্টবিনের মতো বাড়ীর পাশের অব্যবহৃত জমি বা বাগানের নির্দিষ্ট স্থানে জমা করে রাখলে ঘর-গৃহস্থালি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে। একইসাথে উন্নতমানের সার তৈরী হবে। ওই সার তৈরীতে বাড়তি কোন খরচ নেই। অথচ তার গুণাগুণ খুবই ভালো। রাসায়নিক সারের মতো কোনরূপ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। ওই সার ব্যবহারে ফলনও হয় ভালো। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বিএডিসি’র দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিবছর গড়ে সারা দেশে ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো, ৫৪ লাখ হেক্টর জমিতে রোপা আমন, আরো প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর জমিতে রবিশস্য, পাট ও আউশ আবাদ হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে প্রতি বছর সরকারি ও বেসরকারিভাবে এমওপি সার ৪ লাখ মেট্রিক টন, টিএসপি সার ৪ লাখ মেট্রিক টন, ডিএপি সার ১ লাখ মেট্রিক টন ও ইউরিয়া ১৩ লাখ মেট্রিক টন সার আমদানী করতে হয় বিদেশ থেকে। আমদানীকারক, বিএফএ ও বিএডিসিসহ সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সর্বসাকুল্যে বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার সার আমদানী করতে হয়। অথচ দেশের ৬৮ হাজার গ্রামে সিংহভাগই কৃষকের বসবাস। তাদের একটা অংশ যদি ঘর-গৃহস্থালির আবর্জনা, কচুরীপনা, লতাপাতা ও গরু, ছাগল, মুরগী ও পশু-পাখীর মল পচিয়ে জৈব সার তৈরী করে, তাহলে জৈব সারের ঘাটতি অনায়াসেই পূরণ করা সম্ভব। কৃষি বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের অভিমত, জৈব সার কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হবে। কৃষকরা বর্তমানে রাসায়নিক সারের জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে তার চেয়ে অনেক বেশী কম খরচ হবে জৈব সারে। ইতোমধ্যে যশোর, ফরিদপুর, রংপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জৈব সার তৈরীতে সফলতা আসতে শুরু করেছে। সবজি ও আলুসহ বিভিন্ন ফসলে শুধু জৈব সার প্রয়োগ করে উৎপাদনেও রেকর্ড সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। সূত্রমতে, রাসায়নিক সারের চেয়ে গুণাগুণও অনেক বেশী ভার্মি কম্পোস্ট ও কুইক কম্পোস্টসহ জৈব সারের।
সূত্র আরো জানায়, মাত্র ২১ দিনে জৈব সার তৈরী হয়। বাড়ীর আঙিনায় পতিত জমিতে আবর্জনা বিশেষ করে করাত কলের তুষ ও গোবর দিয়ে জমা করে রেখে দিলেই আপনাআপনি সার তৈরী হয়ে যায়। সূত্রমতে, রাসায়নিক সারে তাৎক্ষণিক ফলন ভালো হলেও জমির ক্ষতি হতো অপূরণীয়। কিন্তু জৈব সারে ফলনও ভালো হয়, আবার মাটির জৈব সারের ঘাটতি পূরণ করে উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে। তাই এ ব্যাপারে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া জরুরি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন