শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলছে না

নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা

মো. জাহিদুল ইসলাম : | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাড়ছে দাম অবিরাম/চালের ডালের তেলের নুনের/হাঁড়ির বাড়ির গাড়ির চুনের/আলু মাঙ্গা বালু মাঙ্গা/কাপড় কিনতে লাগে দাঙ্গা/উঠছে বাজার হু-হু করে সব কিছুর/আঁকের শাকের কাঠের পাটের আম লিচুর/খাওয়ার জিনিস শোয়ার জিনিস/পরার জিনিস মরার জিনিস/কিছু ছোঁয়ার সাধ্যি নাই/ঘাটতি কেবল যেদিক চাই। বাজারদর নিয়ে কবি আবুল হোসেনের এই কবিতায় বর্তমান বাজারের চিত্র স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। দ্রব্যমূল্য যেখানে বাড়ছে রকেটের গতিতে, সেখানে ঢাকার রাস্তার যানজটে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলা বাসের মতোই বাড়ছে আয় বাড়ার গতি। টিসিবিতে কমদামে পণ্য কিনতে ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের যে যুদ্ধ, তা শেষ হয় পণ্য হাতে পাওয়ার পর। সেই ভাগ্যও হাতেগোণা কিছু মানুষেরই। বেশিরভাগ মানুষই পণ্য না পেয়ে খালি হাতেই ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে।
চাল-ডাল-তেল, রান্নার গ্যাস থেকে টুথপেস্ট সবকিছুতে বাড়তি দামের খড়গ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে দেশজুড়ে চলছে অস্থিরতা। কোথাও নেই এতটুকুও স্বস্তি। নিম্নবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত। কারওই হিসাব মিলছে না আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের। প্রায় প্রত্যেকেই বলছেন-আয় বাড়ছে না, ব্যয় সামলাবো কীভাবে? তেমনই একজন স্বপণ চৌধুরি। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। তবে বেতনের টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর কচুক্ষেত বাজারে দোকান থেকে দোকানে ছুটতে দেখা গেছে তাকে। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে রীতিমতো শঙ্কিত তিনি। স্বপণ বলেন, এখন বাজারে সমস্ত পণ্যের দাম আগের তুলনায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। আমরা চাকরি করি। বেতন তো এক টাকাও বাড়েনি। চাকরিজীবীদের জন্য আসলেই খুব কষ্টের ব্যাপার। যারা ব্যবসায়ী তারা ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু যারা কিনছে তাদের আয়ের বাড়তি উৎস নেই। এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। বেতনের অর্ধেক চলে যায় বাসা ভাড়ায়। বাকি টাকায় সংসার খরচ ও সন্তানদের শিক্ষার পেছনে ব্যয় হচ্ছে। মাস শেষে পকেটে কোনো টাকা থাকে না।
শুধু স্বপণই নন। এমন পরিস্থিতির শিকার এই সমাজেরই সিংহভাগ মানুষ। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে দাম বেড়েছে মুরগি, সবজির। খাদ্যমন্ত্রীর হুশিয়ারির পর এক টাকাও কমেনি চালের। আগের মতোই মিনিকেট ৬৫ টাকা কেজি, নাজিরশাইল ৭২ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৪৭ থেকে ৫০ টাকা, পারিজা ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা কেজি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে কমেছে সয়াবিন তেল, পেঁয়াজের ঝাঁজ। ডিম, মাছ, আদা, রসুনের দামও কমতির দিকে। অন্যদিকে গোশত, ডাল, চিনি, আলুর দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
৬০০ টাকা কেজির গরুর গোশত শবে বরাতের অজুহাতে গত সপ্তাহে বেড়ে ৭০০ টাকাতে ঠেকে। এখনও সেই মাংস ৭০০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে বেড়েছে মুরগির দামও। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ২৮০ টাকা কেজি। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০টাকা।
রাজধানীর বাজারগুলোতে নতুন সবজি হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে সজনে ডাঁটা। দাম বেশ চড়া। বিভিন্ন বাজারে সজনে ডাঁটার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। অবশ্য কোথাও কোথাও ব্যবসায়ীরা সজনে ডাঁটার কেজি বিক্রি করছেন ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বেগুনের কেজি ২০ থেকে ৪০ টাকা, পাকা টমেটোর কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী।
তবে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম কমেছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। গত সপ্তাহে দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।
রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা। শিং ও টাকি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাস বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। ছোট ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন