গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জস্থ রংপুর চিনিকলের মালিকানাধীন সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমি অবশেষে অবৈধ দখল মুক্ত করেছে প্রশাসন। রোববার সকাল থেকে অবৈধ দখলদারদের সাথে চিনিকল কর্তপক্ষ-জনতা ও পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে ৯ পুলিশসহ প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছে। পরে বিকেল ৫টায় ইক্ষু খামারের সরকারী জমি অবৈধ দখলমুক্ত করতে র্যাব, পুলিশ যৌথভাবে অভিযান শুরু করলে অবৈধ দখলদাররা পালিয়ে যায়। এসময় অবৈধ দখলদারদের অবৈধ ঝুপরি ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। রোববার সকালে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত ৩/৪শ’সহ ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে গোবিন্দগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ১ জুলাই-১৬ তারিখে রংপুর চিনিকলের মালিকানা সাহেবগঞ্জ ইক্ষুখামারের শতাধিক একর জমি স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ও আদিবাসীরা অবৈধভাবে দখল করে বসতি স্থাপন করে। এ ঘটনায় দখলদারদের সাথে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। রোববার সকালে ইক্ষু খামারের ওই জমিতে রংপুর চিনিকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আখ কাটতে গেলে দখলদার আদিবাসী সাওতালরা বাঁধা দেয় এবং দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে দখলদার আদিবাসী সাওতালরা তীর ধনুক নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালালে এসআই আক্তার, এএসআই রাজু, এএসআই আসাদসহ ৯ জন পুলিশ তীরবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। এসময় পুলিশের সাথে স্থানীয় জনতা যোগ হয়ে দখলদারদের ধাওয়া করলে দুইপক্ষের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, ও সংঘর্ষে উভয়পক্ষের আরও অন্তত ২০ জন আহত হয়। এময় পুলিশ প্রায় অর্ধশত রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। আহতদের উদ্ধার করে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর বিকেল ৫টার দিকে বিপুলসংখ্যক র্যাব, পুলিশ যৌথভাবে সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার এলাকায় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলে অবৈধ দখলদারা পালিয়ে যায়। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতা অবৈধ দখলদার আদিবাসী সাওতালদের বস্তি ঝুপরি ঘরে আগুন লাগিয়ে দিলে বস্তি ঘরগুলো পুরে ছাই হয়ে যায়।
রংপুর চিনিকল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আউয়াল জানান উচ্ছেদ অভিযান সফল হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা সুব্রত কুমার সরকার জানান ইক্ষু খামার এখন সম্পূর্ণ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ কিছুদিন খামারে অবস্থান করবে। তিনি আরো জানান, রোববার সকালে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত ৩/৪ শ’সহ ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে গোবিন্দগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
এদিকে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ গাইবান্ধা জেলা সভাপতি ফিলিমন বাস্কে’র মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি গত রোববারের ঘটনায় ৯ জন আদিবাসী গুরুতর আহত হয়। আহতদের মধ্যে শ্যামল হেমব্রম (১৬) নামে এক আদিবাসী যুবক দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার দাবী করলেও নিহত ওই যুবকের পিতার নাম ও ঠিকানা বলতে পারেনি। তিনি আরো বলেন, তাদের বস্তিতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে পুরিয়ে দেয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন