মেয়েদের বিশ্বকাপের শুরুর দিনই দেখা গেল রোমাঞ্চকর এক ম্যাচ। ২৬০ রানের লক্ষ্যে শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৬ রান, উইকেটে নিউজিল্যান্ডের থিতু হওয়া দুই ব্যাটার কেটি মার্টিন ও জেস কার। হাতছানি দিচ্ছিল বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক স্টেফানি টেলর বল তুলে দিলেন ডিয়ান্ড্রা ডটিনের হাতে, সর্বশেষ ৮ ওয়ানডেতে যিনি বোলিংই করেননি। সেই ডটিনই বদলে দিলেন গল্পটা- মার্টিনের পর কেরকে ফেরালেন, শেষ ব্যাটার আনিসা মোহাম্মদও রানআউট হলেন তার হাতেই। স্বাগতিকদের হাত থেকে ডটিন ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন জয়, ব্যবধান মাত্র ৩ রানের। আগে ব্যাট করে ৯ উইকেটে উইন্ডিজের দেয়া ২৫৯ রানের জবাবে এক বল আগে ২৫৬ রানে থামে কিউইরা।
দ্বিতীয় ইনিংসের একটা সময় পর্যন্তও ম্যাচটা বলতে গেলে ছিল হেইলি ম্যাথুসের। ব্যাটিংয়ে দারুণ এক শতক করেছেন, এরপর ৪৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলা নিউজিল্যান্ডের একটি উইকেট নিয়েছেন। এরপর সামনে এলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক সোফি ডিভাইন। টেলরের বিপরীতে তিনিও করলেন শতক, ম্যাচটাও প্রায় বের করে নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত গল্পটা ডটিনেরই।
গতকাল মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে টসে জিতে ফিল্ডিং নেয় নিউজিল্যান্ড। ৩৯ রানের মধ্যেই দুই উদ্বোধনী ব্যাটার ডটিন ও কাইসিয়া নাইটকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সে চাপ সামাল দেওয়ার পথে ম্যাথুস গড়েছেন ৫০-পেরোনো তিনটি জুটি- টেলরের সঙ্গে ৬৬, শেমাইন ক্যাম্পবেলের সঙ্গে ৬০ ও চেডিন ন্যাশনের সঙ্গে ৬৪ বলে ৫৫ রানের। ৪৫তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ম্যাথুস ১১৯ রান করেছেন ১২৮ বলে, ১৬টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ১টি ছয়। বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটারদের এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। এরপর ন্যাশনের ৪৬ বলে ৩৬ ও শেষ দিকে আনিসার ৬ বলে ১১ রানের ক্যামিওতে ২৫৯ রান পর্যন্ত যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিউজিল্যান্ড পেসার লিয়া তাহুহু ৩ উইকেট নেন ৫৭ রানে, জেস কার ২ উইকেট নেন ৪৩ রানে।
রানতাড়ায় সুজি বেটস ও অ্যামেলিয়া কার ফেরেন দ্রুতই, তবে একপ্রান্তে ডিভাইন খেলেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। তৃতীয় উইকেট জুটিতে অ্যামি স্যাটার্থওয়েইটের সঙ্গে ডিভাইনের জুটিতে ওঠে ৭৬ রান। ৫৬ বলে ৩১ রান করে স্যাটার্থওয়েইট ফেরার পর অবশ্য ভেঙে পড়ে নিউজিল্যান্ডের মিডল অর্ডার। সে সময় ৩৯ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।
ডিভাইন ও মার্টিনের ৫৭ বলে ৫৩ রানের জুটিতে আবার ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকেরা। চিনেল হেনরির দারুণ এক ফিরতি ক্যাচে ভাঙে সে জুটি। ফুললেংথের বলটা জোরের ওপর খেলেছিলেন ডিভাইন, বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে দ্বিতীয় দফায় সে ক্যাচ নেন হেনরি। ডিভাইন ফেরেন ১২৭ বলে ১০৮ রান করে, ইনিংসে মারেন ১০টি চার।
ডিভাইন ফেরার পরও নিউজিল্যান্ডকে ম্যাচে রাখেন মার্টিন ও কারই। দুজনের জুটিতে ওঠে ৩১ বলে ৪০ রান। এরপরই সব গিয়ে ঠেকে শেষ ওভারে। ডটিনের প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন কার। দ্বিতীয় বলে এলবিডব্লু হন মার্টিন, আম্পায়ার শরফুদ্দৌলার সিদ্ধান্ত রিভিউ করেও বাঁচেননি। ১ বল পর মিড-অফে ধরা পড়েন মার্টিনও, ম্যাচ ঝুঁকে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকে।
শেষ ২ বলে প্রয়োজন ছিল ৪ রান, পঞ্চম বলটা মিস করেন হানা রো। নন-স্ট্রাইক প্রান্ত থেকে সিঙ্গেলের জন্য দৌড়াতে থাকা ফ্রান জোনাস সময়মতো ক্রিজে ফিরতে পারেননি আর, উইকেটকিপার ক্যাম্পবেলের থ্রো নিয়ে স্টাম্প ভেঙে উল্লাসে মেতেছেন ডটিন। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সপ্তম ম্যাচে এসে এটি প্রথম জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন