দ্রবমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে নিম্নআয়ের মানুষের অনেকেই বাজার থেকে মাছ, গোশত কিনে খেতে পারেন না। এমনকি নিম্নমধ্যবিত্তদের অনেকেই গোশত নিকতে পারেন না। বাজারে গরুর গোশত ৬৫০ টাকা কেজি, খাসির গোশত ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা। পছন্দ করে মাছ কিনতে গেলেই কেজি পড়ছে ৪ থেকে ৫শ’ টাকা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণে তাই একমাত্র ভরসা ১২০ টাকা কেজির পাঙ্গাস, ১৬০ কেজির তেলাপিয়া ও ১৪০ টাকা কেজির ব্রয়লার মুরগি। যারা সেটাও কিনে খেতে পারেন না তারা স্ত্রী সন্তানের মুখে একটু ভালো খাবার তুলে দিতে কিনে নিয়ে যাচ্ছে মুরগির পা, মাথা ও গিলা-কলিজা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, সূত্রাপুর, কাপ্তান বাজার, শনিরআখড়া, ধোলাইপাড়, শ্যামবাজার,স্বামীবাগ ও গেন্ডারিয়ার স্বামীবাগ বাজার ঘুরে দেখা যায় এসব চিত্র।
গিলা-কলিজা কেনার সামর্থ্য না থাকায় মোসলেম উদ্দিন ৬০ টাকা কেজিতে মুরগির পা কিনছেন। শুধু মুরগির পা কেনার বিষয়ে জানতে চাইলেন তিনি বলেন, শুক্রবারে বাচ্চারা বিরানি খেতে চায়। গোসত কিনে বিরানি খাওয়ানোর মতো টাকা তার নেই। তিনি নিজে ভ্যান গাটি চালান। স্ত্রী পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। দু’জনের মিলে মাসে আয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। বাচ্চাদের পড়াশোনা ও ঘর ভাড়া দেওয়ার পর একদিন ভালোমতো বাজার করার সামর্থ্যও তাদের হয় না। বাধ্য হয়েই মুরগির পা দিয়ে বিরানি রান্না করে সন্তানদের খাওয়ান। সর্বশেষ মাংস কবে খেয়েছে আপনার সন্তানেরা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত ঈদের পর আর পরিবারে গরুর গোশত কেনা হয়নি, খাওয়া হয়নি। মাছ কিনি মাঝেমধ্যে, সেটাও পাঙ্গাস।
স্বামীবাগ বাজারে গিলা-কলিজার কেজি কত টাকা? জানতে চাইলে দোকানদার বলেন, আগে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করতাম। ক্রেতা বাড়ায় এখন ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। আগের চেয়ে বিক্রি বেড়েছে। কাস্টমারও বেশি আগের চেয়ে। কাস্টমার বেশি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। গরুর গোশত ৬৫০ টাকা কেজি, খাসি ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা, কর্ক ৩০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৪০ টাকা ও দেশি মুরগী ৫২০ টাকা কেজি। অন্যদিকে পাঙ্গাস বাদে মাছের বাজারে কেউ ঢুকতেই সাহস পায় না। তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় লোকজন গিলা-কলিজা কিনছে।
শনির আখড়া বাজারে রুপন আলী নামের একজন গিলে কলিজি কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, সেই হারে আয় বাড়েনি। তাই বাধ্য হয়েই গিলা কলিজা কিনছি। কিছুদিন আগেও এসব গিলা কলিজায় বিষাক্ত পদার্থ আছে জেনে মুরগি কেনার পর ফেলে দিতাম। কী করব, করার কিছু নেই। গিলা কলিজা দিয়েই পরিবারের আমিষের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। যাত্রাবাড়ির এক মাছ বিক্রেতা জানান, যারা কয়েকদিন আগেও এক কেজি বা দুই কেজি মাছ কিনতেন। তারা এখন হাফকেজি মাছ কিনেই বাড়ির পথ ধরছেন। অনেকে দাম শুনে না কিনেই ফিরে যায়। অনেকেই খাসির মাথা ও গিলা কলিজি কিনে আমিষের চাহিদা মেটাচ্ছেন।
তিনি বলেন, কিছু লোক রাতে এসে এসব কিনে নিয়ে যায়। দিনে যদি পরিচিত কেউ দেখে ফেলে সে লজ্জায় পড়ে যাবেন। সে জন্য রাতেই মুরগির, ছাল, গিলা কলিজির বিক্রি বেশি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন