বয়স পেরিয়ে গেছে ৪১। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাঠ চুকিয়ে ফেলেছেন গত মাসে। তবে এখনও ফুরিয়ে যাননি মোহাম্মদ হাফিজ। অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার আরও একবার মেলে ধরলেন সামর্থ্যরে পুরোটা। প্রথমে ব্যাট হাতে খেললেন দারুণ এক ইনিংস। পরে বোলিংয়েও ছড়ালেন আলো। তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে প্রথমবারের মতো পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) জয়ের স্বাদ পেল লাহোর কালান্দার্স। গতপরশু রাতে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে সপ্তম আসরের ফাইনালে মুলতান সুলতান্সকে ৪২ রানে হারিয়ে শিরোপা উৎসবে মাতে লাহোর কালান্দার্স। ১৮১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় গত আসরের চ্যাম্পিয়নরা থমকে যায় ১৩৮ রানেই। ব্যাটিংয়ে চাপের মুখে পাঁচ নম্বরে নেমে ৪৬ বলে ৬৯ রানের ইনিংস খেলার পর বল হাতে ২ উইকেট নিয়ে হাফিজই ফাইনালের নায়ক। ‘প্রফেসর’ নামে পরিচিত হাফিজের এটি দ্বিতীয় পিএসএল শিরোপা। ২০১৭ সালে জিতেছিলেন পেশাওয়ার জালমির জার্সিতে।
লাহোর কালান্দার্সের এমন সাফল্যে আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হয় আরেক জনের নাম- শাহিন শাহ আফ্রিদি। অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম আসরে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ২০২১ সালে আইসিসি বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জেতা তরুণ এই বাঁহাতি পেসার। ৩০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে তিনিই ফাইনালে দলের সফলতম বোলার। ২০ উইকেট নিয়ে আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও।
স্বীকৃত ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগে আফ্রিদিই সবচেয়ে কম বয়েসী অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন শিরোপা। এর আগের রেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথের। ২০১২ সালে ২২ বছর বয়েসে বিগ ব্যাশে সিডনি সিক্সার্সকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন স্মিথ। এখন তিনিই ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগের সবচেয়ে কম বয়েসী চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক। মজার কথা হলো এবার পিএসএলের আগে কখনই কোন পর্যায়ে অধিনায়কত্ব করেননি পাকিস্তানের তারকা বাঁহাতি পেসার। শিরোপা জেতার পর নিজের দলের সব সদস্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন শাহীন, ‘এটা আমার জন্য বিশাল মুহূর্ত। আমার দলের জন্যও বিশেষ মুহূর্ত। দলকে জেতানোয় সবারই অবদান ছিল। সবাই আমাকে শুরু থেকে সমর্থন যুগিয়েছে।’
শেষটা দারুণ হলেও ফাইনালে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে লাহোরের শুরুটা ভালো ছিল না। ২৫ রানের মধ্যেই তারা হারিয়ে ফেলে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান ফখর জামান, আবদুল্লাহ শফিক, জিশান আশরাফকে। সেখান থেকেই দলকে পথ দেখান হাফিজ। শুরুতেই তিনি তিনটি চার মারেন রুম্মান রাইসের এক ওভারে। খুশদিল শাহকে মাথার ওপর দিয়ে ছক্কায় ওড়ানোর পর মারেন চার। চতুর্থ উইকেটে কামরান গুলামের সঙ্গে ৫৪ ও পঞ্চম উইকেটে হ্যারি ব্রুকের সঙ্গে হাফিজ উপহার দেন ৫৮ রানের জুটি। এর মাঝেই তিনি ফিফটি পূর্ণ করেন ৩৬ বলে। অষ্টাদশ ওভারে তার ইনিংস থামে কাভারে ক্যাচ দিয়ে। ৯ চার ও একটি ছক্কায় গড়া ৬৯ রানের ইনিংসটি। সঙ্গে ব্রুকের ২২ বলে অপরাজিত ৪১ ও ডেভিড ভিসার ৮ বলে অপরাজিত ২৮ রানের ঝড়ো ইনিংসে বড় পুঁজি পায় লাহোর।
হাফিজ পরে বল হাতেও দলকে এনে দেন প্রথম সাফল্য। ইনিংসের চতুর্থ ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে বোল্ড করে দেন প্রতিপক্ষের অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ানকে। নিজের পরের ওভারে এসে তিনি উইকেট নেন আরেকটি, এবার তার শিকার আমির আজমাত। মাঝে রান আউটে বিদায় নেন শান মাসুদ। এরপর রাইলি রুশো ও আসিফ আফ্রিদির বিদায়ে ৬৩ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা মুলতান জয়ের আশা জাগাতে পারেনি কখনই। আসরের শুরুতে দারণ ব্যাটিং করে আইপিএল নিলামে ঝড় তোলা টিম ডেভিডও এদিন পারেননি তেমন কিছু করে দেখাতে (২৭)। সাত নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ ৩২ রান করেন খুশদিল। তিন বল বাকি থাকতেই তাদের গুটিয়ে দিয়ে শিরোপা উল্লাসে মাতে লাহোর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
লাহোর কালান্দার্স : ২০ ওভারে ১৮০/৫ (ফখর ৩, শফিক ১৪, জিশান ৭, কামরান ১৫, হাফিজ ৬৯, ব্রুক ৪১*, ভিসা ২৮*; আসিফ ৩/১৯, উইলি ১/৪২, দাহানি ১/৩৪)। মুলতান সুলতান্স : ১৯.৩ ওভারে ১৩৮ (মাসুদ ১৯, রিজওয়ান ১৪, আজমাত ৬, রুশো ১৫, আসিফ ১, ডেভিড ২৭, খুশদিল ৩২, তাহির ১০; শাহিন আফ্রিদি ৩/৩০, হাফিজ ২/২৩, রউফ ১/৩৪, জামান ২/২৬, ভিসা ১/১৬)। ফল : ৪২ রানে জিতে চ্যাম্পিয়ন লাহোর। ম্যান অব দ্য ফাইনাল : মোহাম্মদ হাফিজ। ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট : মোহাম্মদ রিজওয়ান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন