ওয়ানডে অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশ এগিয়ে। শুধু তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহর সমান ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাই তো নেই দক্ষিণ আফ্রিকার পুরো দলের। কিন্তু মাঠগুলো তো দক্ষিণ আফ্রিকার, সব মিলিয়ে কে কত ম্যাচ খেলল—এ হয়তো সেখানে তেমন কাজে আসে না। বাংলাদেশের জন্য অন্তত এত দিন আসেনি। বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর মানেই তো হারের গল্প!
গল্পটা এবার শুরুতেই বদলে গিয়েছিল; প্রথম ওয়ানডেতেই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে জয়ের গল্প লিখেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেটি যে প্রথম সিরিজের গল্প লিখে শেষ হবে, কে জানত! অবিশ্বাস্য কীর্তিই পরশু গড়েছেন তাসকিন-তামিমরা। দক্ষিণ আফ্রিকার সংবাদমাধ্যমেও এ নিয়ে প্রশংসা ঝরছে। তারাও স্বীকার করে নিচ্ছে, এই বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় আগের সফরগুলোয় যাওয়া বাংলাদেশ নয়!
২০০২ সালে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার পর বাংলাদেশকে নিয়ে বলতে গেলে হাসাহাসিই হয়েছে, তখনো ক্রিকেটে হাঁটি হাঁটি পা পা করতে থাকা বাংলাদেশের সামর্থ্য হয়েছে খোঁচার বিষয়। সেই বাংলাদেশই ২০ বছর পর সিরিজ জিতে গেল। বাংলাদেশের কাছে এভাবে সিরিজে হেরে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ‘বড় আঘাত’ আখ্যায়িত করে দক্ষিণ আফ্রিকান সংবাদমাধ্যম আইওএল লিখেছে, ‘অনেকে এই ফল দেখে চমকে যেতে পারেন, দুই দলের ইতিহাস মনে রাখলে চমকে যাওয়া আশ্চর্যও নয়। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, এই বছরের বাংলাদেশ দলটা আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলে যাওয়া বাংলাদেশ দলের চেয়ে আলাদা।’
সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর অভিজ্ঞতা আর তরুণদের শৌর্য মিলিয়ে এই বাংলাদেশ অন্য রকম বলে লিখেছে পত্রিকাটি, ‘নিজেদের মাঠে সাফল্যের কারণে ওদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। এর পাশাপাশি অনেক বছরে ওদের অভিজ্ঞতাও তো অনেক হয়েছে। এই সিরিজে ওদের দলে অধিনায়ক তামিমসহ চারজনের নামের পাশে দুই শর বেশি ওয়ানডে আছে। অথচ বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার দলে সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা ছিল কুইন্টন ডি ককের ১২৯ ম্যাচের।’
দ্য সাউথ আফ্রিকানের চোখে সিরিজ হারের দিনটা ‘দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে অন্যতম অন্ধকার একটা দিন’। আর সে পথে ৩৫ রানে ৫ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপ গুঁড়িয়ে দেওয়া তাসকিন আহমেদের বোলিংকে পত্রিকাটি লিখেছে, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের কোনো বোলারের এযাবৎকালের সেরা বোলিং প্রদর্শনীর একটি।’ বাংলাদেশের এ জয়কে যেকোনোভাবেই খাটো করে দেখা যাবে না, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছে দ্য সাউথ আফ্রিকান, ‘এই প্রথম বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে ওয়ানডে সিরিজ জিতল এবং কেউই এটা বলতে পারবে না যে এই জয় ওদের প্রাপ্য ছিল না। অন্যদিকে, এই সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার পারফরম্যান্স ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে হতাশাজনক হিসেবেই লেখা থাকবে।’
টাইমস লাইভ সেঞ্চুরিয়নের দর্শকের বাংলাদেশকে সমর্থন দেওয়ার চিত্র তুলে ধরেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের জয় যে ‘ফ্লুক’ ছিল না, সেটির স্বীকৃতি দিয়েছে তারাও, ‘বাংলাদেশ বুঝিয়ে দিয়েছে, শুক্রবার এই একই ভেন্যুতে প্রথম ম্যাচে যে তারা দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল, যেটি কিনা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকান মাটিতে তাদের প্রথম জয়, সেটিও ফ্লুক ছিল না।’ নিউজ ২৪ তাসকিনের ‘গতি ও ক্ষিপ্রতা’র সামনে দক্ষিণ আফ্রিকার ভেঙে পড়ার বিবরণ তো দিয়েছেই, পাশাপাশি তামিমের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের প্রশংসাও করেছে, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় আগের অনেক সিরিজে পুড়ে পুড়ে শক্ত হয়ে ওঠা ইকবাল (তামিম) নিশ্চিত করেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা এখানে সফরকারী দলকে যে অসহায় অবস্থায় ফেলে, সেটি সুদে-আসলে ফিরিয়ে দিচ্ছে তারা।’ লিটন দাসের ইনিংসের তেমন প্রশংসা না হলেও তাঁকে নিয়ে লিখেছে, ‘টাইগারদের ভবিষ্যৎ’ তিনি।
লিটন আউট হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত তামিম আর সাকিব অপরাজিত থেকে যে ম্যাচ জিতিয়ে ফিরেছেন, সেটি নিউজ ২৪-এর চোখে, ‘শেষ পর্যন্ত যে তামিম আর সাকিবের জন্য শেষ করে আসার কাজটা বাকি ছিল, হয়তো সেটাই ঠিক হয়েছে। এই বাংলাদেশ তো আর ২০ বছর আগের বাংলাদেশ নয় যে লড়াইয়ের আগেই হার মেনে নেবে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন