মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যবসা বাণিজ্য

অ্যাপ ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে জাল টাকার নোট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২২, ১২:০৮ এএম

রাজধানীর ডেমরা এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে জাল নোট তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এসব জালনোট তৈরির জন্য ব্যবহার করা হতো অ্যাপ। যে অ্যাপে নির্ধারিত টাকার সাইজ, ফরম্যাট, ছাপ সবকিছু ঠিক করা ছিল। পরে প্রিটারে বেরিয়ে আসতো নির্ধারিত টাকার নোট। বড় নোট জাল করে ধরা পড়ার আশঙ্কা বেশি, তাই চক্রটি শুধু ৫০ টাকার নোট জাল করতো।

পুলিশ জানায়, চক্রটি বেশ কয়েক বছর ধরে জালনোট তৈরির সঙ্গে জড়িত। এ অভিযোগে এর আগেও তারা গ্রেফতার হয়েছিল। আর সে সময় ৫০০ ও ১০০০ টাকার জাল নোট তৈরি করতো তারা। বড় নোটের বিষয়ে সবাই একটু যাচাই-বাছাই করে, সে জন্য আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বর্তমানে ৫০ টাকার নোট তৈরি করে। রমজান এবং ঈদকে সামনে রেখে দেশের বাজারে ২ কোটি টাকার জাল নোট ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
পুলিশ আরো জানায়, এ মার্চ মাসে ডেমরা থানা এলাকার সারুলিয়ায় একটি বাসা ভাড়া নেয় তারা। ইন্টারনেট ব্যবসার কথা বলে বাসা ভাড়া নিয়ে জাল নোটের কারখানা খুলে বসে চক্রটি। এই জাল নোট চক্রের অন্যতম হোতা মোহাম্মদ নাবিল হোসেন। সে পলাতক রয়েছে। এরই মধ্যে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা দুদিনের রিমান্ডে রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
রিমান্ডে গ্রেফতার ব্যক্তিরা পুলিশকে জানিয়েছে, জালনোট তৈরির জন্য তারা একটি অ্যাপ ব্যবহার করতো। সেই অ্যাপে ৫০ টাকার নোটের ফরমেট রয়েছে, যার মাধ্যমে প্রিন্ট দিলেই হুবহু ৫০ টাকার নোট বের হযয়ে আসতো। তাদের ধারণা ছিল, ছোট নোট অনেক সময় অনেকেই জাল কিনা যাচাই বাছাই করতো না। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাতো চক্রটি। রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, লালবাগ, ডেমরা এলাকায় এই চক্রের এজেন্ট রয়েছে। তারা মূলত রাতে জালনোট তৈরি করতো। প্রতি রাতে দুই লাখ টাকার সমপরিমাণ জাল নোট তৈরি করতে পারতো। প্রতি লাখ জাল টাকা তারা ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতো। ডেমরা থানা এলাকার সারুলিয়া টেংরার, ১২৯/৪-এ দেলোয়ার হোসেনের তিন তলা বাড়ির নিচতলায় পূর্ব পাশের রুম থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে জালনোট তৈরির সঙ্গে জড়িত এই ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সে সময় তাদের কাছ থেকে ৫০ টাকার জাল নোটের ২৪টি বান্ডেল পাওয়া যায়। এছাড়া তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দুইটি ক্যানন প্রিন্টার, একটি ল্যাপটপ, একটি হাতুড়ি, একটি পেপার কাটার, একটি এন্টি কাটার, একটি স্ক্রিন প্রিন্ট মেশিন, ওয়ালপেপার, দুইটি স্প্রে পেইন্ট, সোনালি রঙের ঘোড়া ২০০ গ্রাম, দুটি কালো রঙের হ্যান্ড ব্যাগ, ২০টি ৫০ টাকার জাল নোটের প্রিন্টেড কাগজ, এ-ফোর সাইজের কাগজ ১০৪ পিস এবং ৫২ পিস পাতলা সাদা কাগজ।
এদিকে, গত শুক্রবার সকালে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক রয়েছে মূলহোতাসহ আরও কয়েকজন। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো মো. ইমরান হোসেন, মিলন হোসাইন, ইলিয়াস মিয়া, সবুজ আহাম্মেদ, মো. সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলিফ ও মহিবুর রহমান মনির।
ডেমরা থানার ওসি খন্দকার নাসিরউদ্দিন বলেন, রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জালনোট ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এই চক্রের মূলহোতা নাবিলসহ আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছে। তাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে এ ঘটনার সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তারা এর আগে এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা বা তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।
ওসি আরও বলেন, জালনোট তৈরি চক্রের সঙ্গে নোট তৈরি টেকনিশিয়ান পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। জালনোট তৈরির জন্য তারা যে অ্যাপটি ব্যবহার করে আসছিল, সেটি কোথা থেকে সংগ্রহ করেছে সে বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জালনোট তৈরির জন্য কাঁচামাল কোথা থেকে সংগ্রহ করতো, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কাঁচামাল উৎপাদন মেড ইন বাংলাদেশ লেখা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন