পয়োনিষ্কাশন সেবা না দিলেও জনগণের কাছ থেকে ঢাকা ওয়াসার বিল নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, ঢাকা ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন নেটওয়ার্ক কার্যকর না। লোকজন পয়োবর্জ্যের সংযোগ বৃষ্টির পানির নালায় দিয়ে পরিবেশ দূষণ করছে। অথচ ওয়াসা পানির বিলের সমান পয়োনিষ্কাশন বিল আদায় করছে। জনগণ কেন এই টাকা দিবে?
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নগরভবনে আয়োজন করা হয়েছে ‘নিরাপদ পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী কর্মশালা। গতকাল কর্মশালার সমাপনী দিনের আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান এসব কথা বলেন। ডিএনসিসি এবং ইউনিসেফ যৌথভাবে আয়োজিত কর্মশালার উদ্বোধন হয় গত রোববার। কর্মশালায় রাজধানীর বিদ্যমান পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, সমস্যা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়।
সালমান এফ রহমান বলেন, ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় পয়োবর্জ্যের নেটওয়ার্ক নেই। রাজধানীর পয়োনিষ্কাশনে ঢাকা ওয়াসা কী করেছে। যেসব বাড়িমালিকেরা বৃষ্টির পানির নালায় পয়োবর্জ্যের লাইন দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? কাদের দায়িত্ব এসব দেখভালের?
কর্মশালায় উপস্থিত ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (উন্নয়ন) আবুল কাশেম বলেন, ওয়াসার পয়োবর্জ্য নেটওয়ার্ক অনেক পুরনো। অধিকাংশই অকেজো। এই নেটওয়ার্ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তখন সালমান এফ রহমান বলেন, ‘অকেজো মানে পয়োবর্জ্য আপনাদের লাইনে যাচ্ছে না। তাহলে জনগণের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন কেন?’
আবুল কাশেম বলেন, ঢাকা ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকায় পাঁচটি পয়োবর্জ্য শোধনাগার হবে। এর মধ্যে পাগলায় বিদ্যমান শোধনাগারটি সংস্কার করা হচ্ছে। আর আফতাবনগরের কাছাকাছি দাশেরকান্দি এলাকায় নতুন শোধনাগার নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, অনেক দিন ধরে শুনি পাগলা, দাশেরকান্দি। ওয়াসার এসব আশা শুনতে শুনতে আমরা এখন দিশেহারা। দাশেরকান্দিতে শোধনাগার হচ্ছে, কিন্ত শোধনাগারে বর্জ্য পরিবহনের কোনো নেটওয়ার্ক নেই। কবে এই নেটওয়ার্ক হবে তার অপেক্ষায় কী আমরা বসে থাকব। পয়োনিষ্কাশন নেটওয়ার্ক না থাকলে পাগলা, দাশেরকান্দি কোনোটাতেই কোনো কাজ হবে না।
স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা সরকারি সংস্থাগুলোর কাজ ও দায়িত্ব বন্টনের বিষয়ে ২০১৭ সালে একটি রূপরেখা (ফ্রেমওয়ার্ক) প্রস্তুত করে। ‘ইনস্টিটিউশনাল অ্যান্ড রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক ফর ফ্যাকাল ¯øাজ ম্যানেজমেন্ট’ নামের রূপরেখাটি নিয়েও কর্মশালায় আলোচনা করা হয়।
সালমান এফ রহমান বলেন, সাড়ে চার বছরের বেশি সময় ধরে বইটি দেখছি। পয়োবর্জ্য নিয়ে কার কী দায়িত্ব তা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এই রূপরেখা বাস্তবায়নের অগ্রগতি কী? গত সাড়ে চার বছরে এটি বাস্তবায়নে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার?
স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পানি সরবরাহ) মুহম্মদ ইবরাহিম বলেন, এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার বিভাগের। ঢাকা ওয়াসা পয়োবর্জ্য পরিশোধনের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। পাঁচটি পয়োশোধনাগার করা হবে। একটির কাজ ২০ শতাংশের মতো হয়েছে, আরেকটির কাজ প্রায় শতভাগ শেষ।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ২০২৩ সালের মধ্যেই রাজধানীর অভিজাত এলাকার বাসিন্দাদের নিজেস্ব উদ্যোগে বাসাবাড়িতে কার্যকর পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। ২০২২ সালের মধ্যে এ বিষয়ে আমরা জনসচেতনতা সৃষ্টি করবো। লেকগুলো দূষিত, খালগুলো দূষিত, বৃষ্টির পানি নামার সাধারণ নর্দমা দিয়ে মানুষের পয়োবর্জ্য খালে-লেকে গিয়ে পতিত হয়। এটা রাজধানীবাসীর জন্য বিরাট স্বাস্থ্যঝুঁকি। এটা আর চলতে দেয়া যায় না। নির্দিষ্ট সময়ের পর খালে বা সার্ফেস ড্রেনে পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনের সংযোগ পাওয়া গেলে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তা বন্ধ করে দেয়া হবে।
মেয়র বলেন, ডিএনসিসি আওতাধীন খালসগুলো ২০২৪ সালের মধ্যে দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক খালে রূপান্তর করা হবে। এটি করতে অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা। জনসচেতনা তৈরি করে এটি করতে হবে। লেক-খালগুলোকে আমরা রোগ জীবাণু ছড়ানোর কারখানায় পরিণত করতে পারি না।
মিথিলা ফারজানার সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচনায় আরও অংশ নেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল, ইউনিসেফের ওয়াশ বিভাগের প্রধান জাইদ জুরজি, রাজউকের চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, এফবিসিসিআই এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন